চিকিৎসা সেবা’য় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দুনিয়ার বুকে আগমন করেছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেখানোর জন্য ও ঘুনে ধরা সমাজকে একটি আদর্শ সমাজে রুপান্তরিত করার জন্য। বাস্তবিক পক্ষে বিশ্বনবী (সাঃ) ছিলেন মানবতার জন্য উত্তম আদর্শ। 

যেমনটি কুরআন পাকে এরশাদ হয়েছে,মহান আল্লাহ বলেন,"নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ'' (সূরা আহযাব, আয়াত: ২১)। 

সুতরাং যেকেউ বিশ্বনবীর (সাঃ) আদর্শ গ্রহন করবেন,অনুশীলন করবেন তিনি অবশ্যই আলোকিত মানুষে পরিনত হবেন,আদর্শবান মানুষ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করবেন।

চিকিৎসা নীতিতে বিশ্বনবী সাঃ ছিলেন একজন অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি যে নীতিমালা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন বা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ, বিশেষ করে চিকিৎসক সমাজের জন্য মডেল। 

বস্তুত বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ সাঃ এর আদর্শ বা নীতিমালা মানেই হলো ইসলামী আদর্শ বা ইসলামী নীতিমালা। যদিও তা সংক্ষেপে তুলে ধরা খুবই কঠিন, তবুও কিছু বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো-

বিশ্বনবী সাঃ এর চিকিৎসা নীতিমালা-

১। চিকিৎসা বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান অর্জনঃ

বিশ্বনবী সাঃ এর জিবনী এবং হাদিস সমুহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি উম্মাহ কে দারুণভাবে চিকিৎসা বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান সমুহ অর্জন্য জন্য উৎসাহিত করেছেন,নিজে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন।যেমন,রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, “ছত্রাক হলো ‘মান্না’ নামক আসমানি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং তার পানি চক্ষুরোগের নিরাময়। ‘আজওয়া’ হলো জান্নাতের খেজুর এবং তা উন্মাদনার প্রতিষেধক’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৪৫৩ )।

ঠিক তেমনি ভাবে মধু, কালোজিরার ব্যবহার সম্পর্কে তিনি সবাইকে সচেতন করতে।মহামারী সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন সহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জনে মহানবী জনসাধারণকে ব্যপকভাবে উৎসাহ দিতেন।

ইমাম আবু হানিফা রহঃ প্রায়শই বলতেন, আমার কাছে দুইটি জ্ঞান অর্জন খুবই প্রিয়, এক ইলমে ফিকাহ তথা আইন বিষয়ক জ্ঞান, দুই ইলমে ত্বিব্ব তথা চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান।

২। চিকিৎসা বিষয়ক উচ্চতর জ্ঞান অর্জনে উৎসাহঃ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চতর জ্ঞান অর্জনে মহানবী সাঃ ব্যপকভাবে উৎসাহ দিতেন। 

হযরত উম্মু ‘আতিয়্যাহ্‌ আন্‌সারীয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁদের শিবিরের পশ্চাতে অবস্থান করতাম, তাদের খাবার তৈরী করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম, এবং রোগীদের সেবাশুশ্রূষা করতাম। -মুসলিম হাদিস নং -৪৫৮৪

চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞান ছিলো বলেই উম্ম আতিয়্যাহ রাঃ যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা দিতেন।

আমর ইব্‌ন শু‘আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকের চিকিৎসা করে, অথচ সে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত নয়(উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হওয়া), সে (রোগীর জন্য) দায়ী থাকবে। সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৮৩০

এই হাদিসে চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্ঞান অর্জন এবং প্রশিক্ষণের দিকে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে, অল্প শিক্ষা নিয়ে কারো চিকিৎসা করার ফলে যদি রোগীর কোন ক্ষতি হয় সেই দায়ভার উক্ত নামধারী চিকিৎসক কেই বহন করতে হবে মর্মে সাবধান করা হয়েছে। হাদিসে চিকিৎসকের উচ্চতর প্রশিক্ষনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

হাফেজে কুরআন ইবনে সিনাকে (রহঃ) বলাহয় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক, তিনি সার্জারী পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন, যে সকল রুগীকে সত্যিই সার্জারী করতে হবে তিনি সেসকল রুগীকে সার্জারীর মাধ্যমে চিকিৎসা দিতেন। প্রাথমিকভাবে ততকালীন আলিমগনের একাংশ ইবনে সিনাকে কাফের ফতোয়া দিলেও পরবর্তীতে তাকে সেই আলিমগনের পক্ষ থেকেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো।  

এভাবে ইসলামের হাত ধরেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্বান উন্মোচিত হয়েছে।

৩। রোগীকে নিজে দেখতে যাওয়াঃ 

বর্তমান সময়ে আমাদের চেম্বারে রোগী কস্ট করে আসেন, আমরা চিকিৎসকগণ সেবাই দিয়ে থাকি। কিন্তু বিশ্বনবী সাঃ সেবার এই কাজকে ব্যপকভাবে সমাজে ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ প্রদান করেছেন।চেম্বারের পাশাপাশি রোগীকে দেখতে তার বাসায় যাওয়া এবং খোজ খবর নেয়া এটা নববী আদর্শ।

মহানবী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন তুমি কোন রোগী দেখতে যাবে,তাকে তোমার জন্য দোয়া করতে বলবে।কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার ন্যায়"(সুবহানাল্লাহ)। -ইবনে মাজাহ 

বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিশ্বনবী নিজে রোগীর পরিচর্যা করতেন,রোগীর পাশে গিয়ে তার সুস্থতা বিষয়ে অভয় দিতেন,এতে রোগী অর্ধেক সুস্থ্য হয়ে যেত।চিকিৎসা নীতিমালায় এটি এক বিরাট গুরুত্ব বহন করে।

৪। খাবারের বিষয়ে সচেতনতা :

বিশ্বনবী সাঃ খাবার গ্রহনের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন।পাওয়া মাত্রই উদরপূর্তি করে খাওয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ মোটেও পছন্দ করতেন না।

হযরত ইবনু ‘উমার (রাঃ) সনদ থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কাফির লোক সাত আঁতে খায় আর মু’মিন খায় এক আঁতে।

অর্থাৎ মু’মিন আল্লাহর নাম নিয়ে খায়, এতে তার খাবারে বারাকাত হয়এবং অল্প খাবারই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায় কিন্তু কাফিরের অবস্থার বিপরীত তার খাবারে বারাকাত হয় না সে অনেক খাবার খায় তাও তার তৃপ্তি হয় না। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২৬৭

৫। কোন খাবার পছন্দ না হলে খাওয়া উচিত নয়:

হযরত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার খালা উম্মু হুফায়দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে কিছু ঘি, পনির এবং কয়েকটি গুইসাপ হাদিয়া স্বরূপ পাঠালেন। তিনি ঘি ও পনির থেকে কিছু খেলেন এবং গুইসাপ নোংরা হওয়ার দরুন খাওয়া বর্জন করলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দস্তরখানে তা খাওয়া হয়। তা হারাম হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দস্তরখানে তা খাওয়া হতো না।সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৯৩৩

এই সহিহ হাদিস বলছে যে, গুইসাপ(বিশেষ প্রানী আরবের মরুতে পাওয়া যায়) হালাল হওয়া সত্বেও বিশ্বনবীর (সাঃ) পছন্দমতো না হওয়ায় তিনি স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে বর্জন করতেন।

মানুষ খাবারের বিষয়ে সচেতন হলে অনেক রোগ থেকে বেচে থাকতে পারতো। প্রায় ১৬ প্রকারের অসুস্থতা যার মুলে রয়েছে খাদ্যাভ্যাস।

৬। ধৈর্যহারা না হওয়া, রাগকে নিয়ন্ত্রণ করাঃ

ধৈর্য সফলতার চাবিকাঠি, রাগ ধ্বংসের চাবিকাঠি। ধৈর্য আসে আল্লাহর পক্ষথেকে, রাগ আসে শয়তানের পক্ষথেকে। রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী মানুষের পরিচয়। রাসুলুল্লাহ সাঃ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

বিশ্বনবী সাঃ বলেন,"যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)।রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাগ একটি ফ্যাক্টর, ধৈর্যশীল মানুষ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৭। দুঃশ্চিন্তা এবং হতাশা মুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়াঃ

দুঃশ্চিতা আর হতাশাগ্রস্ত মানুষ মানুষিক রোগাক্রান্ত হতে পারেন। 

হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি যেন তাদের অপর (তৃতীয়) সঙ্গীকে (একা) রেখে চুপি চুপি কথা না বলে। কারন তা তাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে পারে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৫১

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃশ্চিন্তা ও পেরেশানির সময় এ বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। তাহলো-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

৮। অল্পে তুষ্ট থাকা, হীনমন্যতা বর্জন এবং নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত হওয়াঃ

একজন মানুষ যদি নিকে সুস্থ্য রাখতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই অল্পে তুষ্ঠ থাকার,হীনমন্যতা পরিহার করার এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্বাস্থ্য নীতিতে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে।নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ "হে আবূ হুরায়রাহ! তুমি আল্লাহভীরু হয়ে যাও, তাহলে লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হতে পারবে। তুমি অল্পে তুষ্ট থাকো, তাহলে লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম কৃতজ্ঞ হতে পারবে। তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো, অন্যদের জন্যও তাই পছন্দ করবে, তাহলে পূর্ণ মুমিন হতে পারবে। তোমার প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারী ও দয়াপরবশ হও, তাহলে মুসলমান হতে পারবে। তোমার হাসি কমাও, কেননা অধিক হাসি অন্তরাত্নাকে ধ্বংস করে।তিরমিযী ২৩০৫।সহীহাহ ৫০৬, ৯২৭, ২০৪৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২১৭

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পান করতেন তখন তিনবার শ্বাস নিতেন এবং বলতেন, তা অধিক স্বাস্থ্যকর ও তৃপ্তিদানে অধিকতর সহায়ক।সহীহ মুসলিম, হা/৫৪০৫; সহীহ বুখারী, হা/২৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৯৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৫৩২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭২০৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১১৯৷শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ১৫৬

৯। অশ্লীলতা বর্জন এবং ইবাদাতে একনিষ্ঠতা অর্জন, অলসতা পরিত্যাগ করাঃ

একজন ইমানদার ব্যক্তি যেমন অশ্লীলতা পরিহার করবে ঈমানের দাবীতে ঠিক তেমনি ভাবে সে উপকৃত হবে ভালো স্বাস্থ্যের দিক থেকে।অশ্লীলতার কারনে অধিক পরিমানে যৌন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।বেহায়াপনার পরিনতি কখনোই ভালো হতে পারেনা।এজন্য অশ্লীলতা পরিহার করা প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। নিজের জীবনকে অশ্লীলতা মুক্ত ভাবে গঠন করতে চাইলে প্রয়োজন আল্লাহ ভীরুতা দরকার ইবাদতে একাগ্রতা এবং অলসতা পরিহার।হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা অবশ্যই যুলুম করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। তোমরা অবশ্যই অশ্লীলতা বর্জন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলভাষী ও অশ্লীলতার প্রসারকারীকে পছন্দ করেন না। তোমরা অবশ্যই কৃপণতা পরিহার করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে এবং হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে।-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৪৮৯

১০। ঝারফুক এবং তাবিজ কবজ থেকে বিরত থাকা, সর্বদা আল্লাহর উপরে ভরসা করাঃ 

রোগে শোকে সর্বদা আল্লাহর উপরেই ভরসা করতে হবে।কারন যারা আল্লাহর উপরে ভরসা করেন আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন,পছন্দ করেন।একজন রোগাক্রান্ত মানুষ আল্লাহর উপরে ভরসা করবে এটাই কর্তব্য। এটি তাকে মানুষিক প্রশান্তি দিবে,দেহ মনকে সতেজ রাখবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।রাসুলুল্লাহ সাঃ সর্বদা আল্লাহর উপরে একাগ্রচিত্তে ভরসা করতেন,আল্লাহর উপরে ভরসা করতে তাগিদ দিতেন,কারন সবকিছু আল্লাহর পক্ষথেকেই আসে,সকল রোগ আল্লাহই সুস্থ্য করার ক্ষমতা রাখেন,তিনি শক্তি ও করুনার আধার। 

হযরত মুগীরাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তপ্ত লোহা দ্বারা (দেহে) দাগ নেয় বা ঝাড়ফুঁক গ্রহণ করে সে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা) থেকে বিচ্যুত হলো।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৪৮৯

হযরত ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “(হজ্জের মৌসুমে সকল উম্মত আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, ফলে আমি আমার উম্মত দেখেছি, তাদের আধিক্য ও হালত আমাকে খুশি করেছে, তারা সমতল ও পাহাড় সর্বত্র পূর্ণ ছিল। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ তুমি কি সন্তুষ্ট হয়েছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে রব। তিনি বললেনঃ তাদের সাথে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে, যারা ঝাঁড়-ফুঁক চায় না, জ্বলন্ত লোহার সেক দেয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করে না এবং অশুভ লক্ষণ নেয় না, বরং তারা তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে। উক্কাশা বলেনঃ দো‘আ করেন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন”। অতঃপর অপর ব্যক্তি বলেঃ আমার জন্য দো‘আ করুন যেন আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন, তিনি বলেনঃ “উক্কাশা তোমাকে অতিক্রম করে গেছে”। [আহমদ, ইব্‌ন হিব্বান] সহিহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নং ৯৫

সন্মানিত পাঠক, আমরা বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ সাঃ এর চিকিৎসা নীতি সম্পর্কে অবগত হলাম। আরো বিশদভাবে আলোচনা ব্যতিরেকে কখনোই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই আলোচনা সমাপ্ত করা খুবই কঠিন এবং অপুর্নাজ্ঞ থেকেই যায়।আমরা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনকে আদর্শ মডেল হিসেবে গ্রহন করবো সেই প্রত্যাশা আজকে এখানেই সমাপ্তি টানছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন

লেখক :

ডা. মোঃ আহসান হাবীব 

বি.এইচ.এম.এস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

Next Post Previous Post