হার্নিয়া : কারণ, প্রকারভেদ, লক্ষ্মণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
যদি আপনার কোনো কুঁচকিতে ব্যথা হয় কিংবা ফোলা দেখতে পান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। এই ফোলা বেশি দেখা যাবে যখন আপনি দাঁড়াবেন। সাধারণত আক্রান্ত অনুভব করতে পারেন। আপনি শুয়ে পড়লে হার্নিয়া আপনা আপনি মিলিয়ে যাবে অথবা আপনি হাত দিয়ে হালকা চেয়ে পেটে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন। যদি তা না হয় তাহলে জায়গাটিতে বরফের সেঁক দিলে ফোলা কমে গিয়ে হার্নিয়া চলে যায়। শোয়ার সময় মাথার তুলনায় কোমর উঁচু করে শুতে হবে। যদি আপনি হার্নিয়া ঢোকাতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে অন্ত্রের অংশ পেটের দেয়ালে আটকে গেছে। এটি একটি মারাত্মক অবস্থা এ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে অপারেশনে প্রয়োজন হয়। এ পর্যায়ে বমি বমি ভাব অথবা জ্বর হতে পারে এবং হার্নিয়া লাল, বেগুনি অথবা কালো হয়ে যেতে পারে। যদি এ ধরনের কোনো চিহ্ন বা উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
কারণসমূহ :
পেট বা এবডোমেন ওয়ালের দুর্বলতাই হার্নিয়ার একমাত্র কারণ। এই দুর্বলতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন- জন্মগত, অপারেশন, আঘাত এবং ইনফেকশন ইত্যাদি। সবচেয়ে কমন যে হার্নিয়া আমরা পেয়ে থাকি তার মধ্যে ইনগুইনাল হার্নিয়া এবং ইনসিসনাল হার্নিয়া বা অপারেশনের জায়গায় হার্নিয়া।
ইনগুইনাল হার্নিয়া কুচকির মাঝামাঝি ১/২ ইঞ্চি উপরে এই হার্নিয়ার প্রাথমিক অবস্থান। ইনগুইনাল হার্নিয়া যে কোন বয়সেই এ রোগ হতে পারে এবং বেশির ভাগ রোগীই পুরুষ। জন্মলগ্নেই পুরুষ শিশুর হার্নিয়া থাকতে পারে। এই অবস্থাকে জন্মগত হার্নিযা বলা হয়। সুস্থ সবল শরীরে পরবর্তীতে যে কোন বয়সেই হার্নিয়া সম্পূর্ণ নতুনভাবে দেখা দিতে পারে। এ ধরনের হার্নিয়াকে অর্জিত হার্নিয়া বলা হয়। জন্মগত হার্নিয়া মূলত জন্মগত গাঠনিক ত্রুটি। অর্জিত হার্নিয়া সমস্যা সৃষ্টির পিছনে কিছু কারণ কাজ করতে পারে। উদর গহ্বরের অভ্যন্তরস্থ চাপ বৃদ্ধিকারী কারণগুলোই এক্ষেত্রে প্রধান। সঙ্গে তলপেটের মাংসপেশীর দুর্বলতাও বিশেষভাবে অনুঘটক যা বয়স্কদের বেলায় বিশেষভাবে প্রযোজ্য। উদর গহ্বরের চাপ বৃদ্ধি সহায়ক পরিস্থিতিসমূহ হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী কাশি, পেটে চাপ পড়ে এমন পেশার কাজ যেমন ভারোত্তোলন, প্রবল চাপ দিয়ে প্রস্রাব করতে হয় এমন কোন অসুখ, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য এ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় খুব চাপ পড়ে, যেমন বৃদ্ধ বয়সে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া ইত্যাদি। যেসব শিশু স্বাভাবিক জন্মগ্রহণের তারিখের আগেই ভূমিষ্ঠ হয় তাদের ইনগুইনাল হার্নিয়া বেশি হয়।
হার্নিয়ার প্রকারভেদ :
ইঙ্গুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia) - এই প্রকারের হার্নিয়ায় দেখা যায়, অন্ত্রের অংশবিশেষ (Parts of intestine) উদর ও উরুর সংযোগস্থলে ইঙ্গুইনাল অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে। তখন উদর ও উরুর সংযোগস্থল ফোলা মনে হয়।
ইঙ্গুইনো-স্ক্রোটাল (Inguino-scrotal) - যদি ইঙ্গুইনাল হার্নিয়াতে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেয়া হয় তখনই এধরনের হার্নিয়া হয়ে থাকে। তখন অন্ত্রের অংশবিশেষ নামতে নামতে একেবারে অন্ডকোষে (Testes) এসে প্রবেশ করে(Enter), ফলে অন্ডথলি (Scrotum) ফুলে যায়।
ফিমোরাল হার্নিয়া(Femoral Hernia) - ফিমোরাল হার্নিয়াটা সাধারনত মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে উরুর ভেতরের দিকে স্ফিতি দেখা দেয়।
ইনসিসনাল হার্নিয়া(Incisional Hernia) - উদরের পূর্বে অপারেশন (Previous operation area) করা হয়েছে এমন অঞ্চলে ইনসিসনাল (Incisional) হার্নিয়া হয়ে থাকে। কেননা অপারেশনের ফলে সেই অঞ্চল খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
আম্বিলিকাল হার্নিয়া(Umbilical Hernia) - এক্ষেত্রে দেখা যায়, যিনি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তার নাভির চারপাশ(Around Naval) বা একপাশ ফুলে ওঠে।
লক্ষণসমূহ :
কুচকি বা অণ্ডথলি ফুলে যায়৷নাভির একপাশে বা চারপাশে ফুলে যায়৷উরুর গোড়ার ভেতরের দিকে ফুলে যায়৷আগে অপারেশন করা হয়েছে এমন কাটা জায়গা ফুলে যায়৷
রোগ নির্ণয় :
হার্নিয়া নির্ণয়ের বেলায় সাধারণ শারীরিক পরীক্ষায় মাধ্যমে ইন্টেস্টইনাল হার্নিয়া (Intestinal hernia) নির্ণয় করা হয়। আপনার চিকিৎসক আপনাকে আপনার উপসর্গগুলো জানতে চাইবেন, তারপর কুঁচকি (Inguinal hernia) এলাকায় ফোলাটা (Swelling) পরীক্ষা করে দেখবেন। যেহেতু কাশি দিলে হার্নিয়া অধিক স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, তাই কাশি (Coughing) দেয়াটাও আপনার পরীক্ষার একটা অংশ হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
চিকিত্সা ছাড়া হার্নিয়া ভাল হয় না, যদিও কয়েক মাস বা এক বছরে হার্নিয়া খুব একটা খারাপ অবস্থায় উপনীত হয় না। অত্যন্ত ব্যথাযুক্ত এক ধরনের হার্নিয়া আছে, যা থেকে তুলনামূলকভাবে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং তা স্বাস্থ্যের জন্যও আশঙ্কাজনক নয়, একে রিডিউসিবল হার্নিয়া বলা হয়। আর এক ধরনের হার্নিয়া রয়েছে যা হতে পরিত্রাণ পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। একে ননরিডিউসিবল হার্নিয়া বলে। এই ধরনের হার্নিয়া জীবনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে যখন উন্মুক্ত অংশে অন্ত্রের কোনো অংশ আটকে যায় বা রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। এই ধরনের হার্নিয়াকে ইনকারসিরেটেড হার্নিয়াও বলা হয়ে থাকে।
যদি আপনার হার্নিয়া ছোট থাকে এবং আপনার কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে তাহলে আপনার চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করার কথা ও অপেক্ষা করার কথা বলতে পারেন। কিন্তু হার্নিয়া যদি বড় হতে থাকে এবং ব্যথা হয় তাহলে অস্বস্তি দূর করতেও মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধ করতে সাধারণ অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারগণ অপারেশনের করতে বলেন। তাই আগে অপারেশনের কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে একজন হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করেন লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন ইনশাল্লাহ
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর :
ডা. তানজিলা হাসান
সভাপতি
হোমিওপ্যাথিক ছাত্র ও চিকিৎসক উন্নয়ন সংগঠন
নওগাঁ জেলা শাখা।