ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়া : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Enuresis বা Bedwetting, সোজা বাংলায় যাকে বলে শয্যা মূত্র বা ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়া।

এ রোগ সাধারণত শিশু দের বেশি হয়ে থাকে।

সাধারণত শিশু গন দেড় বছরের কাছাকাছি বয়স হতে বিছানায় প্রস্রাব করে না।

যদি দেড় বছরের পরও শিশু বিছানায় প্রস্রাব করে, তবে অবশ্যই তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

কিন্তু বেশিরভাগ পিতা -মাতা ই বেশ দেরি করে চিকিৎসক এর কাছে আসেন।

এ রোগের ব্যাক মায়াজম সাইকোসিস।

পিতা-মাতা যে কোন একজনের বা উভয়ের অর্জিত বা বংশগত সাইকোসিসের কারনে সাধারণত এ রোগ হয়ে থাকে।

একটু সময় প্রয়োজন হলেও একমাত্র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ রোগের চিকিৎসা আছে।

অন্য কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই।

যেহেতু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান লক্ষন ভিত্তিক। তাই এ রোগের ও নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই।

তবে আমি অধিক ব্যাবহ্নত এবং কার্যকরি প্রমানিত কিছু ঔষধ নিয়ে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

শিশু ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরই বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়,প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, অসাড়ে প্রস্রাব, বিছানা ভিজে যায়, তবুও কিছু টের পায় না,শিশু ঠান্ডা পছন্দ করে না,বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য,এ লক্ষনে সিপিয়া পড়ে দেখবেন।

শিশু এমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, বিছানায় প্রস্রাব করা কালীন তাকে জাগানোর চেষ্টা করলেও জাগে না,প্রস্রাবে ঝাঁজালো গন্ধ, মুখে দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয়,মাড়িতে ফোড়া, দাঁত কালো,ক্ষতকারি স্রাব, পিতা-মাতা বা বংশগত সাইকোসিসের সাথে সিফিলিস যুক্ত থাকার ইতিহাস,ও লক্ষনে ক্রিয়োজোট পড়ে দেখবেন 

প্রস্রাবে ভয়ানক ঝাঁজালো গন্ধ,ঘোড়ার প্রস্রাবের ন্যায় গন্ধ,মুখ হতে পরিমানে কিছুটা কম হলেও গাঢ় লালা পড়ে,জিহ্বায় ক্ষত, ঠোঁটের দুই কোন ফাটা, বংশগত সাইকো-সিফিলিটিক এর ইতিহাস, বংশগত অর্শ রোগের ইতিহাস,অত্যন্ত রাগী,ঠান্ডা পছন্দ করে না,সহ্য ও হয় না,এমন লক্ষনে এসিড নাইট্রিক পড়ে দেখবেন।

উপরোক্ত লক্ষন সমূহ এসিড বেন্জোয়িক এ ও আছে, কিন্তু বেন্জোয়িক এসিডের সিফিলিসের উপর তেমন কোন ক্রিয়া নেই, সাইকোটিক মায়াজমের উপর ই এসিড বেন্জোয়িক এর প্রধান ক্রিয়া,এবং স্রাব সমুহ ও এসিড নাইট্রিক এর মতো অত বেশি ক্ষতকর নয়।

যদিও এসিড নাইট্রিক অপেক্ষা এসিড বেন্জোয়িক এর প্রস্রাবের ঝাঁজালো গন্ধ আরো বেশি।

ইউরিনারি ব্লাডারের দূর্বলতা,বাত জনিত কারনে ব্লাডারের কাজের অক্ষমতা,ঠান্ডা লাগা বা অন্য কোন কারনে ইউরিনারি ব্লাডারের প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় প্রস্রাব, শিশু অতি সহানুভূতিশীল,অন্যের প্রতি অতি দয়াদ্র,ঠান্ডা পছন্দ করে না, এমন রোগীতে কষ্টিকাম পড়ে দেখবেন।

নোংরা চলে, দাঁত মাজে না,গোসল করে না, অগোছালো চলে, অস্থির, চঞ্চল,বর্তমানে চর্ম রোগ আছে,বা চাপা দেয়ার ইতিহাস থাকলে সালফার চিন্তা করবেন।

মাথায় আঘাতের পর হতে বিছানায় প্রস্রাব করে,এমন রোগীর জন্য ন্যাট্রাম সালফ্ বিবেচনা করবেন।

শিশুর প্রচুর ক্ষুধা, প্রচুর খায়, কিন্তু স্বাস্থের উন্নতি হয় না,নাক চুলকায়,ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটে,এমন লক্ষনে সিনা যেন মেমোরি হতে বাদ না পড়ে।

অবশ্য সিনা কিন্তু গভীর ক্রিয়াশীল ধাতু দোষগ্ন ঔষধ নয়।

তাই সিনা দিয়ে স্থায়ী উপকার পাওয়া যাবে না।

তাই সিনা প্রয়োগে সাময়িক উপশমের পর লক্ষনানুযায়ী গভীর ক্রিয়াশীল ধাতু দোষগ্ন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

টিকা দেবার পর হতে শয্যা মূত্রে থুজার কথা অবশ্যই মনে রাখা উচিত।

কোন গভীর ক্রিয়াশীল ধাতু দোষগ্ন সুনির্বাচিত ঔষধে উপকার না পেলে, অন্তর্বর্তী কালীন ঔষধ হিসেবে মাঝেমধ্যে কয়েক মাত্রা মেডোরিনাম প্রয়োগ করতে পারেন, বিশেষ করে পিতা-মাতা বা আরো উপরে কারো গনোরিয়া হবার ইতিহাস থাকলে।

আলহামদুলিল্লাহ, আশা করছি মেডো দ্ধারা চমৎকার ফল পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

এটি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা।

এ ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক লক্ষনানুযায়ী যে কোন গভীর ক্রিয়াশীল ধাতু দোষগ্ন ঔষধ নির্বাচিত হতে পারে।

ঔষধ প্রয়োগের পাশাপাশি কাউন্সেলিং করাতে পারেন, বুঝাতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন।

কোন ভাবেই ধমকানো,মার দেয়া,শাষন করা,ভয় ভীতি দেখানো,লজ্বায় ফেলা উচিত নয়।

শিশু কে মানসিক চাপ মুক্ত হতে সহযোগিতা করবেন।

সন্ধার পর, বিশেষ করে রাতে খাবারের পর পানি কম পান করতে দেবেন।


লেখক :

ডাঃ মুহাঃ মহিব্বুর রহমান।

সিনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, নোয়াখালী। 

২০-১০-২০২২.

Next Post Previous Post