রোগের চিকিৎসা করে রোগীকে আরোগ্য করা যায় না

কোন রোগগুলোর চিকিৎসা করে রোগীকে আরোগ্য করা যায় না। প্রয়োজন মায়াজম ভিত্তিক রোগীর সদৃশ্য চিকিৎসা। 

আলোচনায় :

৫০ বছরের অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ

ডা. রেজাউল করিম 

বাংলায় হোমিওপ্যাথির স্বরুপ উন্মোচন কারী লেখক,

আন্তর্জাতিক হোমিওপ্যাথিক গবেষক ও লেখক

These inroads on human health effected by the allopathic non-healing art (more particularly in recent times) are of all chronic diseases the most deplorable, the most incurable; and I regret to add that it is apparently impossible to discover or to hit upon any remedies for their cure when they have reached any considerable height.

সূত্র-৭৫, মানবস্বাস্থ্যের উপর অ্যালোপ্যাথিক অনারোগ্যকর কলার এ আক্রমণগুলো (বিশেষ করে ইদানীল চিররোগের চেয়ে অধিক দুঃখজনক, অধিক দূরারোগ্য এবং আমি দুঃখের সাথে যোগ করি যে, তাদের আরোগ্যের জন্য কোনো ঔষধ উদ্ভাবন করা বা আবিষ্কার করা দৃশ্যত অসম্ভব যখন তারা বেশি চরমে পৌঁছে।

ব্যাখ্যা:- এ-সূত্রে বলা হয়েছে যে, প্রকৃত চিররোগের চেয়ে মানবস্বাস্থ্যের উপর অনারোগ্যকর কলার স্থল মাত্রার ঔষধসমূহের পুনঃপুন আক্রমণ দ্বারা যেভাবে মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করা হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক। কারণ এ-ক্ষতিগুলো। বিবেকবান মানুষই করছে । প্রকৃতি এর জন্য দায়ী নয়। প্রকৃতি মানবস্বাস্থ্যের উপর এসব ক্ষতিকর ঔষধের আক্রমণ থেকে যতটুকু সম্ভব আত্মরক্ষার ক্ষমতা মানবদেহের জীবনীশক্তিকে দিয়েছে। জীবনীশক্তি আত্মরক্ষার জন্য এ-সকল ক্ষতিকর ঔষধের আক্রমণের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার অনিবার্য ফলস্বরূপ দেহাভ্যন্তরে নানারূপ আঙ্গিক বিকৃতি ও ক্রিয়াকলাপের বৈকল্য সংঘটিত হয়। ফলে দূরারোগ্যভাবে স্বাস্থ্য ধবংস হয়। তা আর পুনরুদ্ধার করা যায় না।

হ্যানিম্যান প্রধানত দুটি কারণে প্রকৃত চিররোগ থেকে তদানীন্তন অ্যালোপ্যাথিক ক্ষতিকর ঔষধের অবিরাম আক্রমণ কর্তৃক সংঘটিত স্থায়ী ব্যাধিকে পৃথক করে দেখিয়েছেন। প্রথম কারণ তার সোরা তত্ত্বকে রক্ষা করা এবং দ্বিতীয় কারণ দূরারোগ্য ব্যাধিকে আরোগ্যযোগ্য ব্যাধি থেকে পৃথক করা। তার মতে প্রকৃত চিররোগের জন্মদাতা সোরা, এবং কৃত্রিম স্থায়ী ব্যাধিসমূহের জন্মদাতা মানুষ নিজেই। তাই তা আরোগ্য করাও খুব কঠিন কাজ। 

হ্যানিম্যান তার দি লেসার রাইটিংস এ “ALLOPATHY" শিরোনামে ৭৫০ পৃষ্ঠায় পাদটীকায় বলেছেন যে, “Those internal malformations, abnormal organizations and disorganizations produced by nature for our protection against the violence of chronic miasmatic disease (psora), it can most rapidly remove and reconstruct with the assistance of the cure of the psora by homeopathy, but those caused by the injurious misuse of medicines, it has much more difficulty in curing." 

অর্থাৎ, “ঐ আভ্যন্তরীণ বিকৃতিগুলো, অস্বাভাবিক অবস্থা এবং বিশৃঙ্খলা যা স্থায়ী মায়াজমযুক্ত ব্যাধির (সোরা) আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের রক্ষা করার জন্য প্রকৃতি কর্তৃক উৎপন্ন করা হয়, তা জীবনীশক্তি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কর্তৃক সোরা আরোগ্যের মাধ্যমে সর্বাধিক দ্রুত অপসারণ ও পুনর্গঠন করতে পারে, কিন্তু ঔষধের ক্ষতিকর অপব্যবহার দ্বারা সৃষ্ট ব্যাধিগুলো আরোগ্য করতে খুবই কষ্ট হয়।"

কারণ, অনারোগ্যকর কলার উগ্র শক্তিশালী ঔষধ ঘন ঘন স্থল মাত্রায় সেবনের ফলে জীবনীশক্তি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল জীবনীশক্তির প্রতিক্রিয়া দুর্বলই হয়। ঔষধের বিষক্রিয়ায় জর্জরিত জীবনীশক্তি তখন স্বচ্ছতার সাথে কোনো লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে না। দুর্বল জীবনীশক্তি যদিও কিছু অস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করে, তার ভিত্তিতে নির্বাচিত সদৃশ ঔষধ দ্বারা

(মায়াজম কিভাবে কাজে লাগে ?) যথার্থ সুফল পাওয়া যায় না। কারণ জীবনীশক্তি এর বিরুদ্ধে যথার্থ আরোগ্য- সহায়ক প্রতিক্রিয়া প্রয়োগ করতে পারে না। 

মায়াজনের বৈশিষ্ট্য :

কিন্তু প্রকৃতি কখনো কোনো ব্যক্তিকে কোনো মায়াজম দ্বারা একাধিকবার সংক্রমিত করে না। অর্থাৎ কোনো মানুষ জীবনে মাত্র একবারই কোনো মায়াজমের একটিমাত্র মাত্রা গ্রহণ করে। ফলে পীড়িত মানবদেহে সংক্রমিত মায়াজমের স্বকীয় রোগলক্ষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পায়। 

তাতে লক্ষণের স্বচ্ছতা বজায় থাকে। রোগীদেহে খুব সহজে বিশেষক লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। তখন কতিপয় বিশেষক লক্ষণ সাদৃশ্যে একটি ঔষধ খুঁজে পাওয়া খুব সহজ হয়। তাই প্রাকৃতিক ব্যাধিগুলো সহজে আরোগ্য করা যায়; শুধু তাই নয়, যথার্থ সদৃশ ঔষধে প্রাকৃতিক ব্যাধি তাদের স্ব-স্ব মায়াজমসহ নির্মূলভাবে আরোগ্য হয়। 

যেহেতু চিররোগের মূল ভিত্তি মায়াজম, তাই চিররোগ মানেই এর মায়াজম। অতএব চিররোগের নির্মূল আরোগ্য মানেই এর মায়াজমসহ আরোগ্য। চিররোগের মূল উৎপাটনের পর কখনো তার মায়াজম অবশিষ্ট থাকতে পারে না ঔষধ সৃষ্ট রোগ কোন দুই সাতে কোন অবস্থায় তার জট খোলা

পক্ষান্তরে মানবদেহে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ঔষধ অপপ্রয়োগের ফলে যেসব রোগ সৃষ্টি হয় তা নিঃসন্দেহে ঔষধজনিত রোগ (Drug disease)। এসব রোগের প্রকৃত সদৃশ ঔষধ কখনো খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ হোমিওপ্যাথিক দর্শন অনুসারে প্রকৃতিতে প্রাকৃতিক রোগের সদৃশ ঔষধ আছে, কিন্তু ঔষধের সদৃশ ঔষধ নেই। তাই কৃত্রিম রোগের (Drug disease) বিরুদ্ধে আরোগ্য-সহায়ক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সুযোগ নেই। মহাত্মা হ্যানিম্যান মায়াজমঘটিত চিররোগ এবং ঔষধ কর্তৃক সৃষ্ট (কৃত্রিম) চিররোগ সম্পর্কে গবেষণা এবং পরীক্ষা-- নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে, প্রাকৃতিক চিররোগ আরোগ্যের জন্য স্রষ্টা ব্যবস্থা দিয়েছেন বটে কিন্তু ড্রাগ ডিজাজ আরোগ্যের জন্য কোনো ব্যবস্থা দেননি। তবে যৌবনকালে মানুষের জীবনীশক্তি যতদিন খুব সবল থাকে, যে সময়টিতে প্রাকৃতিক চিররোগ আপনি দমন থাকে, ঠিক সেই বয়সে মায়াজম আরোগ্যসাপেক্ষে জীবনীশক্তি কর্তৃক ড্রাগ ডিজীজ অপসারিত হতে পারে। 

কিন্তু প্রকৃত অবস্থা এমন যে, রোগীদের দেহে তিনটি স্থায়ী মায়াজম একসাথে জট পাকিয়ে থাকে, অধিকন্ত তাদের সাথে যখন ড্রাগ ডিজীজ যুক্ত হয় তখন তাদের জট এত প্রবল এবং দৃঢ় হয় যে, তার গিট বা বন্ধন খোলা যায় না। তাই তখন মায়াজম আরোগ্য করা তো দূরের কথা, সুপ্ত অবস্থায় নেওয়াও প্রায় অসম্ভব। কারণ তখন দেহের প্রত্যেকটি বিসদৃশ ব্যাধি দীর্ঘদিন সহাবস্থানের মাধ্যমে পরস্পরের সহযোগী হয়ে উঠে এবং তারা সম্মিলিতভাবে অগণিত ব্যাধি সৃষ্টি করে। ফলে উক্ত রোগীদেহে ব্যাধির মৌলিক সত্তা কখনো আবিষ্কার করা যায় না। তখন রোগীকে উপশমকারক চিকিৎসা হিসাবে এক প্রকার চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। তা হলো দৃশ্যত লাক্ষণিক চিকিৎসা, যদ্দারা মায়াজম আরোগ্য হবে না এবং ড্রাগ ডিঙ্গী সম্পূর্ণ দূর হবে না। 

এইরূপ অবস্থার সম্মুখীন হয়ে অনেক হোমিওপ্যাথ মনে করেন যে, রোগ আরোগ্য হলেও মায়াজম আরোগ্য হয় না। আসলে মায়াজমকে ড্রাগ ডিজীজ থেকে আলাদা করে দেখলে এরূপ ভুল ধারণা আসবে না।

আলোচনা নোট -

ডা. এম আল মামুন

ডিএইচএমএস, ঢাকা

Next Post Previous Post