রমজানে কি খাবেন?


ইফতারে চিনি মিশ্রিত সরবত খাবেন না।

দীর্ঘ সময় পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকার ফলে ইফতারে চিনি যুক্ত সরবত খেলে তা সরাসরি কিডনিতে প্রভাব ফেলে যা কিডনির দীর্ঘ মেয়াদি হ্মতি ও রোগ এর কারণ হয়।সাদা চিনি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আরো বড় ব্যাপার হচ্ছে, এই খাদ্য উপাদানটির কোন ইতিবাচক দিক একেবারেই নেই।

পবিত্র মাহে রমজান শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকী। রমজান মাসে অনেকে অসুস্থতা সত্ত্বেও পবিত্র রোজা পালন করে থাকেন। আবার অনেক সুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা পালনকালে অসুস্থবোধ করেন। অনেকে আবার ইফতার ও সাহ্‌রিতে আহারের সময় অপরিকল্পিতভাবে খাদ্য নির্বাচন করেন। এসব ক্ষেত্রে রোজাদারেরা অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েন। দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখেই এ সময় খাদ্য নির্বাচন করা দরকার।

রোজা পালনের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার নির্বাচন, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক শক্তি এবং অদম্য ইচ্ছা ও আনুগত্য। কিছু নিয়ম, নীতি ও পরামর্শ অনুসরণ করলে সুস্থভাবেই রোজা পালন করা যায়।

সঠিক খাবার তালিকা অনুসরণ করে রোজা রাখা উচিত। কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। অতিভোজন থেকেও বিরত থাকুন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে। ইফতার ও সাহ্‌রিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। গ্লাস গুনে পানি খেতে অসুবিধা হলে সমপরিমাণ পানি বোতলে ভরে রাখুন এবং ইফতার থেকে সাহ্‌রির সময়ের মধ্যে তার পুরোটা পান করুন। 

এনার্জি ড্রিংক, কার্বনেটেড ড্রিংক এবং সোডাজাতীয় পানীয় বর্জন করুন। এগুলো অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনির ও হ্মতি করে। সারা দিন অভুক্ত থাকার ফলে শরীরের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় এবং দ্রুত শক্তি পাওয়া যায় এমন খাবারের উদাহরণ হলো গ্লুকোজ। এ ছাড়া তৎক্ষণাৎ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম খাবারের মধ্যে আছে আঙুর, খেজুর, ফলের রস। এগুলো যেমন শরীরে সহজে শক্তি আহরণে কাজে লাগে, তেমনি শরীরের পানি ও খনিজের প্রয়োজনও মেটায়। মিষ্টি শরবত, মিষ্টান্নজাতীয় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার বর্জন করা ভালো।

ইফতারে যা খাবেন: 

একজন রোজাদার ইফতারে কী খাবেন, তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। রমজান মাস এলে বিকেলবেলা থেকেই ইফতারের জন্য নানা খাবার তৈরি ও বিক্রির হিড়িক পড়ে। এ সময় হরেক রকম ইফতারির পসরা দেখা যায় রাস্তার পাশে, ফুটপাতে, অলিগলিতে, হাটে-বাজারে। এসব ইফতারির মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজি, বেগুনি, ডাল ও সবজি বড়া, আলুর চাপ, খোলা খেজুর, হালিম, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, নানা রং মিশ্রিত বাহারি শরবত। এ ছাড়া মুখরোচক বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই।

এসব মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কি না, এগুলোতে ভেজাল তৈল, বেসন ও কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। কোনো কিছু ভাজার জন্য একবারের বেশি তৈল ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, একই তৈল বারবার আগুনে ফোটালে কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়, যেমন পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন। এই রাসায়নিকের মধ্যে বেনজা পাইরিন নামক ক্যানসার তৈরিতে সক্ষম এমন পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে।

সবচেয়ে ভালো হয় খেজুর, পানি দিয়ে ইফতার শুরু করে সাথে সাথে ভাত খাওয়া (ডায়াবেটি রোগী ও যারা ডায়েট করছেন তারা ভাত খাবেন না) ভাত কারো পছন্দ না হলে বাদাম, কলা, সিদ্ধ ছোলা, সিদ্ধ ডিম। ডাবলি এবং ছোলা সিদ্ধ চাট মসলা দিয়ে মাখিয়ে খাওয়াও স্বাস্থ্য সম্মত এবং সাথে সালাদ যোগ করলে এই রেসিপিটা অনেক মজার হয়।

সিজনাল ফল রাখতে পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। দই চিড়াও যথেষ্ট ভালো হয় এবং পেট ঠান্ডা রাখে।

তবে তৈলে ডুবানো বেগুনি, চপ, পেঁয়াজু না খেলেও ছোলা হালকা তেলে ভেজে মুড়ি মাখিয়ে খেতে পারেন। তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে বদহজম হতে পারে। 

টক দই ও পুদিনার শরবত হজমের জন্য উপকারী। এছাড়া লেবু, বিভিন্ন ফলের জুস, বাদামের শরবতেরও স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। মাঝে মাঝে বেলের শরবতও রাখতে পারেন। ঘরে তৈরি লাচ্ছি খাবেন।(অল্প গুর মিশিয়ে নিতে পারেন গুর)

ইফতারিতে ভাত খাওয়ার সুবিধা হলো : 

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রায় ৮/৯ ঘন্টা সময় পাওয়া যায়। এত দীর্ঘ সময়ে ভাত হজম হয়ে যায়। ফলে সাহরিতেও যথেষ্ট ক্ষিদে থাকে। পরিমিত খাওয়া যায়। যারা তারাবিহ পড়ে ভাত খায় তারা সাহরিতে ভালো করে খেতে পারে না। কারণ তারাবির পর সাহরি পর্যন্ত সময় ৫ ঘন্টা বা তার কম। আবার রাতে কোন পরিশ্রম না করা বা ঘুমানোর কারণে খাবার হজমেও দেরি হয়।

কী খাবেন সাহ্‌রিতে: 

শরীর সুস্থ রাখার জন্য সাহ্‌রি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, সাহ্‌রির খাবার মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। রমজানে স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন করে সুবহে সাদিকের আগে ঘুম থেকে উঠে খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে হয়। সকালের নাশতার পরিবর্তে খুব ভোরে সারা দিনের উপবাসের সময় চলার মতো খাবার প্রয়োজন হয়। অধিক তৈল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সাহ্‌রির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি খাবার খেতে হবে। তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার–পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

পিপাসা নিবারণ হয়, সেই পরিমাণ পানি নিজের অভ্যাস অনুযায়ী পান করতে হবে। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানিশূন্যতার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। 

তাই ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করবেন। কার্বোনেটেড ও সুগার ড্রিংক, চা ও কফি পান করলে শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যায়। তাই কার্বোনেটেড, বেভারেজ ও সুগার ড্রিংক বা নানা ধরনের শরবত পরিহার করা উচিত। রোজাদারদের প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।রোজার মাসে ডায়াবেটিস রোগীদের নিজেদের ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। কারণ যখন তখন ডায়াবেটিস বহন করা মানুষদের সুগার লেভেল কমে যেতে পারে।  ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, সুগার রোগীদের রোজার মাসে প্রোটিন এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীরা রোজার সময় খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি,টক দই ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

সময়মতো সুগার চেক করাও জরুরি। যারা দীর্ঘ দিন যাবত  ডায়াবেটিস,কিডনি,হাট সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের উচিত  চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ অনুযায়ী  রোজা রাখতে হবে।

ডাঃসাব্বির জুবায়ের 

ডি এইচ এম এস (ঢাকা)

Next Post Previous Post