অনলাইনে হোমিওপ্যাথি শিক্ষার নামে আসলে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ?

অনলাইনে হোমিওপ্যাথি শিক্ষার নামে আসলে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ?

এখন হতে মাস খানেক পূর্বে পিরোজপুরের একজন ভদ্রলোক, যিনি নিজেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক।

সংগত কারণেই ভদ্রলোকের নাম পরিচয় প্রকাশে আমি অনিচ্ছুক, একান্ত প্রয়োজন হলে পরে হয়তো নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে পারি।

তিনি উনার ছেলের ব্যাপারে আমার সাথে পরামর্শ করার জন্য, কোনভাবে আমার মোবাইল ফোন নাম্বার সংগ্ৰহ করে আমাকে ফোন করেন।

আমি উনার ফোন রিসিভ করে সামান্য কথা শুনে বললাম আমি সরাসরি রোগী না দেখে চিকিৎসা দেই না, এবং বাচ্চাদের বেলায় মা ছাড়া চিকিৎসা দেই না।

উনি উনার বাচ্চা ও বাচ্চার মা কে নিয়ে পিরোজপুর হতে নোয়াখালী আসতে আগ্ৰহী।

আমি উনার বাড়ি পিরোজপুর শুনে বললাম, আপনার তো অসুস্থ তো বাচ্চা নিয়ে এতোদুর আসতে অনেক কষ্ট হবে।

আপনি আপনার বাচ্চার সমস্যা বলুন,দেখি আমি আপনার শিশু কে সরাসরি না দেখে কোন উপকার করতে পারি কি না ?

উনার এটি দ্বিতীয় সন্তান,প্রথম সন্তান হবার পর মারা গিয়েছে।

উনার বাচ্চার বয়স মাত্র দশ মাস,এ শিশু মাথায় আঘাত পাবার পর এখন বেশ কিছুদিন ধরে কোমায় আক্রান্ত।

সাথে খিঁচুনি ও আছে,টিকা ও বেশ কয়েকটি দেয়া হয়েছে।

এ্যালোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি দুটো ই ব্যার্থ, কোন উপকার হয় নি।

পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল,ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্ধারাও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোন কাজ হয় নি।

যাই হোক পরে উনার বাচ্চার সমস্যা শুনে বুঝতে পারলাম যে, বাচ্চার জন্ম ন্যাট্রাম সালফ্ প্রয়োজন।

কিন্তু আমি উনাকে পরামর্শ দিলাম আপনার বাচ্চার জন্য প্রধান ঔষধ হলো ন্যাট্রাম সালফ।

তবে তার সাথে থুজা এর সমর্থন প্রয়োজন হবে,কারন অনেক গুলো টিকা দেয়া হয়েছে।

সাথে আরো বললাম,থুজা ও ন্যাট্রাম সালফ্ একে অপরের পরিপূরক, এবং একটির পর অপরটি চমৎকার কাজ করে।

যাই হোক ন্যাট্রাম সালফ্ ও থুজা পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে প্রয়োগে আলহামদুলিল্লাহ উনার ছেলে এখন আগের তুলনায় অনেক সুস্থ।

এখন অনেকটা জ্ঞান ফিরে এসেছে, খিঁচুনি ও কমেছে।

কিন্তু অনলাইনে অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেন এমন একজন চিকিৎসক, ঐ চিকিৎসক ভদ্রলোক কে বেলাডোনা প্রয়োগের পরামর্শ দিলেন,উনার শিশুর জন্য।

অনলাইনে অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাশ নেন এমন অপর একজন কুপ্রাম মেট প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এখানে বেলাডোনা এবং কুপ্রাম মেট এর কি লক্ষন ছিলো,তা আমার বোধগম্য হয় নি।

আমি কিন্তু সম্মানিত সে দু'জন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের নাম ও পরিচয় জানি না।

সম্মানিত সে দু'জন চিকিৎসকের পরিচয় ঐ অসুস্থ শিশুর বাবা জানেন।

সাধারনত আমি কোন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের ভুল ধরি না, ধরতে পছন্দ করি না।

কোন ভুল হলে ব্যাক্তিগত ভাবে বলে দেই, ভুল ধরিয়ে দেই।

আজ সকালে উনি ফোন করে জানালেন আলহামদুলিল্লাহ,উনার সন্তান এখন অনেক ভালো আছে।

তারপর উনার নিজের জন্য পরামর্শ চাইলেন।

মাসখানেক আগে কোন এক ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ঠান্ডা লেগে উনার গলা বসে গিয়েছে।

কি ঔষধ সেবন করেছেন জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম, অনলাইনে অনেক চিকিৎসকের এক শিক্ষক উনাকে কষ্টিকাম 1M সেবন করতে বলেছিলেন, উনিও তা তামিল করেছেন। অর্থাৎ Causticum 1M সেবন করেছেন। আমি শুনে আঁৎকে উঠলাম।

এ সামান্য একিউট কেস এ, রাতে ঠান্ডা লেগেছে,আর সকালেই ধরেই কষ্টিকাম হাজার শক্তি ?

এ যেন কামান মারতে মশা দাগানোর মতো অবস্থা।

আপনারা উপরোক্ত লাইন টা শুদ্ধ করে পড়ে নেবেন।

আমার মতে এখানে কষ্টইকআম ৩০ ই যথেষ্ট ছিলো।

কষ্টিকাম ১০০০শক্তি এখানে কোন প্রয়োজন ই ছিলো না।

আমি সাধারনত কারো সিলেকশন নিয়ে খুব একটা মন্তব্য করি না।

কারন কয়েকটি,তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো,সকল চিকিৎসকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দূরদৃষ্টি সমান নয়।

তাই সিলেকশনের প্রার্থক্য হতেই পারে।

কিন্তু মিনিমাম জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা বাহ্ননীয়।

যিনি শতশত ছাত্রদের শিক্ষক, তিনি এতো বড় ভুল করলে, ছাত্র-ছাত্রীদের কি শেখাবেন ?

পরিশেষে আমি সকল শিক্ষক গনের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি, দয়া করে আপনাদের জ্ঞানের মান বাড়ান।

শিক্ষক হবার পূর্বে পুনরায় ছাত্র হোন,নিজে ভালো করে শিখে তারপর অন্যদের শেখান।

না হলে হোমিওপ্যাথি ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌঁছে যাবে।

আমি অনলাইন শিক্ষার বিরোধী নই,কারন বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ।

আমার আবেদন শুধু একটি ই,আর সেটি হলো সহজে শিখতে গিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গন যেন ভুল না শেখেন।

আমি হোমিওপ্যাথির একদম পেছনের বেঞ্চের একজন ছাত্র।

আমার অনুভূতি প্রকাশের জন্য আমি সকল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।

দয়া করে আমার কথায় কেউ মনে কষ্ট নেবেন না।


লেখক :

ডাঃ মুহাঃ মহিব্বুর রহমান

সিনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, নোয়াখালী।

কন্টেন্ট ক্রিয়েট : ১৩ - ০৩ - ২০২২ ইং

Next Post Previous Post