বর্তমান সরকারের শেষ সংসদ অধিবেশনে হোমিওপ্যাথি আইন পাস হবে কি : ডা. শিপলু
বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মুজিব নগর সরকারের নির্দেশে ব্যাটল ফিল্ডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার স্বাক্ষর রেখেছে দেশের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে তার উল্লেখ রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে যখন স্বাধীন এক ভূখন্ড পেয়েছে বাংলাদেশ তখন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান সবকিছুতেই ছিল অপূর্ণতা সেই সময়েও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ স্বাস্থ্যসেবার দ্বার উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাস্থ্য সেবায় হোমিওপ্যাথি ও "হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের" (ডা.) অবদান ছিলো উল্লেখযোগ্য [বই/রাষ্ট্রীয় দলিল : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : পঞ্চদশ খন্ড। পৃষ্টা নং ৯৪...]
একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ হতে শুরু হবে। ওই দিন বিকাল ৫টায় সংসদ ভবনের সংসদ কক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম ও ২০২৩ সালের চতুর্থ অধিবেশন বসবে।
সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এটি হতে পারে একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন।
বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন বলে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে জানানো হয়, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন কত দিন চলবে- তা ঠিক করবে।
চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে।
সংবিধানে বলা আছে, একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার দিন এবং পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের বেশি বিরতি দেওয়া যাবে না। তবে এই বিধান সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের (পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সেই হিসাবে সেপ্টেম্বরের অধিবেশনের পর আর সংসদের অধিবেশন ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকছে না। ফলে এটিই হতে পারে একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন।
২০১৩ সাল হতে প্রায় ৮/৯ বছর অপেক্ষার পর ৩১ মে ২০২১ মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) খসড়া নীতিগত অনুমোদন হয়েছিল। তারপর আবারও প্রায় ২ বছর অপেক্ষা। ১৯ জুন ২০২৩ সোমবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) ২০২৩ যেটা ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় মন্ত্রী পরিষদে নীতিগত অনুমোদন হয়েছিল, তা আইন মন্ত্রণালয়ে সংবিধান/আইনি ও ভাষাগত/শব্দগত বিষয় সংযোজন ও সংশোধন করতে চূড়ান্ত ভোটিং সম্পন্ন হয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে জমা হলে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদ সভায় আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ২০২৩ (প্রস্তাবিত) আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জমা পড়েছে কিনা তা এখনও কোন কিছু জানা যায়নি? আইনটি বিল আকারে সংসদে উল্থাপন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ ও যাচাই-বাছাই, সংসদ অধিবেশনে উল্থাপন, পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা, সংশোধনী, কন্ঠ ভোটে পাস, রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ, রাষ্ট্রপতির সম্মতি, সরকারি গেজেটে প্রকাশ ও কার্যকরের বিষয় জড়িত?
মাঠ পর্যায়ে হোমিওপ্যাথদের বার বার প্রশ্ন একাদশ সংসদের তথা এ সরকারের শেষ সময়কাল চললেও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ হতে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাদীদের জন্য বার বার সংশোধনের জন্য পড়ে থাকা বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) জাতীয় সংসদে উল্থাপন ও পাস এবং কার্যকর হবে কি? আইনটি পাস ও কার্যকর না হবার কারণে হোমিওপ্যাথদের উচ্চ শিক্ষা ও সরকারি কর্মসংস্থান এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হচ্ছেনা। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল গঠন হচ্ছেনা ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়ন্ত্রণ এবং হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছেনা। ডিএইচএমএস হোমিওপ্যাথিক অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
চাটুকারি-সুবিধাবাদীরা ও দুর্নীতিবাজরা এবং নতুন কলেজ স্থাপন ব্যবসায়ী/নিয়োগ বাণিজ্যকারী/ভর্তি বাণিজ্যকারী/কমিশন বাণিজ্যকারী সম্প্রদায় সত্যিই কি কখনও মনেপ্রাণে চেয়েছে হোমিওপ্যাথির সার্বিক উন্নয়নে নতুন হোমিওপ্যাথিক আইন জাতীয় সংসদে পাস ও কার্যকর হোক এবং দেশে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে কার্যকর হোক?
'কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত, কত প্রদীপ শিখা জ্বালাতেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত, কত ব্যথা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধৈর্য, নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ...’।
"বাংলার ডিএইচএমএস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণের ইতিহাস আমলাতন্ত্র ও বিএইচএমএস কর্তৃক দীর্ঘ কয়েক দশকের শোষণ এবং বঞ্চনার ইতিহাস! বাংলার ডিএইচএমএস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ হোমিওপ্যাথদের জন্য সুরক্ষা আইন ও ডাক্তার উপাধি ব্যবহার চলমান এবং সরকারি চাকুরী পাবার সহ উচ্চ শিক্ষা অর্জনের অধিকার চায়! দীর্ঘ কয়েক দশকের শোষণ ও বঞ্চনা হতে মুক্তি চায়! বাংলার মাঠ পর্যায়ে ডিএইচএমএস চিকিৎসকগণ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা ও চিকিৎসা পেশায় সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বাধীনতা চায়!"
- ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু), বাংলাদেশ।
লেখক পরিচিতি :
ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)
ডিএইচএমএস (রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ)
এমএসএস (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
(চিকিৎসক, শিক্ষক, কলামিস্ট, কেন্দ্রীয় চিকিৎসক নেতা ও শিক্ষক নেতা, প্রাক্তন সাংবাদিক) বাংলাদেশ।
২৮ আগস্ট ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
=========
সংগৃহীত ছবি