হোমিওপ্যাথিতে দ্বিতীয় ব্যাবস্থাপত্র
প্রথমে স্মরণ রাখতে হবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র বলতে এটাই বুঝায় যে পূর্ব প্রযুক্ত ঔষধটি তার ক্রিয়া প্রকাশ করেছে। যেখানে প্রথম ঔষধ দ্বারা কোনো কাজই হয়নি, সেখানে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের কথাই উঠতে পারে না। প্রথমেই ভুল ঔষধ দেয়া হলে তা নিবারণের উপায় সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যান বলেছেন যে, পর্যবেক্ষণশীল চিকিৎসক রোগের সঠিকভাবে অনুসন্ধান করেন। তিনি যখন জরুরী ক্ষেত্রে ৬, ৮,বা ১২ ঘন্টা পরে বুঝতে পারেন যে, শেষ ঔষধটির নির্বাচন ঠিক হয় নি, যার ফলে রোগীর অবস্থা খুবই কম পরিমাণে হলেও বোধ-গম্যভাবে প্রতি ঘন্টায় নতুন লক্ষণ ও যন্ত্রণার আবির্ভাব খারাপের দিকে চলছে তখন তৎকালীন অবস্থার জন্য উপযুক্ত একটি ঔষধ নির্বাচন দ্বারা তাঁর ভুল সংশোধন শুধু অনুমোদনযোগ্য নহে, কর্তব্যও বটে।
দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র হলো সেটাই, যেখানে সুনির্বাচিত ঔষধের কাজ কিছুদূর অগ্রসর হয়ে উন্নতি স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় এখানে কি কর্তব্য সে সম্পর্কে ডাঃ কেন্ট তিনটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেনঃ–
১) প্রথম ঔষধটি পুনঃপ্রয়োগ (Repetition) ।
২) প্রতিকার (Antidoting) ।
৩)পরিপূরণ(Complementing) ।
১) ঔষধটির পুনঃপ্রয়োগের ক্ষেত্রঃ–
ক) যেখানে মূল লক্ষণ গুলো ফিরে আসে।
কেন্টের নির্দেশ হলো, প্রত্যেকটি ঔষধকে একই শক্তিতে দু'বার প্রয়োগ করতে হবে এবং তারপর উচ্চ শক্তিতে উঠতে হবে; কিন্তু ডাঃ হ্যানিম্যানের নির্দেশ একবার। একই শক্তির ঔষধ পুনঃ প্রয়োগ করা যাবেনা।
খ) যদি রোগী বলে তার উন্নতিবোধ আর অগ্রসর হচ্ছে না, একই স্থানে রয়ে গেছে, কিন্তু পূর্বেকার লক্ষণ ফিরে আসেনি, সেখানে ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ না করে ধৈর্য্যসহকারে অপেক্ষা করতে হবে, কারণ উন্নতির লক্ষণ গুলো চক্রবৎ পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আসে।
গ) রোগী যদি অভিযোগ করে যে তার ভলোবোধ আসছে না, সেখানেও পূর্ব লক্ষণ গুলো ফিরে না আসা পর্যন্ত ঔষধ পুনঃপ্রয়োগ ও চিন্তা করা উচিত হবেনা।
ঘ) রোগীর লক্ষণের পরিবর্তন ঘটলেও ভালবোধ যদি অক্ষুন্ন থাকে এবং রোগীর উন্নতি হচ্ছে মনে হয়, সেখানেও ঔষধের পুনঃপ্রয়োগ বিধি নহে।
২) প্রতিকারের ক্ষেত্রঃ–
যেখানে প্রথম ঔষধ ব্যবস্থা করার পর নতুন লক্ষণ সমূহ আবির্ভূত হয় ও চলিতে থাকে এবং রোগীর ভালো থাকাবোধ জাগ্রত হয়না, সেখানে বুঝতে হবে প্রথম ব্যবস্থা ঠিক হয়নি এবং তার প্রতিকার আবশ্যক।
প্রতিকারমূলক এ দ্বিতীয় ব্যবস্থায় মূল লক্ষণ গুলোর সহিত আগন্তুক লক্ষণ গুলো যোগ করে নবাগত লক্ষণ গুলোর উপর জোর দিয়ে নতুন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
৩) পরিপূরক ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রঃ–
ক) যেখানে প্রথম প্রযুক্ত ঔষধটি গভীর ভাবে ক্রিয়া প্রকাশ করছেনা এবং অবশিষ্ট কিছু লক্ষণ রয়ে গেছে যেমন, বেলেডোনার পর ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, পালসেটিলার পর সাইলিসিয়া, সিপিয়ার পর নেট্রাম মিউর ইত্যাদি।
আমার মন্তব্যঃ– এখানে এটা বলার অর্থ এই নয় যে, ঢালাওভাবে একটার পর আরেকটি ঔষধ প্রয়োগ করে ফেলা। অর্থ এটাই যে,যখন একটি ঔষধ প্রয়োগ করার পর সম্পূর্ণ আরোগ্য না এসে একটু জের থেকেই যাচ্ছে এবং অন্য কোনো ঔষধের লক্ষণের ইঙ্গিত দিচ্ছেনা কেবল তখনই তা করা।
খ) অন্য প্রকার ক্রনিক রোগবীজের (chronic myasm) আবির্ভাব ক্ষেত্রে যখন নতুন ঔষধের নির্দেশ আসে।
কোনো রোগী সোরা, সাইকোসিস এবং সিফিলিস এ তিনটি রোগবীজ দ্বারা জড়িভূত হলে, যখন যেটির লক্ষণের প্রাধান্য ঘটবে তদনুযায়ী ঔষধ পরিবর্তন করাই বিধি।
সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগ করা সত্বেও আহার ও সুসংযত জীবন যাপন সম্বন্ধে বিধি নিষেধ পালন না করলে আরোগ্য লাভ বিঘ্নিত হয়।
এ সম্পর্কে ডাঃ হ্যানিম্যান মোটামুটি যে উপদেশ দিয়েছেন, তা হলো চিকিৎসকের ভেষজ ধর্মী সবধরনের খাদ্য রোগীকে খেতে নিষেধ করবেন যাতে সূক্ষধর্মী ঔষধের শক্তি এতদ্বারা অভিভূত হয়ে না পড়ে। ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে এ সম্বন্ধে অধিকতর অবহিত হওয়া প্রয়োজন।
ডাঃ হ্যানিম্যানের শিষ্যগন গুরুর নির্দেশের উপর মাত্রা চড়িয়ে দিয়ে পথ্যাদি প্রদান সম্বন্ধে অধিকতর কড়া ব্যবস্থা প্রদান করতেন। সেজন্য হ্যানিম্যান খাদ্যাদি নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে বেশী বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে মাঝামাঝি ধরণের খাদ্যকে বর্জন করতে বলেননি, বরং তা অনুমোদনই করেছেন।
অ্যাকিউট রোগের ক্ষেত্রে রোগী যা খেতে বা পান করতে চায় তা পরিমিত মাত্রায় দেয়া হ্যানিম্যান সমর্থন করেছেন। তাতে আরোগ্যের ক্ষেত্রে যদি কিছু বাঁধাও আসে, রোগী অন্তরের পরিতৃপ্তি এবং হোমিও ঔষধের আরোগ্য দায়িণী অমোঘ শক্তি দ্বারা সে বাঁধা অতিক্রান্ত হয়। তবে এ সব অস্বাভাবিক আকাঙ্খা বিরল। কারণ দেখা যায় একোনাইটের রোগীর অদম্য পিপাসা শুদ্ধ পানির জন্য। এসিড ধর্মী পানীয় গ্রহণ করলে একোনাইটের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে বলে এরূপ পানীয়ের প্রতি আকাঙ্খা খুব একটা দেখা যায়না।
তাছাড়া রোগীর ঠান্ডা অথবা গরম ভালো লাগে, তা বিচার করে বিছানা, ঘরের উষ্ণতা , ঠান্ডা কিংবা গরম প্রয়োগ প্রভৃতি ব্যবস্থা করা কর্তব্য। বাঁধাধরা নিয়মে রোগীর উপর গরম বা ঠান্ডা প্রয়োগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতির বিরুদ্ধ।
সে সঙ্গে রোগীর চিত্ত যাতে প্রশান্ত ও প্রসন্ন সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে বোনিংহোসেন ১৮৩৩ সালে সাধারণের অবগতির জন্য যে মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশ করেন তার মর্মকথা এখানে উল্লেখযোগ্য।–
প্রোত্যেকটি খাদ্য সামগ্রী ভেষজবিহীন হওয়া কর্তব্য। কেননা তা দেহাভ্যন্তরে পরিবর্তন আনয়ন করে স্বল্পকালের জন্য হলেও সুস্থ ব্যক্তিকে অল্পাধিক পীড়িত করে। অনেক ভেষজধর্মী বস্তু আছে যা দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহার করলে জীবনীশক্তির তৎদ্বারা প্রভাবান্বিত হবার প্রবণতা কমে যায়, সেজন্য সেগুলোর দ্বারা আর কাজ পাওয়া যায় না, কিন্তু অভিজ্ঞতার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে শক্তিকরণ (Dynamisation) দ্বারা ঔষধের ক্ষমতা অতিন্দ্রীয়ভাবে এতো তীব্র করা যায় যে তাকে কোনো স্থূলজড়ীর প্রভাব প্রতিহত করতে পারেনা। সেজন্য খাদ্য সম্বন্ধে কিছু পরিমাণ শিথিলতা সমর্থনীয়। ক্রণিক রোগের ক্ষেত্রে সব ধরনের ভেষজ ছাড়াও কফি ও কড়া চা, উত্তেজক পানীয়, মসলাদি ও কড়া গন্ধ, বিশেষতঃ কর্পূর বর্জনীয়।
লেখক -
ডা. এ.বি.এম শহীদুল্লাহ্
ডিএইচএমএস(বিএইচবি-ঢাকা)
ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথ
চেম্বারঃ- ওহি হোমিও কেয়ার
১৪৭ পূর্ব আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা।
(চালবান ভাই ভাই মার্কেট গলি দিয়ে ভিতরে ডুকে মুন্সিবাড়ি মোড়)