ডেঙ্গু জ্বরে হোমিও চিকিৎসা Homeopathic treatment for dengue fever
ডেঙ্গু জ্বরে হোমিও চিকিৎসা Homeopathic treatment for dengue fever
এটি একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগটি সর্বপ্রথম স্কটল্যান্ডের ডান্ডিতে মহামারি আকারে দেখা দেয়। তাই এ জ্বরকে ডান্ডি জ্বর বলেও ডাকা হয়। এ জ্বরকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর।
জলবায়ু পরিবর্তনে সারাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টির ধরন পাল্টে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন সারাদেশে অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, হাসপাতালে ছুটছে। এই শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ডেঙ্গুজ্বর বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ হয়ে পড়ে আতঙ্কগ্রস্ত। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং পরিবার-পরিজন অনেকেই হয়ে পড়েন দিশেহারা। শত শত রোগীর রক্ত এবং প্লাটিলেট জোগাড় করতে গিয়ে ব্লাড ব্যাংকগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল। আর রক্ত বা প্লাটিলেট সংগ্রহ করার জন্য লোকজনও হয়ে উঠেছিল মরিয়া। এ সময়টাতে চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও ছিল সীমিত। ফলে, পুরো জাতিই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। মিডিয়াতেও এর ব্যাপক প্রচার পায়। তবে বর্তমানে মানুষের ওই ভীতি ও আতঙ্ক কেটে গেছে। ডাক্তাররা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষ।
ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা কামড়ানোর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে সাধারণত রোগের উপসর্গ দেখা যায়। কিছু কিছু ডেঙ্গু রোগী কোনো উপসর্গ ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গুজ্বরে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তার মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ও গিঁটে ব্যথা এবং ত্বকের্ যাশ যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্পক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে পরিণত হয়, যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অণুচক্রিকার কমমাত্রা ও পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে পরিণত হয়।
বেশিরভাগ ডেঙ্গুজ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান, বিশ্রাম ও প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার গ্রহণ করা। শরীরে হাড়ভাঙা ব্যথা নিয়ে এ জ্বর হয়। এ কারণে এ জ্বরের নাম হয়েছে ডেঙ্গুজ্বর।
ডেঙ্গুজ্বরের ইতিহাস ॥ ডেঙ্গু কোনো নতুন রোগ নয়, এর উপসর্গের সঙ্গে মিল আছে এমন জ্বরের প্রথম মহামারির ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় ৯৯২ খ্রিস্টাব্দে চীনে, যা ‘পানি বিষ’ নামে বর্ণিত। পরবর্তীতে ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে পানামায় যে জ্বরের মহামারির বিবরণ পাওয়া যায়, সেটি ডেঙ্গু বলেই ধারণা করা হয়। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে একই সঙ্গে মহামারির বিবরণ পাওয়া যায় কায়রো এবং বাটাভিয়ায় এবং ১৭৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় এশিয়াতে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের প্রথম মহামারি হয় ১৯৫৩/৫৪ সালে ম্যানিলায় এবং পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে ব্যাঙ্কক ও থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রথম ব্যাপক আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালে, যা পরিচিত ছিল ‘ঢাকা ফিভার’ নামে।
কিভাবে ডেঙ্গুজ্বর হয় :
এডিস ইজিপ্সাই নামক মশার কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। তবে এডিস এলবপিকটাস নামক মশার কামড়েও এই রোগ ছড়াতে পারে। ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।
ডেঙ্গুজ্বর কাদের :
বেশি হয় সাধারণত শহর অঞ্চলে অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালানকোঠায় এই মশার প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই ডেঙ্গুজ্বরও এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশি হয়। বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজনের ডেঙ্গু একেবারেই হয় না বললেই চলে। ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ ৪ ধরনের, ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। তাই ডেঙ্গুজ্বরও ৪ বার হতে পারে। যারা একবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মশার পরিবর্তন :
এডিস মশা যেমন চরিত্র পরিবর্তন করেছে, তেমনি বদলেছে ডেঙ্গুরোগের উপসর্গও। একসময় ধারণা করা হতো মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। এখন দেখা যায় অপরিষ্কার ও নোনাপানিতেও ডিম পাড়ছে। আগে এডিস মশা শুধু দিনের বেলা কামড়াত, এখন সব সময় কামড়ায়। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ডেঙ্গুর সম্পর্ক রয়েছে। জুন-জুলাইয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। তবে গত কয়েক বছর ডেঙ্গু রোগী সারাবছর মিলেছে।
যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়ঃ
সহসা সামান্য শীত ও চোখমুখে লালিমাসহ প্রবল জ্বর হয়। জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। সর্বশরীরে, বিশেষত চক্ষুগোলকের উপরিভাগে, চক্ষুগোলক, কোমর ব্যথা করে। রোগী নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। জিহ্বা শুষ্ক, ময়লাবৃত, বমিভাব কোষ্ঠবদ্ধতা উপস্থিত হয়। চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। মুখে ফোলা ভাব দেখা দেয়।
এভাবে দু’তিন দিন চলে পরে চতুর্থ দিনে পুনরায় জ্বর বেড়ে যায়। সঙ্গে হামের মতো দেখা যায়। ২-৩ দিন পরে মিলিয়ে যায়। কিন্তু জ্বর শেষে অত্যন্ত দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। ডেঙ্গুজ্বরে উত্তাপের তুলনায় নাড়ির গতি কম থাকে। রক্তে শ্বেত কণিকার অভাব দেখা দেয় ও এসিনোফিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক সময় এই অসুখের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও বাতজ্বরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সমস্যা হয়। এ জ্বর দু’ভাগে ভাগ করা যায়- সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর।
হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরঃ
ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, ত্বক ছিলে আঠালো ও শীতল অনুভূত হয়। সার্বক্ষণিক ভীষণ পেটব্যথা থাকে। প্রথম দিকে মাড়ি, নাক, মুখ বা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ত্বকের নিচে কালো বর্ণের চাকা চাকা দাগ হতে পারে। শিশুরা অনবরত কাঁদতে থাকে। খুব পিপাসা পায়। শ্বাসকষ্ট হতে পারে, মাঝে মধ্যে বমিও হয়। বমিতে রক্ত নাও থাকতে পারে। কালো বর্ণের পায়খানা হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের জটিল অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এ অবস্থায় হৃৎকম্পন বেড়ে যায়। বস্নাডপ্রেসার কমে যায়। হাত-পাসহ সারা শরীর বরফের মতো শীতল হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী মূর্ছা যেতে পারে। রোগীর খুব অস্থিরতাবোধ, একই সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব দেখা যায়।
করণীয়ঃ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে উচ্চ তাপমাত্রা রোধ করতে শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। শরীর বেশি ঠান্ডা মনে হলে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দ্রম্নত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে রেখে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে।
হোমিও চিকিৎসাঃ
অভিজ্ঞ চিকিৎসক যেসব ওষুধ ব্যবহার করেন, একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, ইউপেটেরিয়াম পার্ফ, আর্সেনিক অ্যালবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক, বাক্স, সালফারসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বি.দ্রঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করবেন না।