হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনে কোনটি বেশি গুরুত্ব বহন করে : দেহ নাকি মন

 প্রচলিত চিকিৎসা ধারা থেকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকের চিকিৎসা ধারা হোমিওপ্যাথি। পথ চলার শুরু থেকেই হোমিওপ্যাথি আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। হোমিওপ্যাথির জনক স্যামুয়েল  হ্যানিম্যান প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের  একজন বড় চিকিৎসক হয়েও ওই ধারার সমালোচনায় মেতে ওঠে শেষ পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবতারণা করলেন। 

আধুনিক  চিকিৎসা বিজ্ঞানের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হ্যানিম্যান ওষুধজ পদার্থকে এমন সূক্ষ্ম পর্যায়ে নিয়ে গেলেন যা পদার্থ বিজ্ঞান কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।

থেমে নেই হ্যানিম্যান, প্রায়োগিক বিজ্ঞান রীতিতে মানব দেহের উপর পদার্থের অস্তিত্বহীন  ওষুধ পরীক্ষণ শুরু করে দিলেন। একটি ওষুধ একাধিক ব্যক্তির উপর পরীক্ষণের পরেও একই ফলাফল আসার কারণে এই প্রায়োগিক বিজ্ঞানকে হোমিওপ্যাথি ওষুধ পরীক্ষণ নীতি হিসেবে গ্রহণ করিলেন। সুস্থ মানব দেহের উপরে পরীক্ষা কার্য পরিচালনা করার কারণে দৈহিক লক্ষণ রাজির পাশাপাশি মানসিক লক্ষণ গুলি ও প্রকাশ  করতে থাকে পরীক্ষকগণ। যা ইতিপূর্বে প্রচলিত চিকিৎসা ধারায় কখনো করা হয় নাই। পরীক্ষকদের নিকট থেকে সংগৃহীত দৈহিক এবং মানসিক লক্ষণ গুলো  বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে দৈহিক লক্ষণের  চাইতে মানসিক লক্ষণ এর উপর নির্ভর করে ওষুধ নির্বাচন করলে দ্রুত এবং স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ  করছে। তাই হ্যানিম্যান দৈহিক লক্ষণ এর চাইতে মানসিক  লক্ষণ কে অধিক  গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবেগ আনন্দ ভীতি এবং ক্রোধ এই সমস্ত বিষয়গুলি মানবদেহে স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের অবতারণা করে বলে স্বীকার করেছেন। আবেগ আনন্দ  এবং ক্রোধ জনিত কারণে  স্নায়ুমণ্ডলী স্বয়ংক্রিয়ভাবে  তাদের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে চলে। আবেগের সময় সিমপ্যাথেটিক  স্নায়ুমণ্ডলীর উত্তেজনার ফলে রাসায়নিক  পরিবর্তন ও সাধিত হয়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে ওঠে রক্তে হরমোনের পরিমাণ এর তারতম্য ঘটে ।  ফলশ্রুতিতে শরীরের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রের ক্রিয়া  বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়,  হৃদপিণ্ডকে  উত্তেজিত করে প্রান্তীয় রক্তনালী সমূহ  সংকুচিত হয়ে রক্তচাপ অস্বাভাবিক হয়। 

Ax(1953)  একটি পরীক্ষণে দেখা গিয়েছে যে তীব্র ভয়ে  নাড়ির স্পন্দন ও ঘর্ম  নিঃসরণ ক্রোধের  তুলনায় বেশি হয়। ক্রোধ ও ভয়ে রক্তচাপের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। 

অন্য একটি গবেষণায় কিছু সংখ্যক মেডিকেল ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিল।   তাদের বহির্মুখী  ক্রোধ এবং অন্তর্মুখী ক্রোধ এবং উদ্বেগ  সৃষ্টি করা হয়েছিল। 

বহির্মুখী ক্রোধে  একটি ছাত্রকে পরীক্ষকের  প্রতি ক্রুদ্ধ করে তোলা হয়। অন্তর্মুখী ক্রোধে  ছাত্র নিজের প্রতি ক্রুদ্ধ ও বিরক্তি বোধ করত। বিদ্যুৎ আঘাত দিয়ে  উদ্বেগের অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এসব অনুভূতি ছাত্রদের  মৌখিক বিবরণ থেকে জানা গিয়েছিল। পরীক্ষণ এর পর শারীরিক পরিবর্তনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ছাত্রদের দেওয়া বিবরণের সঙ্গে সামঞ্জস্য  পাওয়া গিয়েছিল। 

অতএব শুধু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নয় আধুনিক ধারার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ও আবেগ  আনন্দ ক্ষোভ ও  হতাশা জনিত মানবদেহের দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন  লক্ষ করেছেন। অতএব হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগের কারণ উন্মোচনের জন্য  আবেগ আনন্দ ক্রোধ ক্ষোভ হতাশা ও মানসিক লক্ষণ রাজির ভিত্তিতে ওষুধ  নির্বাচন করে বিচক্ষণতার  পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। 

শুভেচ্ছান্তে-

ডা. এম মোহসীন চৌধুরী 

হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কনসালটেন্ট

সোনাগাজী, ফেনী। 

Next Post Previous Post