হোমিওপ্যাথি’র ইতিকথা

 আমরা মানুষ, আমরা সবসময়  সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করি। কখনও কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ একা বসবাস করতে এবং একা চলতে পারেন না। মানুষ সামাজিক জীব, সামজিক ভাবেই  মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্থ। সামাজিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সুসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থা। 

আমাদের উদ্যম, উদ্যোগ কোন না কোন ধরনের সাংগঠনিক পরিবেশের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, কর্মজীবন, শিক্ষা, বানিজ্য, পেশা, বিনোদন ইত্যাদি সাংগঠনিক পরিবেশের মধ্যেই আববর্তিত।

যদি তাই হয়,  তাহলে আমরা হোমিওপ্যাথ ছাত্র, চিকিৎসক, বা শিক্ষক কেহ কি সংগঠনের বাহিরে?  আসলে কেহই সংগঠনের বাহিরে নই। প্রত্যক্ষ বা  পরোক্ষ ভাবে কোন না কোন সংগঠনের সঙ্গে আমরা জড়িত।  শুধু কি তাই...? আমাদের হোমিওপ্যাথিতে তো গড়ে উঠেছে নামে বে-নামে অনেক সংগঠন। এসব সংগঠনে সাংগঠনিক পর্যায়ে মানবিক আচার-আচরণ অনুধাবন করার ও কোন বিকল্প নাই। 

অনেকেই 'Organizing' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে সংগঠন শব্দ ব্যবহার করেন। ব্যাকরণীয় দৃষ্টিতে প্রকৃতপক্ষে এর প্রতিশব্দ 'সংগঠিতকরণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। 'Organization' অর্থ সংগঠন। সংগঠন সংগঠিতকরণ শব্দ দু'টি এ ক্ষেত্রে একই অর্থে ব্যবহার করতে পারি।  একথায় সংগঠিত ভাবে একত্রিত হওয়াই সংগঠন।  সমাজ বিজ্ঞানীরা ভিন্নভাবে সংগঠনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কেউ কেউ সংগঠনকে একটি সমাজিক একক (Social Unit) আবার কেহ একে সামাজিক ব্যবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এ বিষয়ে এখানে আর বিস্তারিত আলোচনা না করি। ( আমার পূর্বের লেখা ''সুসংগঠিত সংগঠনের বিকল্প নেই'' পড়ে নিতে পারেন)

আসুন আমরা আর একটু পিছনে যাই;

 ১৭৯০ (মতান্তর ১৭৯৬) খ্রিষ্টাব্দে বিশিষ্ট জার্মান চিকিৎসক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বর্তমান প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে হোমিওপ্যাথি হলো একটি আধুনিক সাদৃশ্য চিকিৎসা বিজ্ঞান। সেই সাথে আর্ত মানবতার সেবাই হোমিও একটি  নির্ভরযোগ্য ও সার্বজনীন সফল চিকিৎসা বিজ্ঞান হিসাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । আজ এ প্রতিষ্ঠার পিছনে হোমিওপ্যাথির জনক স্যার  হ্যানিম্যান সহ অনেক মনিষী মহারথীদের অবদান রয়েছে,  তাঁদের ত্যাগের ফসল এই হোমিওপ্যাথি তা ভুলবার নয়। 

হোমিওপ্যাথির আবিষ্কার জার্মানিতে হলেও সময়ের সাথে সাথে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।  সে ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ শাসিত  অখণ্ড ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথির সূচনা। কবে কোন সময় থেকে ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথি চর্চা শুরু হয় তার সঠিক তথ্য বলা মুশকিল। এ বিষয়ে সঠিক দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয় বলে অনেকের অভিমত। তবে এন.সি ঘোষ লিখিত  "Lite of Dr. MahendSircar Sircar" বইটিতে উল্লেখিত  "পুরনো পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায় যে ১৮১০ সালে জনৈক জার্মান ভূতত্ত্ববিদ- চিকিৎসক কলতাকাতায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন।" এ তথ্যের ভিত্তিতে ১৮১০ সাল কেই ভারত বর্ষে হোমিওপ্যাথির  সূচনা কাল হিসাবে গননা করা হয়। সেদিক থেকে বলা যায় ভারতেবর্ষে ১৮১০ সালের সূচনার মধ্য দিয়েই হোমিওপ্যাথির প্রথম পরিচয় ঘটে বাংলার বুকে। উল্লেখ্য একই বছর হ্যানিম্যানের ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।” তবে ঐতিহাসিকদের মতে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষে  হোমিওপ্যাথির পতাকা উত্তলন করেছিলেন মার্টিন হোনিগবার্গার (John Martin Honigberger, M. D.) । 

১৭৯৫ সালে ট্রানসিলভ্যানিয়ার ক্রোনস্টাড শহরে জন্মগ্রহণকারী  এ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ছিলেন ভ্রমণ পিপাসু, চিকিৎসা বিদ্যায় এম. ডি. ডিগ্রী প্রাপ্ত। ভ্রমণের নেশা থেকেই   এই চিকিৎসক বিশ বছর বয়সে ক্রোনস্টাড ত্যাগ করে কনস্তান্তিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল, তুরস্ক) এবং সেখান থেকে সিরিয়া, মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য সহ বহুদেশ ভ্রমণ করে বৃটিশ শাসিত ভারতে আসেন। এভাবে ভারত থেকে তিনি রাশিয়াতে যান এবং রাশিয়াতে ভ্রমণকালেই তিনি হ্যানিম্যান ও হোমিওপ্যাথির নাম প্রথম শোনেন। এবং জানতে পান ইতিমধ্যে হ্যানিম্যান জার্মানীর কোথেন ত্যাগ করে ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থান করছেন। 

হোনিগবার্গার হোনিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর এতোটা আগ্রহী ছিলেন যে হ্যানিম্যানের সাথে সাক্ষাৎ এর জন্য তিনি ফ্রান্সের প্যারিস এ আসেন। উল্লেখ্য,  এখানে হ্যানিম্যানের সাথে আলাপ করে হোনিগবার্গারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপর আরও আগ্রহ বেড়ে যায় এবং হ্যানিম্যানের নিকট হোমিওপ্যাথির শিক্ষা দীক্ষা গ্রহণ করেন। হ্যানিম্যানের পরামর্শে  ‘লেহমান কোম্পানী’ হতে প্রচুর ওষুধ ক্রয় করেন ও ভ্রমণকালে আর্তমানবতার সেবায় হোমিওপ্যাথি  চিকিৎসা প্রদান করতে থাকেন। 

ভ্রমণ পিয়াসী হোনিগবার্গার পরে পুনরায় কনস্তান্তিনোপল হয়ে লাহোরের মহারাজার দরবারে আসেন এবং স্ট্রোক আক্রান্ত মহারাজার চিকিৎসা করে আরোগ্য করতে সক্ষম হন। সেই সাথে ভারতবর্ষে বিভিন্ন  এলাকায় ভ্রমণের পাশাপাশি চিকিৎসা পেশাও তিনি চালিয়ে যান এবং ১৮৫৫ সালে কলকাতায় আসেন। পাঁচ বছর কলকাতায় ছিলেন। হোমিওপ্যাথি দ্বারা কলেরায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় তিনি সাফল্য দেখাতে সার্থক   হন। কলকাতায় তিনি ‘কলেরা ডাক্তার’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর এই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে কলকাতায় হোমিওপ্যাথির ব্যাপক প্রসার ঘটে। অনেকের মতে  হোনিগবার্গার অর্গানন অনুসারী আদর্শ হোমিওপ্যাথ না হলেও তাঁর মাধ্যমে ভারতবর্ষ তথা বাংলায় হোমিওপ্যাথির পতাকা উত্তলন ও ভিত্তি তৈরি হয়। 

অতীতে ভারতবর্ষে  কয়েকজন বিদেশী হোমিওপ্যাথ চিকিৎসায় তাঁদের প্রায় সবাই হোমিওপ্যাথিতে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।  

অবিভক্ত ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথি বিস্তারে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি  কলকাতার বউবাজারের প্রসিদ্ধ জমিদার, বাবু রাজেন্দ্রলাল দত্ত। হোমিওপ্যাথির প্রচার, প্রসার ও বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য সে আমলে তিনি সাত লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন।  রাজেন্দ্রলাল দত্ত ১৮৫১ সালে স্বদেশবাসীর জন্য কলকাতায় প্রথম হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

রাজেন্দ্রলাল দত্তের প্রচেষ্টায় হোমিওপ্যাথি সাদৃশ্য চিকিৎসা বিজ্ঞান এতোটা প্রচার ও সফলাতা অর্জন করেছিলেন যে তৎকালীন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যর্থ রোগীগন হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসায় আরোগ্যে লাভ করতে থাকেন। 

এক পর্যায়ে হোমিওপ্যাথির কড়া সমালোচক কলকাতার বিখ্যাত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার (এম. ডি) ১৮৬৫ সালের দিকে ডা. রাজেন্দ্রলাল দত্তের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে  অ্যালোপ্যাথি ত্যাগ করে হোমিওপ্যাথিতে আত্মনিয়োগ করেন। এশিয়া মহাদেশে সেই প্রথম একজন এম. ডি চিকিৎসক হলেন  হ্যানিম্যানের অনুসারী। যা হোমিওপ্যাথির জন্য বড় পাওয়া ছিলো। এতে করে রাজেন্দ্র বাবু ও মহেন্দ্রলালের যুগপৎ প্রচেষ্টায় হোমিওপ্যাথিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একসময়কার হোমিওপ্যাথির কড়া সমালোচক  ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার, তিনিই পরবর্তীতে  হোমিওপ্যাথিকে বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতে ১৮৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে হোমিওপ্যাথিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ‘The Calcutta Journal of Homoeopathy’, 

বৃটিশ শাসিত ভারবর্ষের রাজধানী কলকতা হওয়ায়  কলকাতা থেকে ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথির বিকাশ লাভ করে। 

১৮৭৬ সালের দিকে হোমিওপ্যাথির আরেক সেবক ডা. বসন্তকুমার বাংলাভাষায় একটি হোমিওপ্যাথিক জার্নাল প্রকাশ করেন- যা অবিভক্ত বাংলায় হোমিওপ্যাথির বিস্তারে বিশাল প্রভাব ফেলে।  

সে সময়ে ভারতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রসারে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যেমন- সর্ব ডাঃ লোকনাথ মৈত্র, বিহারীলাল ভাদুড়ী, ফাদার ম্যূলার, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, মোহিনীমোহন বসু, দীনবন্ধু মুখোপাধ্যায়, জগৎচন্দ্র রায়, দ্বারকানাথ রায়, বজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, ডবলু ইউনান, নগেন্দ্রনাথ মজুমদার, বিজয়চন্দ্র সিংহ, নীলমণি ঘটক, বারিদবরণ মুখার্জী, অবনীনাথ দাশগুপ্ত, বামাচরণ দাস, জিতেন্দ্রনাথ মজুমদার, দেবেন্দ্রনাথ প্রমুখ সহ আরো অনেকে। হোমিওপ্যাথির গুণমুগ্ধ হয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর হোমিওপ্যাথির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।  এছাড়াও হোমিওপ্যাথির গুণগ্রাহী ছিলেন সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মতিলাল নেহেরু, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখ রাষ্ট্রনায়ক ও শিক্ষাবিদগণ। অতিদ্রুত এ চিকিৎসায় সফলতায় ভারতবর্ষে  হোমিওপ্যাথি জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকায় অনেক অপেশাদার শিক্ষিত ব্যক্তিও এই শাস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তৎকালীন  শুধুমাত্র ইংরেজী জানা ব্যক্তিরাই হোমিওপ্যাথির চর্চা করতেন।

হোমিওপ্যাথিক একাডেমিক শিক্ষার কার্যক্রম ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ;

হোমিওপ্যাথির সফলতা অগ্রযাত্রায় সরকারী ভাবে স্বাস্থ্যখাতে   হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবায় সাহায্য   পাওয়ার পথ পরিস্কার  দেখে ডাঃ প্রতাপ চন্দ্র ও ডাঃ এম. এম. বসু কলকাতার আমহার্ট স্ট্রীটে ভারতের প্রথম হোমিওপ্যাথিক স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এদিকে  ডাঃ দ্বারকানাথ রায়ের সহযোগিতায় ১৮৮১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী তারিখে ‘ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তামানে পৃথিবীর বৃহত্তম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হিসাবে অন্যতম।  বিংশ শতাব্দির প্রথম কয়েক   ভারতীয় হোমিওপ্যাথির গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় যা এসব মহারথী হোমিওরত্নদের প্রচেষ্টা,  আন্দোলনের ফসল।  

ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ সহ হোমিওপ্যাথি শিক্ষা বিস্তারের জন্য কলকাতা শহরে স্থাপিত হয় আরও কয়েকটি কলেজ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডানহাম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ, অ্যালেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ,  হেরিং হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, আশুতোষ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, রেগুলার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, সেন্ট্রাল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, বেঙ্গল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ,  প্রভৃতি। 

এদিকে পূর্ব বাংলায় ডাঃ জাকির হোসেন চৌধুরী এবং সমাজ সেবক আব্দুল হক দোভাষের প্রচেষ্টায় ১৯৩৪ সালের ১লা মার্চ চট্রগামে প্যারাডাইজ হোমিওপ্যাথি কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।


হোমিওপ্যাথির রাস্ট্রীয় মূল্যায়ন ;

ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন বাংলার হোমিওপ্যাথি: 

চিকিৎসকগন ১৯৩৭ সালে কলকাতায় সভার আয়োজন করেন।  উক্ত সভার সভাপতি ছিলেন  বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের মাননীয় জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী তমিজউদ্দিন।  সভায় ‘স্টেট ফ্যাকাল্টি অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন’ গঠনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাব আইন সভায় পাশ হওয়া এবং সরকারের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় সে ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে মিয়া ঘিয়াসউদ্দীন  কেন্দ্রীয় আইন সভায়  ‘হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অব মেডিসিন’ উপস্থাপন করেন। এবং ৪৪-৩৬ ভোটে পাশ হয়। একই সময়ে ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব হোমিওপ্যাথিক এডুকেশন’ গঠিত হয়। 

বাংলার স্বাস্থ্য মন্ত্রী সৈয়দ নওশের আলী কর্তৃক ১৯৪৩ সালে  হোমিওপ্যাথিক বিল আইন সভায় পাশ হয়ে হোমিওপ্যাথি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হয়। পূর্ব বাংলা নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৪৮ সালে এই কলেজের নামকরণ করা হয় “ইষ্ট পাকিস্তান হোমিওপ্যাথিক কলেজ" 

 চৌধুরী আজিজউদ্দিন ১৯৬৪ সালে বিল তৈরী করলেও তা কোন কারনে হয়তো সংসদে উত্থাপিত  করতে পারেননি, পরে সৈয়দ মুরিদ হোসেন এম. এল. এ. সংসদে উত্থাপনায় ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইউনানী, আয়ুর্বেদী এবং হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিশনার এ্যাক্ট – ১৯৬৫ পাশ হয় এবং গঠন করা হয় "বোর্ড অব হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অব মেডিসিন-পাকিস্তান" বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) বিশিষ্ট হোমিওচিকিৎসক ডাঃ নূরুল ওহাব।

বোর্ডের সদর দপ্তর স্থাপিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক দপ্তর করা হয় ঢাকায়। এই বোর্ড প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই  পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে হোমিওপ্যাথির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।  বোর্ড ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত ৩০টি কলেজের মধ্যে মান যাচাই করে মাত্র ৫টি কলেজকে অনুমোদন দেয় এবং ৪ বছরের ডি. এইচ. এম. এস. (ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি) কোর্স চালু করে। ১৯৬৮ সালে নতুন হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কমিটি গঠিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা সর্বশেষ ১৯৭১ সালের মহান  স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বোর্ডের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে। ৭১ সালে মহান এ যুদ্ধে বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) হোমিওপ্যাথ ডাক্তাদের অংশগ্রহন প্রশংসনীয়। সশস্ত্র যুদ্ধ সহ মুক্তি যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক  চিকিৎসা সেবার অবদান ভুলবার নয়। 

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি :

১৯৭১ সাল দেশ স্বাধীন হয়। নতুন ভূখন্ড নতুন দেশ। আমাদের বাংলাদেশ। দেশ পৃথক হওয়ায় "বোর্ড অব হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অব মেডিসিন-পাকিস্তান" এর মতো বাংলাদেশে নিজস্ব  হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করা সময়ের দাবি হয়ে উঠে। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নির্দেশক্রমে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এক অর্ডিন্যান্স এর মাধ্যমে “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩” জারী করে। এই অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন ১৯৮৫ এর বিধি-বিধানের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।  বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কলেজ হতে ডিএইচএমএস সনদ নেওয়া  চিকিৎসকগণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বল্প ব্যয়ে জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। 

অ্যালোপ্যাথ বিপরীতে আমাদের দেশে চলমান যা পাকিস্তান আমল হতে প্রচলিত ডিএইচএমএস ডিগ্রি পরিপূর্ণ না। হোমিওপ্যাথির উন্নয়ন তথা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স এমবিবিএস মানের ডিগ্রি সময়ের দাবি বলে  স্বাধীন বাংলাদেশে ডি. এইচ. এম. এস. পাশ করা চিকিৎসকগন হোমিওপ্যাথিতে ব্যাচলর ডিগ্রীর আন্দোলন করেন।  ডিএইচএমএস চিকিৎসকদের আন্দোলনের ফসল আজকের বিএইচএমএস।  যা ১৯৮৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষ হতে এই  শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। 

ঢাকার মিরপুরস্থ “সরকারী হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রী কলেজ” এবং ঢাকার গুলিস্তানের সন্নিকটে টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ” এই উভয় কলেজ হতে বি. এইচ. এম. এস. পাশ করে বহু ছাত্র-ছাত্রী জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অর্জন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বি. এইচ. এম. এস. কোর্সকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান স্যারকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, ছাত্র ও পরবর্তী প্রজন্ম হোমিও  সমাজ চিরদিন  স্যারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয় করে রাখবেন ।

এছাড়াও  বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল উপাধ্যক্ষ ডাঃ মোহাম্মদ হোসেন ছিলেন বি. এইচ. এম. এস. কোর্স চালুকরণের প্রাণপুরুষ। বহু ত্যাগ, সংগ্রাম এবং দাবীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৯ সালে “সরকারী হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রী কলেজ” মিরপুরে প্রতিষ্ঠা। এর পরের ইতিহাস অনেকেরই অতি জানা। 

(আমি এখানে কোন ইতিহাস লেখছি না। একজন হোমিওপ্যাথিক সংগঠক হিসাবে  নিজেদের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য জানাটা জরুরী এ থেকেই ইতিহাসের সারমর্ম তুলে ধারার চেষ্টা করছি মাত্র)। 

অতীত হোমিওপ্যাথির জন্য নিবেদিত প্রাণ যেসব মনীষী জ্ঞানী-গুনীজন আন্দোলন চলমান করে রেখে গিয়েছিলেন তা কি এখন সঠিক ধারায় চালিত আছে কি না কিংবা আন্দোলন থমকে গিয়েছে কি না ভাবা দরকার। আন্দোলন তো থেমে থাকার কথা না। সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা বাড়বে আন্দোলন ও চলমান থাকবে। এজন্যই আন্দোলনকে দোলনার সাথে তুলনা করা হয়েছে।  (আন্দোলন বিষয়ে পড়ে নিতে ''পারেন হোমিওপ্যাথি আন্দোলন ও আমার ভাবনা'')  

তবে আশার দিক হলো স্বাধীনতার পর থকে আজ পর্যন্ত আমরা অনেক হোমিও সংগঠন পেয়েছি।  এসব সংগঠনের অবদান একেবারে ভুলবার নয়। আমি লেখার শুরুতেই লিখেছি যে সমাজে চলতে গেলে সংগঠনের বিকল্প নেই। এটা অবশ্যই ভালোদিক যে সংগঠন গুলোর মতের ভিন্নতা  থাকলেও পথ একটাই সেটা হোমিওপ্যাথি। 

বর্তমানে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার যে সুন্দর ব্যবস্থা আমরা পেয়েছি  এর পেছনে রয়েছে বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির ত্যাগ তিতিক্ষা  আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল। অতীতে অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা একাডেমিক ভাবে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা অর্জন করতে পারছি।  

হতাশার দিক হলো :

আমরা যা পেয়েছি সময়ের প্রয়োজনে তা  পরিপূর্ণ নয়। ভারতবর্ষ ভেঙ্গে সময়ের প্রয়োজনে আলাদা পৃথক রাষ্ট্র গঠন হয়েছে।  হোমিওপ্যাথিও রাষ্ট্রীয় কারনে আলাদা হয়ে যায়। ভারতে হোমিওপ্যাথির জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়, পাকিস্তানে হোমিওপ্যাথির জন্য পৃথক কাউন্সিল গঠন হলেও আমাদের  দেশে নাম মাত্র সতীনের ঘরের  সংসারের মত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধীন অবহেলিত অবস্থায় আজকের হোমিওপ্যাথি। পাকিস্তান সময়েও হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ছিলো তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ হওয়ার পরও নাম পরিবর্তনে বোর্ড পেয়েছি।  এতে করে বোর্ডের দাদাগিরির জন্যই একাধিক সংগঠনের নেতাদের লড়াই চলছে এবং নামে বে-নামে একেরপর এক সংগঠন গঠন চলমান।

তবে এটার  পিছনে অনেক প্রবীণ স্যারগন অতীত ব্যর্থতাকেই দ্বায়ী করেন। যা এক কথায় "সাপ মেরে লাঠি জিয়ে রাখা"। 

স্বাধীনতারপর থেকে আজ পর্যন্ত চলমান কোন সংগঠন সাধারণ ছাত্র,  চিকিৎসকদের ভরসার স্থান হতে পারে নাই।  অনেকেই দ্বায়ী করেন প্রত্যেকটা সংগঠন গঠন হয়েছে ব্যক্তি কেন্দ্রীক। কোন একক স্বার্থকে কেন্দ্র করে এবং ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠন হওয়ার কারনেই পথ একটা হলেও সংগঠন গুলোর মাঝে সু-সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না।  যদিও অনেক সৎ চিকিৎসক ও ছাত্র এসব সংগঠনে যুক্ত আছেন। কিন্তু স্বার্থের জন্য তাদেরকে হয়তো বা মূল্যায়ন করা হচ্ছে  না কিংবা চলমান জাতীয়  স্বার্থে সংগঠন না থাকায় এবং জাতিকে জাতীয়  স্বার্থে ঐক্যে আনার মতো কোন ত্যাগী হোমিও নেতা না থাকায় তাঁরা বিছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন।  সংগঠনের নেতাগন হোমিওপ্যাথির শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করলেও  নেতা হিসেবে বিকল্প পথ দেখাতে ব্যর্থ।  এ থেকেই এসব সংগঠন থেকে জাতি কাঙ্ক্ষিত কিছু আশা করতে পারছেন না। 

এসব সংগঠন অপরিকল্পিত আন্দোলন বা কোন কর্মসূচি দেন সেটাও সাংগঠনিক ইমেজ ও ব্যক্তির প্রদর্শন ইচ্ছার জন্য । আর এমন প্রদর্শন ইচ্ছা থেকেই একে অপরের কোন সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে না। এমন কি নিজ সংগঠনের মধ্যেও সু-সম্পর্ক দেখা যায় না। নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য সকল সংগঠনেরও ঐক্য হচ্ছে না। ঐক্য হয়ে কাজ করলে জাতির উন্নতি হবে। হোমিওপ্যাথির পরিপূর্ণ উন্নতি ও অধিকার আদায় হলে সংগঠনের আড়ালে ব্যবসা হবে না বলে অনেকের ধারনা। যদিও এসব সংগঠন আন্দোলনের নামে সার্কাস করে চলছেন। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হোমিওপ্যাথি সমাজ। যা আমি বরাবর আমার লেখায় আগে থেকেই প্রকাশ করে আসতেছি।  

আমি আমার লেখার শুরুতেই সংগঠন কি তা বুঝানোর চেষ্টা করেছি। সকল জায়গায় সংগঠনের প্রয়োজন আছে। আর হ্যা আমরাও হোমিওপ্যাথিতে অনেক সংগঠন পেয়েছি এবং চলমান আরও সংগঠন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সংগঠন পাচ্ছি।  কিন্তু কোন সংগঠনই হোমিওপ্যাথির স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না বলেই অনেকেই এসব সংগঠনকে ব্যর্থ বলছেন। এটা অবশ্যই ঠিক যে এসব সংগঠন জাতির স্বার্থে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।  সংগঠনের সূত্র অনুযায়ী একটা পরিবার, কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও একটা সংগঠন।  কিন্তু এসব সংগঠন দিয়ে কখনও জাতির উপকার হয় না। ব্যবসায়িক উন্নতি সংশ্লিষ্ট মালিক, কর্মচারী /কর্মকর্তাদের জীবনমানের উন্নতি ছাড়া জাতির উন্নয়ন আশা করা যায়না। 

তাহলে কি আমরা কোন সংগঠনে থাকবো না?? 

আমি আবারও বলছি আমি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করছি না। সকল সংগঠনের মাঝে অনেক ভালো মানের ব্যক্তি রয়েছেন।  সেই সাথে বর্তমানে যদি ব্যক্তিগত ভাবে আমরা জাতির কল্যান চাই তাহলে অবশ্যই নিজেদের আগে অবস্থান তৈরি করতে হবে,  ড. আহসান হাবীব ইমরোজ এর ভাষায় "বিশ্বকে গড়তে হলে সবার আগে নিজেকে গড়" এজন্য স্ব স্ব জায়গায় স্ব স্ব সংগঠনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে সকল সংগঠনে জাতির স্বার্থে কাজ করা ব্যক্তিদের সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলার বিকল্প নেই। সময়ের প্রয়োজনে সকল সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে ঐক্যের জন্য চাপ দিতে হবে। এরপরও যদি না হয়। সকল সংগঠনে থাকা জাতীয় স্বার্থে কাজ করা ব্যক্তিগন একত্রিত হয়ে সকল অপশক্তিকে ত্যাগ করে  ঐক্যবদ্ধ সুসংগঠিত সংগঠনিক ঐক্য গঠন করা যেতে পারে। 

সঠিক ইতিহাস পর্যালোচনা এবং সাংগঠনিক অধ্যায়ন করে সকল হোমিওপ্যাথিক ছাত্র,  চিকিৎসকদের সাংগঠনিক  শিক্ষাগ্রহন করে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আগামীতে পৃথক মন্ত্রণালয় ও কাউন্সিল গঠনে অন্ধ আনুগত্য পরিত্যাগ করে জাতির স্বার্থে অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে সকল সংগঠন এই আশা রাখি।

পরিশেষে স্যার হ্যানিম্যানের এ বানী স্বরণ করে এখানেই লেখা শেষ করছি।

“অসৎ লোকের কাছে মাথা নত করো না, সাহসের সঙ্গে তাদের মোকাবিলা করো।” - স্যার হ্যানিম্যান 

ধন্যবাদ


কন্টেন্ট ক্রিয়েটর 

মুহাঃ আব্দুল মতিন সরকার

সভাপতি

হোমিওপ্যাথিক ছাত্র ও চিকিৎসক উন্নয়ন সংগঠন। রাজশাহী বিভাগীয় শাখা।

পরিচালক (রাজশাহী বিভাগ) 

আন্তজার্তিক মানবাধিকার ও দূর্নীতি বিরোধী সোসাইটি।

Next Post Previous Post