কীভাবে বুঝবেন আপনার এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা হয়েছে : হলে যা খাবেন
এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা হল রক্তে রক্তকণিকার স্বল্পতা বা রক্তের পরিমাণ বা অক্সিজেনবাহী রক্তরঞ্জক হিমোগ্লোবিনের অভাব।
বুঝতেই পারছেন আজকের বিষয় হিমোগ্লোবিন যার অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হলেও শরীরে লোহিত কণিকার পরিমাণ পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম এবং মহিলাদের ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম থাকা উচিত।
গর্ভাবস্থার যেকোনো ট্রাইমিস্টারে ১০ গ্রাম এর ওপরে হিমোগ্লোবিন থাকলে গর্ভবতীর জন্য ভালো।
কীভাবে বুঝবেন আপনার হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছে?
➠ আপনি ক্লান্তি বোধ করবেন
➠ মাথা ঘোরা ও ঝিমঝিম করাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠবে।
➠ আপনার ত্বক এবং ঠোঁট ফ্যাকাসে বা বিবর্ণ হয়ে যাবে।
➠ আপনি শ্বাসকষ্ট বোধ করবেন এমনকি বিশ্রাম নেওয়ার সময়েও।
➠ আপনার দ্রুত হৃদস্পন্দন হতে থাকবে।
➠ আপনার হাত এবং পায়ের পাতা প্রায়শই ঠাণ্ডা হয়ে আসবে।
➠ নখ ভঙ্গুর হয়ে উঠবে এবং সহজেই ভেঙ্গে যাবে।
রক্তাল্পতা বা হিমোগ্লোবিন কমার পেছনে বহু কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল শরীরে আয়রন শোষিত না হওয়া। অনেকেই আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করে ভাবছেন কাজ শেষ। কিন্তু তা কী আসলেই কাজে লাগছে কি না তা জানতেও পারছেন না।
তাই জেনে নেই আয়রন কেনো শোষন হয় না :
শরীরে আয়রন শোষণ না হওয়ার মধ্যে কয়েকটি কারণ হচ্ছে সেলিয়াক ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস যা আপনার শরীরে আয়রন শোষণ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক, বাইপাস সার্জারি, পেটের অ্যাসিড কমাতে ব্যবহৃত ওষুধও আপনার শরীরের আয়রন শোষণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাছাড়াও চা, কফি, বিয়ার, সফট ড্রিংকস জাতীয় পানীয় আয়রন শোষনে বাঁধা দেয়।
এবার চলুন কোন খাবার হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করবে তা জেনে আসি :
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
ন্যাশনাল অ্যানিমিয়া অ্যাকশন কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী, ঋতুচক্র চলার সময় মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে যায়। ফলে শারীরিক দুর্বলতা অনেক বাড়ে। তাই এ সময়ে আয়রন জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। যেমন-দেশি মুরগির লিভার, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়োর বীজ, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি-র অভাবেও হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। আবার ভিটামিন সি ছাড়া আয়রনের শোষণও সম্ভব হয় না। পেয়ারা, আমলকি, পেঁপে, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, আঙুর, টমেটো, টক ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
ফলিক অ্যাসিড
এটি এক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। লাল রক্তকণিকা তৈরিতে এটি সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি, কলিজা, শিমের বীজ, বাদাম, কলা, ব্রকোলি ফলিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস।
দুধ
দুধে আছে প্রোটিন,পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।
মধু
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণমত লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
ছোলা, সয়াবিন ও বিনস
রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন ছোলা, সয়াবিন ও বিনস জাতীয় খাবার। এগুলো শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এই সকল খাবারে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সবই থাকে। যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
যারা দীর্ঘদিন যাবত কোন রোগে ভুগছেন যেমন কিডনি,ডায়বেটিস হাট সহ নানান রোগে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শের মধ্যে থাকবেন।
আমাদের দেশে গনহারে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এ প্রবণতাই আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আপনি কি জানেন আয়রন ট্যাবলেট খায়ার কারনে শরীরে হিমোগ্লোবিন অত্যধিক বেড়ে যায় তাহলে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে। ছোট ছোট রক্তের ডেলা তৈরি হয়। এসব রক্তের ডেলা হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক বা পায়ের রক্তনালিতে জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক, পালমোনারি এমবলিজম, স্ট্রোক বা পায়ে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিসের মতো জটিল অসুখের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।কী মুশকিল তাই না? অতএব শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ব্যালেন্স করতে একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হোন।
আজ তবে এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন। নিজে নিজে যে কোনো ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর :
ডা. সাব্বির জুবায়ের
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক