অর্গানন আসলে কার ! শততমিক নাকি ৫০ সহস্রতমিকদের ?

অর্গাননের নিয়মকানুন কি শুধু কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতির জন্যে, না শততমিক ও ৫০ সহস্রতমিকের উভয়ের বেলায়ও একই? 

বড়ো জানতে ইচ্ছে করে, খু-য়ূ-য়ূ-ব জানতে ইচ্ছে করে–

আমি জিততে আসিনি, যুক্তি দিয়ে ও নিজের প্রাকটিস জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বহু পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসা বিষয়ে যে সত্যিটা আমার চোখে ধরা পড়েছে তা তুলে ধরছি এবং আমার এ বিষয়টি আমাকে যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁদের কাছেও সত্যি প্রমানিত হলে– আজ সবার জন্যে শেয়ার করছি। আপনাদের যাঁর যাঁর অভিজ্ঞতা দ্বারা যেমন পেয়েছেন, সেখানে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমি চিকিৎসার স্বার্থেই আমার বিষয়টি শেয়ার করলাম। আর এ বিষয়টি হলো ৫০ সহস্রতমিক ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কে। 

কেউ কি বলতে পারেন যে, অর্গাননে যে বিষয়াদি বর্ণনা করা হয়েছে তা কেবল শততমিকের বেল য়ই প্রযোজ্য? ৫০ সহস্রতমিকের বেলায় কি খাটবে না? আমি তো জানি যে, অর্গাননের নিয়মকানুন কোনো নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতির বেলাই কেবল প্রযোজ্য নয়। 

শততমিকের বেলায়ও যা, ৫০ সহস্রতমিকের বেলায়ও তা। সব পদ্ধতির জন্যেই তো সমান প্রযোজ্য। 

সুতরাং আমরা কেউ যদি এখানে প্রশ্ন তুলি যে, না! ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে ঔষধ প্রতিদিনই প্রয়োগ করে যেতে হবে, এতে করে দ্রুত জীবনীশক্তি উজ্জীবিত হয়ে সহজে রোগীর আরোগ্য এনে দেবে। এমন কথা যদি হ্যানিম্যান বলেও গিয়ে থাকেন এবং আমরা যদি পরবর্তী জীবনে এসে এর কিছু ব্যতিক্রম পেয়ে প্রতিদিন রোগীকে ঔষধ প্রয়োগ না করে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণর মাধ্যমে প্রয়োজনে পুনঃ প্রয়োগ, প্রয়োজন না হলে ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ রাখি, তবে কি দোষণীয় হবে? 

হ্যানিম্যান বলে গেছেন ভালো কথা, না মানারও কিছু নেই, কিন্তু আমি যদি গ্যাপ দিয়ে দিয়ে উপকার পাই, তাহলে হ্যানিম্যান বেঁচে থাকলে কি রাগ করতেন? আমাকে রোগী চিকিৎসা করতে গিয়ে শুধু অর্গাননের খন্ড বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলেই কি হবে? অর্গাননে তো এ-ও বলা হয়েছে যে, ঔষধ যখন মানবদেহে বা রোগীতে কাজ করা শুরু করে দেবে তখন ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে, নইলে পরবর্তী ডোজ প্রয়োগ করলে পূর্ববর্তী ডোজ গুলোর ক্রিয়াও নষ্ট হয়ে যাবে! 

তাহলে কেন আমরা শততমিক ও ৫০ সহস্রতমিকের চিকিৎসার মধ্যে ব্যবধান তৈরী করবো? রোগী তো কোনো একক পদ্ধতির অধীন হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে না। আজ আমি এ বিষয়ে আমার এক চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো। 

আমি এ নিয়ে অনেক আগেই পোস্ট দিয়েছিলাম; বিষয়টি ছিলো– আমার চিকিৎসার প্রথম জীবনে ২০/২২ বৎসর হয়ে যাবে হয়তো, আমি একবার এক ১০/১১ বৎসরের ছেলেকে তাঁর ইকথাইসিস রোগের জন্যে স্কিন স্পেশালিষ্ট দেখিয়ে মলম ব্যবহার করার পর যখন তাঁর মা-বাবা দেখলেন, ছেলেটির আরেকটি নতুন রোগ হাঁপানি এসে যোগ দিয়েছে, তখন তাঁরা আমার কাছে চিকিৎসার জন্যে আসেন। 

আমি ঐ ছেলেটির সদৃশ অনুযায়ী হাঁপানি রোগের জন্যে যখন গ্র্যাফাইটিস প্রয়োগ করলাম তখন হা্ঁপানির কিছুটা বৃদ্ধি দেখা দিয়ে ২ দিন পর কমে যায় এবং পূঁজ জাতীয় চর্মপীড়া বের হয়; কিন্তু হাঁপানি আর ফিরে আসেনি। যদিও ইকথাইসিস রোগ আরোগ্য হয় না, তবুও তো ঐ ছেলেটিকে হাঁপানির কষ্ট থেকে আল্লাহ্ চাহেন তো রক্ষা করতে হবে, তাই না? আমি তখন ঐ চর্মপীড়া আরোগ্যের জন্যে প্রতিদিনই গ্র্যাফাইটিসই চালিয়ে যাই, কিন্তু চর্মপীড়া যতোটুকুই ভালো হয়, যেনো এর সমান আরও বের হয়। আমার ঔষধ প্রয়োগও এ ভাবেই প্রতিদিন চললো। 

আমি গ্র্যাফাটিস ০/৩৫ পর্যন্ত উঠেছিলাম। তবে, এর মাঝে আবার আরেকটি জটিল অবস্থা এসে দেখা দিয়েছিলো; আর সেটি হলো– ঐ ছেলেটির ঔষধ কয়েকদিন গ্যাপ পড়ায় তাঁর প্রস্রাব কমে গিয়ে জ্বর সহ নেফ্রাইটিস দেখা দিয়েছিলো, তখন গ্র্যাফাইটিস ০/২৪ চলছিলো। আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম! আকাশ-কুসুম ভেবে হলাম সারা। কি করি? তখন এতো অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়নি, চিকিৎসা পেশার প্রথম সময়। বেশ ভাবনাতেই পড়েছিলাম। 

অবশেষে নিজেই স্থির করলাম, এ ঔষধে যখন এতোদিন কোনো খারাপ লক্ষণ আসেনি এবং হাঁপানিও যখন সম্পূর্ণ সেরে গেছে, তবে না হয় গ্র্যাফাইটিসই আরও উচ্চশক্তি প্রয়োগ করি। অবশেষে তাই করলাম, গ্র্যাফাইটিস ০/২৫ প্রয়োগ করতেই ঐ দিনই প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে জ্বর কমে গেলো, শরীরের ফোলা ভাবও কমতে লাগলো এবং ঐদিনই তখন আমার মনে একটি বিষয় নাড়া দিলো যে, আমি গ্র্যাফাইটিস এতো উচ্চশক্তিতে আসার পরও কেন এমন হলো? যে ঔষধ এতোদিন পর্যন্ত চলে আসলো, মাত্র কয়েকদিন বন্ধ থাকায় এতো জটিল অবস্থা চলে আসলো। 

অবশ্য এটা ঠিক পুঁজ জাতীয় চর্মপীড়া ঔষধ শূণ্য অবস্থায় থাকলে নেফ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে আমি অল্প কয়েকদিন ঔষধ বন্ধ থাকায় এতো বড়ো জটিল অবস্থা দেখা দেওয়াটা মেনে নিতে পারিনি। 

অথচ তা হলেও, ঐ ঔষধই আরও উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করে রোগীকে জটিল অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিলো। আর তখন আমার এটাও মনে হয়েছিলো যে, এভাবে প্রতিদিন ঔষধ প্রয়োগ করে যাওয়ায় হয়তো জীবনীশক্তি ঔষধের প্রতি তার সকীয়তা হারিয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছিলো, যেজন্যে ঔষধ ও জীবনীশক্তির মাঝে সমতা রক্ষা হয়নি। 

দুঃশসনে ও জবরদস্তি মূলক আচরণ দ্বারা একটি ভৃত্যকে খাটালে, সে যেমন খুশী মনে কোনো কাজই করেনা, এখানেও ঠিক তাই– জীবনীশক্তিও যেনো ঔষধের দ্বারাই অত্যাচারিত হয়ে নিজের শক্তিটুকু কাজে লাগাতে সুযোগ করে উঠতে পারেনি, যেজন্যে গ্র্যাফাইটিস এতো উচ্চশক্তি পর্যন্ত উঠতে হয়েছিলো। পরে যা হলো সবই আল্লাহ্‌র রহমত। 

এখন কথা হলো যে, ঐ সময় যদি আমি প্রতিদিন ঔষধ প্রয়োগ না করে অনেক গ্যাপ দিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাঝে ঔষধ প্রয়োগ করে যেতাম, তাহলে হয়তো ঐ ছেলেটির গ্র্যাফাইটিস ০/৫,৬ এর বেশী ঔষধ লাগতোনা। কেননা, গ্যাপ দিয়ে ঔষধ প্রয়োগ করলে জীবনীশক্তিও তার শক্তিটুকুর বিকাশ ঘটাতে সুযোগ পেতো। সুতরাং এখান থেকে আমি যে শিক্ষা পেয়েছিলাম, তাতে মনে হয়েছে, ঔষধ জীবনীশক্তিকে দম নিতে দেয়নি, শুধু প্রেসারের মাঝেই রেখেছিলো, ফলে রোগীর আরোগ্য হতেও সময় লেগেছে ২৪৫ দিন। কষ্টও সহ্য করতে হয়েছে রোগীকে অনেক। কিন্তু এখন আমি বহু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ঔষধ প্রয়োগ করায় সুফল বিনে কোনো জটিল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় না। এখন আমি এক-দুই ডোজ ঔষধ প্রয়োগ করে ৪/৫ দিন অপেক্ষা করে ঔষধের কাজ করা শুরু হতে দেখলে ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ রাখি এবং যতোদিন ঔষধের কাজ চলতে থাকে ততোদিন একটি মাত্রাও পুনঃ প্রয়োগ করিনা। 

প্রয়োজন হলে পুনঃ প্রয়োগ বা ঔষধ পরিবর্ত, যখন যা দরকার তাই করি এবং এভাবে আমি অনেক জটিল রোগীদের বেলায়ও দেখেছি ২/৩ ডোজে রোগীর অনেক উপকার হতে এবং ঔষধও অনেকদিন কাজ করে যেতে। যেখানে অর্গাননে বলা হয়েছে, রোগীকে খুব অল্প সময়ে, বিনা কষ্টে ও সহজবোধ্য নীতিতে আরোগ্য করতে হবে, তবে এখানে আমার ঐ ছেলেটির বেলায় কি তা বর্তমান ছিলো? ছিলোনা। 

সুতরাং এরপর থেকেই যেকোনো রোগে আমি ঔষধ প্রয়োগ কৌশল বদলে ফেলি। আশাকরি আমার এ পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগ কখনোই অর্গাননের নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।

লেখক :

ডা. এ.বি.এম শহীদুল্লাহ্ 

ডিএইচএমএস (বিএইচবি-ঢাকা)

ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথ

 চেম্বারঃ- ওহি হোমিও কেয়ার 

১৭৪ পূর্ব আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা। 

(চালাবন ভাই ভাই মার্কেটের গলি দিয়ে ভেতরে ঢুকে মুন্সীবাড়ী মোড়)

Next Post Previous Post