ভ্রান্ত গর্ভধারণ (false pregnancy) ও তার দুঃখজনক পরিণতি
৪৪ বৎসর বয়সী হালিমা খাতুন (ছদ্মনাম) গর্ভবতী সংক্রান্ত লক্ষণ বিষয়ক সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। কতদিনের গর্ভবতী বা শেষ মাসিকের তারিখ জানতে চাইলে বলেন, স্বামী প্রবাসে তাই ও রকম কোন বিষয়ে তার জানা নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ তার মাসিক অনিয়মিত। প্রায় বিশ বৎসর পূর্বে তার একটা কন্যা সন্তান হয়েছিল। তারপর থেকে মাসিক অনিয়মিত এবং স্বামী প্রবাসে দুটি মিলিয়ে আর সন্তান ধারণ হয়নি। ইতিমধ্যে তার একমাত্র কন্যা সন্তানটি বিবাহ দিয়েছেন।
প্রশ্ন করে জানতে পারলাম মাসিক অনিয়মিত, মাথা ঘুরায়, বমি বমি ভাব, স্তনদ্বয়স্পিত, তলপেটে প্রাণের স্পন্দন বা কিছু নড়াচড়ার অনুভূতি। মোটকথা গর্ভধারণের বেশিরভাগ লক্ষণ বিদ্যমান। স্বামী দেশে আছে কিনা প্রশ্ন করলে উত্তর দিলেন, দীর্ঘ কয়েক বৎসর বিদেশে। তাহলে তা কিভাবে সম্ভব হলো? উত্তর দিলো আমি জানি না, আমি কোন অপরাধ করিনি। তারপর প্রস্রাব পরীক্ষা আল্ট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিত হলাম গর্ভধারণ করে নি।
রোগিনী হায়-হুতাশ করছিল। মেয়ের জামাই , স্বামী আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখাবো কি করে? তার আকুতি দেখে দ্রুত লক্ষণ সংগ্রহ করে ( Conium mac, Lac Can, Crocus sat.) এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলি প্রয়োগের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেগনেন্সি লক্ষণ গুলি দূরীভূত হয়ে স্বাভাবিক হয়ে যান হালিমা।
কিন্তু এতক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে! বিদেশে স্বামীর কাছে খবর গেল তোমার স্ত্রী বমি করছে। খাবারের গন্ধ সহ্য করতে পারছে না। মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে খবর গেল তার মা বমি করছে খাবারের গন্ধ সহ্য করতে পারছেনা , স্বামী দেশে নাই দীর্ঘদিন, কিন্তু সন্তান সম্ভবা হলো কি করে ??!! শুরু হলো হালিমা খাতুন এর জীবনে নিদারুণ যন্ত্রণা। নিরপরাধী হয়েও সমাজের মানুষের কাছে তথাকথিত মস্ত বড় অপরাধী!!! হালিমার কাকুতি মিনতিতে কারো হৃদয় ঘামানো তো দূরের কথা ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করলেন সবাই। ইতিমধ্যে হালিমার বিবাহ দেওয়া কন্যাটিকে তার শ্বশুরালয় থেকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রবাস থেকে স্বামী হালিমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন। সুখের সংসার ও নিরপরাধী হালিমার জীবনে বেশিদিন স্হান করে নিতে পারলোনা। সমাজের সাধারণ মানুষের যদি এসব রোগ সংক্রান্ত জ্ঞান থাকতো তাহলে নিরপরাধী হালিমাদের জীবনে হতাশ নেমে আসতো না।
গর্ভবতী না হয়ে ও গর্ভধারণের সমস্ত লক্ষণ বিদ্যমান থাকলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, সিউডোসায়েসিস বলে। দেহের সব ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার সাথে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার জড়িত। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। তাই এই ব্যাধির সাথে শারিরীক ও মানসিক উভয় বিষয় দায়ী। সাধারণত যে সকল মহিলাদের সন্তান হয়না বা যারা কম সন্তানের মা, তাদের সন্তান পাওয়ার প্রবল মানসিক আখাংকা থেকে হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণ অস্বাভাবিক হয়ে উঠে । এথেকে এই গর্ভধারণের লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয়। অনেক চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এটিকে হিস্টেরিয়া রোগ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এক কথায় প্রকৃত গর্ভবতী মহিলার মতো সকল উপসর্গ দেখাদেয়।
আমাদের জ্ঞানের দৈন্যতার কারণে আমরা নিরপরাধী হালিমাদের কে অপরাধী সাজানোর আগে উপরোক্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ যেন গ্রহণ করি।
(প্রায় পনর বৎসর আগেকার চিকিৎসার স্মৃতি থেকে, লিখাটি সাধারণের সচেতনতা জন্য।)
২৮/০৬/২০২২
ধন্যবাদান্তে
ডা. এম মোহসীন চৌধুরী
হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কনসালটেন্ট
সোনাগাজী, ফেনী।