ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

ডায়াবেটিস হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। 

ডায়াবেটিস নিয়ে যত ভুল ধারণাঃ

সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয় ডায়াবেটিস। তবে নিয়ম মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা ঠিকই সম্ভব। ডায়াবেটিস একবার ধরা পড়লে নানা বাধা-নিষেধে জীবন একেবারে অতিষ্ট হয়ে যায় এসব রোগীদের।

হাজারটা নিয়ম মানার পরও সামান্য এদিক-ওদিক হলেই বিপদ! কিন্তু সমস্যা হল ডায়াবেটিস সম্পর্কে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা এই রোগ এবং রোগীর সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস সম্পর্কে তেমনই কয়েকটি প্রচলিত ধারণা যেগুলো একেবারেই সঠিক নয়।

১. ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা কখনই রক্তদান করতে পারেন না, এমনটাই ধারণা বেশির ভাগ মানুষের। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কারণ শুধুমাত্র যারা নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেন, তারাই শুধু রক্তদান করতে পারেন না। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, রক্তদানে কোন সমস্যা নেই।

২. অনেকেই মনে করেন চিকিৎসক ইনসুলিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানেই রোগী মোটেও নিয়ম মেনে চলছেন না। বাস্তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! কারণ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। ফলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও একটা সময়ের পর ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

৩. ডায়াবেটিস ধরা পড়লে শর্করা জাতীয় খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না, এমনটাই ধারণা বেশির ভাগ মানুষের। তবে বাস্তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! কারণ ডায়েটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল শর্করা জাতীয় খাবার। তাই কখনই শর্করা জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া উচিত নয়। বরং কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

৪. বেশির ভাগ মানুষেরই এটা ধারণা যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মিষ্টি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বাস্তবে এ ধারণাটাও সঠিক নয়! কারণ নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে মিষ্টি সকলেই খেতে পারেন। বরং চিকিৎসকদের মতে, শুধু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই নয়, বেশি মিষ্টি খাওয়া যে কোন মানুষের পক্ষেই ক্ষতিকর।

৫. অনেকেই মনে করেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সব সময় উচিত খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রেখে যতটা সম্ভব কম পরিশ্রম করা। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কারণ নিয়ম মেনে চললে আর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীরাও বাকিদের মতোই স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।

এছাড়াও অনেকে অনেক খবারে ডায়াবেটিস আছে বলেই। অনেক সময় এসব ভুল ধারণা থেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত খবার হতেও রোগীগন বঞ্চিত হন। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খান ৬টি খাবারঃ

বার্লিনে বার্ষিক সভায় ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিসেশন ফর দ্য স্টাডি অফ ডায়াবেটিসের একটি নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ার ২০ বছর আগেই চিহ্নিত করা যায়।

জাপানের আইজওয়া হাসপাতালের এক গবেষণা দেখিয়েছে, বর্ধিত ফাস্টিং গ্লুকোজ, অতিরিক্ত মেদ, এবং ইম্পেয়ার্ড ইনসুলিন সেনসেটিভিটিকে ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ার অন্তত ১০ বছর আগে প্রি-ডায়াবেটিস পরিস্থিতি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

প্রধান গবেষক হিরোয়ুকি সাগেসাকা বলেন, ‘টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের বেশিরভাগই প্রি-ডায়াবেটিক লক্ষণে ভোগেন। তাদের ক্ষেত্রে প্রায় ২০ বছর আগেই বলে দেয়া যায় যে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা রয়েছে।’ পুরো গবেষণাকালে ১০৬৭ নতুন ডায়াবেটিক টাইপ-টু কেসকে চিহ্নিত করা হয়। ১৫ হাজার ৭৭৮ জনের প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে স্বাভাবিক এলেও ৪ হাজার ৭৮১ জনের পরে প্রি-ডায়াবেটিক লক্ষণ দেখা যায়। এদের ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ার ১০ বছর আগে লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল।

গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৪২৫ মিলিয়ন (২০-৭৯ বছর) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। আশঙ্কা ২ হাজার ৪৫ পর্যন্ত তা গিয়ে ৬২৯-এ পৌঁছাবে।

তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খান ৬টি খাবার:

বিটরুটঃ

বিটরুটে কার্বোহাইড্রেট কম, ভিটামিন, খনিজ, তন্তু ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস বেশি। এর ন্যাচারাল সুগার শকর্রায় পরিণত হয় না। ফলে শরীর তা দ্রুত আত্মীকরণ করে।

টমেটোঃ

এটি রক্তচাপ কমিয়ে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতাকে দূরে রাখে। টমেটোতে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং পটাসিয়াম রয়েছে। এগুলি লো কার্ব এবং কম ক্যালোরির।

কুমড়ো বীজঃ

এগুলি আয়রনে পূর্ণ, ফ্যাটের ধরন বুঝে এবং খিদে কমায়। স্ন্যাকস হিসেবে অতি উপাদেয়।

ফ্ল্যক্সসিডঃ

এতে প্রচুর লিগন্যান নামে প্রচুর তন্তু থাকে। ফলে হৃদরোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি কমে। হাড়ের জোড়া মজবুত করে, রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে।

মিক্স নাটঃ

আমরা জানি বাদাম জাতীয় খাবার সুপারফুড আর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ। এতে প্রচুর অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল থাকায় ডায়াবেটিক ইনফ্লামেশন, ব্লাড সুগার, এবং খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়্ন্ত্রণ করে।

গোটা শস্য দানাঃ

লাল চাল, বুলগার, ওটসের মতো গোটা শস্য দানা সহজপাচ্য হওয়ায় রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। ফলে ওজন বৃদ্ধিও কম হয়। যা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ।


লেখকঃ- 

ডাঃ আয়েশা রাইসুল

বি.এইচ.এম.এস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)  

গভঃ রেজিঃ H-১৫৯৮

এক্স-হাউজ ফিজিসিয়ান বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।

চেম্বার : খান ক্লাসিকেল হোমিওপ্যাথি। 

উওর কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা।

Next Post Previous Post