সজিনা গাছের পাতা; পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব
সজিনা গাছের পাতায় বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে। সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজিনা পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি।
সজিনা (বৈজ্ঞানিক নাম: Moringa oleifera) হচ্ছে Moringaceae পরিবারের Moringa গণের একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ।সজনের কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে।
পুস্টি বিজ্ঞানীদের দাবি খাদ্য তালিকায় সজিনা পাতা আপনাকে ও আপনার পরিবার কে ৩০০টি রোগ থেকে রক্ষা করবে যা গবেষনায় পরীক্ষিত।
প্রতি ১০০ গ্রাম সজিনা পাতার অজানা পুষ্টিগুণ:
পুষ্টি উপাদানের নাম- কাঁচা পাতা- শুকনো পাতা
ক্যালোরি (মিলি গ্রাম)- ৯২ - ২০৫
প্রোটিন (গ্রাম) - ৬.৭ - ২৭.১
ফ্যাট(গ্রাম) - ১.৭ - ২.৩০
কার্বোহাইড্রেট(গ্রাম)- ১৩.৫ - ৩৮.২
ফাইবার(গ্রাম) - ০.৯ - ১৯.২
মিনারেল(গ্রাম) - ২.৩
ক্যালসিয়াম(মিঃগ্রাম) - ৪৪০ - ২০০৩
ম্যাগনেসিয়াম(মিঃগ্রাম)- ২৪ - ৩৬৮
ফসফরাস(মিঃগ্রাম) - ৭০ - ২০৪
পটাশিয়াম(মিঃগ্রাম) - ২৪ - ১৩২৪
কপার (মিঃগ্রাম) - ১.১ - ০.৬
আয়রন (মিঃগ্রাম) - ০.৭ - ২৮.২
অক্সালিক এসিড(মিঃগ্রাম)- ১০১ - ০.৩
সলফার(মিঃগ্রাম) - ১৩৭ - ৮৭০
[তথ্য সুত্র; U.S DEPARTMENT OF AGRICULTURE-USDA]
সজিনা পাতার উপকারিতা সমূহঃ-
প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে
সজিনা ও পাতায় রয়েছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন কারি অ্যাসেনশিয়াল সব উপাদান, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনকারী উপাদান সমুহ। এসব উপাদান প্যাংক্রিয়াসের শক্তি বৃদ্ধি করে ইনসুলিনের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তের সুগারাধিক্য স্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থান করে।
উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে
সজনে পাতায় থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে।
হার্ট সুস্থ রাখে
এই পাতায় বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-সি, দুস্পাপ্য সব খনিজ, স্বল্প মাত্রার শর্করা, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য হৃদপিণ্ড বান্ধব উপাদান সমুহ, মানবদেহের রক্তনালি পরিস্কার করে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের গতি স্বাভাবিক করে। নিয়মিত সজনে খাইলে হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে ।
বাত ব্যাথা ও সায়েটিকা ভাল করে
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্যাথা কমানোর মত উপাদান সমুহ। এসব সক্রিয় উপাদান সমুহ শরীরের বিষ, বাত, সায়েটিকা বাত এবং জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকর।
শ্বাসকষ্ট কমায়
সজনে পাতার রস খেলে শ্বাসকষ্ট সারে ও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়।
গর্ভবতী মায়েদের রক্ত স্বল্পতা ও বুকের দুধ বাড়ায়:-
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্যাথা কমানোর মত উপাদান সমুহ। এসব সক্রিয় উপাদান সমুহ শরীরের বিষ, বাত, সায়েটিকা বাত এবং জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকর।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
সজনে ও পাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেল সমুহ।যেগুলো পেটের সুরক্ষা দিতে খুবই কার্যকরী। এসব উপাদান অন্ত্রের স্বাভাবিক পর্যায় ঠিক রেখে হজমশক্তি বাড়ায় এবং বহুদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দুর করে।
শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে:-
এর ভিটামিন, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওজন কমানোর উপাদান সমুহ মানবদেহের অবাঞ্ছিত ও অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সজনে পাতা যৌবন ধরে রাখে
এর ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ দেহের ইমিউনিটি অফ স্টিমুলেন্ট বাড়িয়ে তোলে এতে স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স ধরে রাখার উত্তম হার্ব এই সজিনা পাতা।
এছাড়াও চর্ম রোগ, কিডনি সমস্যার সমাধানে সজিনা ও সজিনা পাতার উপকারিতা রয়েছে।
খওয়ার নিয়মঃ-
সজিনা পাতা যেহেতু কোন মেডিসিন না তাই এটা যে কোন ভাবে খাওয়া যায়। যেমন-
এক গ্লাস দুধের সাথে ১-২ চামচ সজিনা বা মরিংগা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস যে কোন জুসের সাথে ১-২ চামচ সজিনা বা মরিংগা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন
এমনকি আমরা প্রতিদিন যে সবজি রান্না করি সেটার সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন তবে সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে ১-২ চামচ সজিনা বা মরিংগা পাউডার মিশিয়ে খেলে সব থেকে ভাল উপকার পাওয়া যায়। গ্রাম থেকে সজিনা পাতা নিজেদের তত্বাবধানে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে রাখতে পারেন।
সতর্কতাঃ- সজিনা পাতা নিসন্দেহে একটি পুষ্টিকর খাবার তবে আপনি রোগী হলে চিকিৎসার বিকল্প এমনটি নয়। রোগী হলে চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নাই। সেই সাথে পথ্য ও পুস্টিকর খাবার মাঝেমধ্যেই খেতে পারেন অতিরিক্ত পরিমাণে নয়।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর -
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার