যৌন বিজ্ঞান : শিশু জন্মের পর পাঁচ বৎসর পর্যন্ত প্রয়োজন বিশেষ যত্ন
মনোবিজ্ঞানীর রাজা ডাঃ সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেন, মানুষের কাম পূর্ণ বয়স্ক লোকে ঐতরকামিতায় (Hetero– Sexuality) পৌঁছানোর পূর্বে কতগুলো স্তরের ভেতর দিয়ে যায়। শিশুর কাম উত্তেজনা থাকে সর্বপ্রথম তার সর্বদেহে; বাহ্যে, প্রস্রাব, স্তন্যপান প্রভৃতি ক্রিয়ার দ্বারা সে আনন্দ পায়। এরপর সে নিজের দেহকে ভালোবাসতে শেখে। তৎপরে সে নিজ মা'কে ভালোবাসে। এরপর আসে সমকামিতা (Homo-sexuality)। এই স্তরে বালক বালককে এবং বালিকা বালিকাকে ভালবাসে। সবশেষে আসে যৌবনসুলভ ঐতরকামিতা(Hetero-sexuality)।
শিশুর_কামের যখন বিভিন্ন স্তরের ভেতর দিয়ে এভাবে উন্মেষ হতে থাকে, তখন যদি তার মনে কোনো প্রকার আঘাত পায় (Trauma) , তাহলে স্বাভাবিক উন্মেষের পথে বিঘ্ন উপস্থিত হয়। শিশু যে স্তরে আঘাত প্রাপ্ত হয় সে স্তরে কিছু কামশক্তি বা Libido অবস্থান করে, ফলে যৌবনে তার কাম ঐতরকামিতায় পৌঁছালেও আঘাতপ্রাপ্ত স্তরের আকর্ষণ তাকে পেছনের দিকে টানতে থাকে।ভবিষ্যতে যে বায়ূগ্রস্ত হয় সে এইরূপ দুর্বল কামবৃত্তি নিয়ে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।ঐতরকামিতা বড় ঠুনকো, অল্প আঘাতেই ভেঙ্গে পড়ে এবং তার কামশক্তির কিছু অংশ ছুটে চলে প্রথমের পান্থনিবাসে।এই পান্থনিবাস স্বকাম (Atuo -erotism) হতে পারে, আত্মকাম (Narcissism) হতে পারে বা হতে পারে সমকামিতা (Homo- sexuality)। কামশক্তির কিছু অংশের এইরূপ আঘাত প্রাপ্ত স্তরে ফিরে যাওয়ার নাম Regressin. এখন প্রশ্ন হতে পারে শিশু আঘাত পায় কি করে? শিশু আঘাতপ্রাপ্ত হয় সে যদি বয়স্ক লোকের কামক্রিয়া লক্ষ্য করে অথবা তাকে যদি উত্তমরূপে কোনো ক্রিয়ায় নিযুক্ত করা হয়। শিশুর জীবনের প্রথম ৫ বছরের মধ্যে যদি এইরূপ আঘাত আসে তবেই তার মানসিক রোগগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।পরবর্তী কালে এ সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
উদাহরণ_স্বরূপ_একটি_উন্মাদ_রোগীর_বর্ণনাঃ–১৯ বৎসরের এক উন্মাদ যুবকের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় একজন ডাক্তারের কাছে। যুবক দেখতে খুবই সুন্দর ও সুদর্শন, মায়াময় চাউনি,টানাটানা চোখ; কিন্তু সে কথা বলেনা, কেবল ফেলফেল করে চেয়ে থাকে।তার কামাসক্তি খুবই প্রবল কিন্তু সে কেবল যুবতী রমণীদের ছাড়া বয়স্থা, প্রৌঢ়া বা তরুণীদের দিকে ফিরেও তাকায় না। অতঃপর নানাভাবে যে ইতিহাস ও লক্ষণ পাওয়া গেল তা এই যুবকটির যখন ৫বৎসর বয়স তখন তার মা মারা যায়। পিতা তখন তার এই শিশু বয়সে লালন পালনের জন্য একটি রূপসী বিংশ বর্ষীয়া যুবতী আনেন ও ক্রমে তার সাথে নিজেই প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন। ঐ রমণীর গণোরিয়া ছিল এবং পিতাও এই রোগে আক্রান্ত হন। সে যা-ই হোক, তার নিজের কথায়," ঐ যুবতীর মতো এতো কামাসক্তা রমণী তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।" এখন মজার ব্যাপার হলো যে, তাঁর পঞ্চমবর্ষীয় পুত্র হঠাৎ একদিন সে-ও গণোরিয়ায় আক্রান্ত হলো। এই পুত্র ঐ যুবতী পরিচারিকা বা পিতার রক্ষিতার সাথে রাত্রি যাপন করতো এবং ক্রমশঃ এটি প্রকাশ পেয়ে গেল যে, সে রাত্রে এই শিশুর দ্বারাই সম্ভোগ সুখের চেষ্টা করতো।যা হোক, চিকিৎসার দ্বারা গণোরিয়া দোষ দূর হলো, পরিচারিকারও বিদায় ঘটলো। কিন্তু পুত্র ক্রমশঃ কেমন যেন হয়ে যেতে লাগলো। ক্রমে ক্রমে দেখা দিতে লাগলো শয্যামূত্র, তারপরে যখন তখন অসাড়ে প্রস্রাব নির্গমন, এইভাবে চলতে চলতে ক্রমশঃ হাবাগোবা জড়ভরতের ন্যায় হয়ে গেলো।
শিশুর_মানসিক_স্বাস্থ্য দৃঢ় করতে হলে তার জীবনের প্রথম ৫বছরের যত্ন উপযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এই সম্পর্কে পিতামাতার মনঃসমীক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ছোট শিশুর অহং (Ego) খুব দূর্বল। আঘাতের ফলে তার মনে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তার ঝড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা তার থাকেনা। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে মানব জাতির হাজার হাজার বৎসর ধরে অর্জিত সভ্যতা আত্মস্থ করে নিতে হয়। বংশগত কারণে এবং প্রতিকূল পারিপার্শ্বিক কারণের জন্য এই কঠিন কাজ আয়ত্ব করার ক্ষমতা সকল শিশুর থাকেনা। অনেকে শিশু বয়সেই মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে, অথবা দূর্বল মানসিক গঠন নিয়ে জীবনযুদ্ধে ব্রতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙ্গে পড়ে।
লেখক : -
ডা. এ.বি.এম শহীদুল্লাহ্
ডিএইচএমএস (বিএইচবি) ঢাকা
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথ
চেম্বারঃ- ওহি হোমিও কেয়ার
১৪৭ পূর্ব আজিমপুর, উত্তরা, ঢাকা
(চালবান ভাই ভাই মার্কেট গলি দিয়ে ভিতরে ঢুকে মুন্সিবাড়ি মোড়)