সুসংগঠিত সংগঠনের বিকল্প নেই

"দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ" এ প্রবাদ বাক্য মূলত সংঘবদ্ধ/সংগঠনকেই বরাবর  ইঙ্গিত করে। 

সংগঠন কাহাকে বলে?

এক কথায় একত্রিত হয়ে কোন কাজ করাকেই সংগঠন বলে। যদি আরও একটু ভালো ভাবে বলা যায় তাহলে এভাবে বলা যায়, একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য 

যখন একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হয় এবং ধারাবাহিক  ভাবে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত  থাকে তাকে সংগঠন বলে। 


ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে সংগঠনের সংজ্ঞা;

নিম্মে কয়েকজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞের মতামত তুলে ধরা হলো।  

Prof. J. L. Massie এর মতে সংগঠন -

“Organization is the structure and process by which a co-operative group of human being allocates its tasks among its members, identifies relationships and integrates its activities towards common objectives.”

অর্থাৎ, সংগঠন হলাে এমন একটি কাঠামাে ও পদ্ধতি যা দ্বারা কতিপয় সহযােগী মানুষের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তােলে এবং কতিপয় সাধারণ উদ্দেশ্যে তাদের কার্যক্রমকে একই সূত্রে গ্রথিত করে।

Prof. L. A Allen এর মতে সংগঠন -

“Organization is the process of identifying and grouping the work to be performed, defining and delegating responsibility and authority and establishing relationships for the purpose of enabling people to work most effectively together in accomplishing objectives.” 

অর্থাৎ, সংগঠন হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যা পালনীয় কার্যের চিহ্নিতকরণ ও বিভক্তিকরণ, কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের সুনির্দিষ্ট করণ ও হস্তান্তর এবং উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে জনগণের মধ্যে সর্বাধিক কার্যকর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।

অধ্যাপক ম্যাকফারল্যান্ড এর ভাষায় সংগঠন -

“Management organization is best defined as the structure or network of relationships among individuals and positions in a work setting and the processes by which the structure is created, maintained and used.” 

অর্থাৎ, ব্যবস্থাপনা সংগঠন হলাে কতিপয় কর্মরত ব্যক্তি ও পদের কাঠামাে বা তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি নেটওয়ার্ক এবং একটি প্রক্রিয়া যা দ্বারা কাঠামােটি সৃষ্ট, সংরক্ষিত এবং ব্যবহৃত হয়।

এ থেকে আমারা হোমিওপ্যাথিক সংগঠনের সংজ্ঞা এভাবে দিতে পারি; হোমিওপ্যাথির মূলনীতিতে  লক্ষ্য স্থির রেখে হোমিওপ্যাথির মূল লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একত্রিত হয়ে  বিভন্ন কর্মকাণ্ড পরিচলানা করাকেই হোমিওপ্যাথি সংগঠন বলে। 


সংগঠনের প্রতিশব্দ;

হোমিওপ্যাথিক সংগঠনের চিকিৎসক ও ছাত্রগন আমরা যেহেতু মানব সেবায় কাজ করি। লক্ষ্য করলে দেখবেন মানব দেহের সাথে সংগঠনের কতটা সুগভীর  সম্পর্ক রয়েছে। 

সংগঠন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ organisation যার শাব্দিক অর্থ বিভিন্ন organ কে একত্রিতকরণ, গ্রন্থায়ন ও একীভূতকরণ বা আত্মীকরণ। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেও এক একটি organ বলা হয়। মানবদেহের এই ভিন্ন ভিন্ন organ গুলোর গ্রন্থায়ন ও একীভূতকরণের রূপটাই সংগঠন বা organisation-এর একটি জীবন্তরূপ। মানব দেহের প্রতিটি সেল, প্রতিটি অণু পরমাণু একটা নিয়মের অধীনে সুশৃঙ্খলভাবে যার যার কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে। মানুষের দৈহিক অবয়বগুলোর বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখানে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আছে। আবার কাজের সুষম বন্টনের ব্যবস্থা আছে, পরস্পরের সাথে অদ্ভূত রকমের সহযোগিতা আছে। মন-মগজের চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা ও সিদ্ধান্তের প্রতি দেহের বিভিন্ন organ দ্রুত সমর্থন-সহযোগিতা প্রদর্শন করে। তেমনি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অভাব-অভিযোগ, অসুবিধা ইত্যাদির ব্যাপারে দেহরূপ এই সংগঠনের কেন্দ্র অর্থাৎ মন ও মগজ দ্রুত অবহিত হয়। মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এই একত্রীভূত রূপের অনুকরণে কিছুসংখ্যক মানুষের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এক দেহ এক প্রাণরূপে কাজ করার সামষ্টিক কাঠামোকেই বলা হয় সংগঠন বা organisation. 

লক্ষ্য করে দেখুন যে মানব দেহের সেবার জন্য আমরা মেডিক্যাল কলেজে পড়ছি বা আমারা ডাক্তারির মতো মহৎ পেশাকে গ্রহন করে মানব সেবার মিশনে কাজ করছি। সেই মানব দেহ কিন্তু স্রষ্টাকে নেতা মেনে সুশৃঙ্খল ভাবে সংগঠন নিয়ম মেনে চলছে। তাহলে আমারা আমাদের পেশার সুশৃংখল  পরিচালনার জন্য কেন সংগঠন করবো না।  


হোমিওপ্যাথিক সংগঠনের অনবদ্য গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা;

আপনি যে অবস্থানে থাকেন না কেন সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। সংগঠন বিহীন কখনও নিজের অস্তিত্ব পরিপূর্ণ জানান দেওয়া যায় না। 

সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা হলো যে কোন সমাজের একটি মূল ভিত্তি। এ ভিত্তির উপরেই দাড়িয়ে থাকে সমাজের সৌন্দর্য এবং আদর্শ। সামাজিক ভিত্তি যদি দুর্বল হয়।  তাহলে সমাজ ভেঙে পড়ে। সামাজিক ঐক্যবদ্ধতাকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ, সুন্দর সামাজিক সংগঠন। এমনকি হোমিওপ্যাথির মূল ভাবধারাকে শক্ত করার জন্যও সবার আগে প্রয়োজন হোমিওপ্যাথির মূল নিতির সাথে একাত্মতা এবং হোমিওপ্যাথি সমাজের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধতা। তাই প্রতিটি হোমিওপ্যাথিক, ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক, চিকিৎসক অনুরাগী  জন্য হোমিওপ্যাথিক সংগঠন একটি সামজিক অপরিহার্য  বিষয়।

সংগঠনে নিজেকে যুক্ত করার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।  সংগঠনগুলোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলী তৈরী হয়। যার মাধ্যমে আমাদের মাঝে মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী  তৈরী হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ে। 

সাধারণত প্রত্যেক হোমিওপ্যাথি  সংগঠনগুলোর মৌলিক বিষয় একই হয়। কারন সকল হোমিওপ্যাথিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হোমিওপ্যাথিকে প্রচার-প্রসার, এবং হোমিওপ্যাথি জগতের অধিকার আদায়ের জন্য।  সংগঠন শেখায় কিভাবে সবার মতকে শ্রদ্ধা করতে হয়, দায়িত্ব পালন করতে, নিজেকে বিকশিত করতে, একসঙ্গে কাজ করতে ও সহনশীল হতে। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক  কার্যক্রম পরিচালনা করতেও শিক্ষা দেয় এসব সংগঠন। (যদি কোন সংগঠনে এমন শিক্ষার সুযোগ না থাকে তাহলে সেটাকে সংগঠন নাম মাত্র বলা হলেও আসলে সংগঠন নয়)

মানুষ মানুষে যে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা, সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব দেখা যায় এগুলো দূর করতে হলে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ প্রয়োজন। হোমিওপ্যাথিক  সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবেশে সুস্থতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নিজেকে একজন দক্ষ ডাক্তার গঠন ছাড়াও চৌকস সংগঠক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা বা একজন উদার মনের মানুষ হতে হলে লেখাপড়া, শিক্ষকতা ও নিজের ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতায় তথা হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। 

চীনা দার্শনিক কনফুশিয়াস তার অবিস্মরণীয় একটি উক্তি  রয়েছে : He who wished to secure the good of others, has already secured his own. অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের কল্যাণের ইচ্ছা পোষণ করে সে প্রকৃত প্রক্ষে নিজের কল্যাণই নিশ্চিত করে। 

আরও পড়ুন : হোমিওপ্যাথিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার খোলা চিঠি 

আমাদের ইসলাম ধর্মের মহা মানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুওয়াত পাওয়ার আগেই আপামর জন সমাজের সেবার জন্য তরুণদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে সেবা সংগঠন বা সামাজিক সংগঠন করেছিলেন। নবুওয়াত পাওয়ার পরও তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার সাহাবায়ে কোরাম রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আজমায়ীনদের নিয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করেছেন।

সাধারণত ব্যাক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির সমাজের বন্ধন যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরী হয়। ঠিক আমাদের হোমিওপ্যাথিক সমাজে যখন একজন ডাক্তার আরেকজন ডাক্তারের বন্ধনের যখন দূরত্ব বৃদ্ধি হয় তখনই দেখা দেয় নানা বিশঙ্খলা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি। (বর্তামান আমরা হোমিও সমাজের মাঝে অনেক ক্ষত্রে এমনটা দেখতে পাই)  

সেই সাথে হোমিওপ্যাথির মূল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় সহ সমাজের আমজনতা সুধী মহলের সাথে মিশতে হবে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। 

সেই ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি সমাজেরল সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক মধুর করার পেছনে একটি আদর্শ সামজিক সংগঠনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। 


সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে যা প্রয়োজন; 

সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে নেতৃত্ব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং আনুগত্যশীল সংঘবদ্ধ জনসমষ্টি প্রয়োজন। এছাড়া আরও কিছু উপাদান প্রয়োজন যেগুলোকে সংগঠনের মৌলিক উপাদান বলতে পারি। যে উপাদানের অনুপস্থিতিতে কোন জিনিসের প্রকৃত পরিচয় হারিয়ে যায়, তাকে ঐ জিনিষের মৌলিক উপাদান বলে। সেই অর্থে সংগঠনের মৌলিক উপাদান ৬টি। যথা-

 ১. নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

 ২. যোগ্য নেতৃত্ব

৩. সঠিক কর্মসূচী/কর্মপদ্ধতি

৪. নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী

৫. অর্থ 

৬. নির্দিষ্ট ক্ষেত্র

এই ছয়টি উপাদানের কোন একটিকে বাদ দিয়ে সংগঠন কায়েম করা সম্ভব নয়। বিষয়টি সহজভাবে বুঝার জন্য ‘সংগঠন কে একটি চলন্ত গাড়ির সাথে তুলনা করা চলে। একটি গাড়ি চলতে গেলে দক্ষ চালক, অনুগত সহযোগী (হেলপার-কন্ডাক্টর), ভাল ইঞ্জিন, ফুয়েল, রাস্তা ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। একই সাথে প্রয়োজন হয় গাড়ি পরিচালনার কিছু কলাকৌশল যেমন- স্টিয়ারিং ঘুরানো, গিয়ার পরিবর্তন করা, প্রয়োজনে ব্রেক করা, হর্ণ বাজানো ইত্যাদি। এসব ছাড়া একটি গাড়ি কোন অবস্থাতেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে না।

এখানে দক্ষ চালককে যোগ্য নেতৃত্ব, গন্তব্যস্থলকে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পরিচালনা পদ্ধতিকে সঠিক কর্মসূচী, অনুগত সহযোগী ও স্টিয়ারিং, ব্রেক, হর্ণ, ইঞ্জিন ইত্যাদিকে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী বাহিনী, ফুয়েলকে অর্থ এবং চলার রাস্তাকে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে কল্পনা করলে বিষয়টি বুঝতে খুবই সহজ হবে। কোন গাড়িতে চালক না থাকলে যেমন তা চলে না, তেমনি যেনতেন চালক থাকলেই সে গাড়ি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে গেলে চালককে অবশ্যই দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। চালক দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হলে সে গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানো তো দূরের কথা পথিমধ্যে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে নিজের জীবন নষ্ট, গাড়ি নষ্ট, যাত্রীদের দুর্ভোগ, রাস্তার জনগণের জীবন নাশসহ বহুমুখী ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। সাথে সাথে চালক যদি ড্রাইভিং বা ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি না চালায় তবে চালকসহ গাড়িও শ্রীঘরেও যেতে হতে পারে।

আবার যদি গাড়ির স্টিয়ারিং, ব্রেক ঠিকমত কাজ না করে, হর্ণ ঠিকমত না বাজে, সহকর্মীরা ঠিকমত সাহায্য বা আনুগত্য না করে, তবে চালক যোগ্য হলেও তার পক্ষে সে গাড়ি চালানো নিতান্তই অসম্ভব। সাথে সাথে গাড়িটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভার চলার জন্য চাই প্রশস্ত সমতল নিরাপদ সড়ক। এতকিছু থাকার পরও যদি অর্থের অভাবে গাড়ির তেল কেনা সম্ভব না হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লিখিত উপাদানসমূহের উদাহরণ অনুরূপ। বর্তমান আমাদের হোমিও সংগঠন গুলোর মধ্যে কিরে এমনটা দেখা যায়!!! 

হোমিওপ্যাথিক সংগঠন গুলো কেমন হওয়া দরকার; 

হোমিও সংগঠনের উদ্ভব অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। হোমিওপ্যাথি সেক্টরে সংগঠন আছে বলেই আমারা হোমিওপ্যাথি বিষয়ে নূন্যতম হলেও বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির উন্নয়ন পেয়েছি। এটা অস্বীকার করার নয়। অবশ্যই এসকল সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা শিখার করা দরকার। কিন্তু এটা মানতেই হবে অধুনিক যুগের পরিবর্তনের সাথে সংগঠন গুলোকেও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আধুনিকায়ন কর্মসূচি নিতে হবে। আরও লক্ষ্য করলে আমার দেখতে পায় এসব সংগঠনের মাধ্যমে যা অর্জন পেয়েছি তা হয়তো আমাদের জন্য পরিপূর্ণ নয় বলে অনেকের ধারণা। (এ বিষয়ে আমার পূর্বের লেখা হোমিওপ্যাথিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার খোলা চিঠি পড়ে নিতে পারেন)  

একজন চিকিৎসককে যখন চিকিৎসকের জায়াগায়  তখন অবশ্যই  চিকিৎসকে ধর্ম, জাত, নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শ ভূলে শুধুমাত্র মানবতার সেবার উদ্দেশ্য রোগীকে মানবিক বিবেচনায় সেবা করে থাকেন।  

ঠিক একই ভাবে আমাদের হোমিও সংগঠন গুলোকে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ রাখা যাবে না। এখানে কোন ব্যক্তির স্বার্থে না বরং হোমিওপ্যাথি তথা আর্ত মানবতার সেবায় সংঘবদ্ধ হতে হবে। যেমনটা হ্যানিম্যান স্যার করেছিলেন। স্যার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান যদি নিজ ব্যক্তি স্বার্থ নিজ জাতীয়তাবাদ বা নিজ ধর্মের প্রতি অন্ধ হতেন তাহলে আজকের হোমিওপ্যাথির আমরা হয়তো পেতাম না। স্যার সামিয়ান হ্যানিম্যান শুধু মাত্র আর্ত মানবতার কল্যান ভেবেছেন বলেই হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার হয়েছে।

 (যাই হোক এবিষয় আর বিস্তারিত না লেখি, এ’বিষয় লেখতে গেলে স্যার হ্যানিম্যানের জীবনে অধ্যায়ন করে লিখতে হবে। আর এ বিষয়ে আমাদের অধিকাংশ হোমিওপ্যাথি ছাত্র, চিকিৎসকদেরও জানা রয়েছে। ভবিষ্যতে উৎসাহ পেলে লেখার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ) 

এখানে অনেক সংগঠন ব্যক্তি কেন্দ্রীক  রাজনীতি দল নির্ভর করে পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে উক্ত সংগঠন গুলো অধিকার আদায়ে কোন ব্যক্তির অন্যায়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না কিংবা রাজনৈতিক দল নির্ভর হওয়ার কারনে নিজ সংগঠনে হোমিওপ্যাথির স্বার্থ চর্চার চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থই বেশী চর্চা হচ্ছে। 

সুতারাং হোমিওপ্যাথি সংগঠন গুলোকে রাজনৈতিক দলীয় মুক্ত  এমনকি অনেক ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মও যার যার কিন্তু একটি হোমিওপ্যাথিক  সংগঠন সবার। এমন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এবং আমরা লক্ষ্য করবো আমদের হোমিওপ্যাথিক সংগঠনে আমজনতার সম্পর্ক নেই বললেই চলে অচথ দেশে ৪০%+ বেশী মানুষ হোমিও সেবা নিয়ে থাকেন। 

এজন্য আমাদের হোমিওপ্যাথিক সংগঠন গুলোকে বিভন্ন সমাজ উন্নয়ন ও সমাজিক কাজের মাধ্যমে এমন সব নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা সমাজের জন্য পাথেয় হিসেবে কাজ করতে হবে।  হোমিওপ্যাথির জনক স্যার স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হতে  আর্ত মানবতার অবদান ভূলবার নয়। যখন আর্ত মানবতা সেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন এবং হোমিওপ্যাথির পক্ষে আওয়াজ তুলছেন তখনই যুগে যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্রে  হোমিওপ্যাথি প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। সেই সাথে নিজেদের মাঝে এবং অন্যপ্যাথির সাথে শত্রুভাব না করে হোমিওপ্যাথির মূল লক্ষ্য ঠিক রেখে বন্ধুত্ব রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে স্যার হ্যানিমান ও অন্যপ্যাথিতে ছিলেন। অন্য প্যাথির সাথে বন্ধুত্ব মানে এই নয় সে প্যাথির নিতি গ্রহন করা বরং আমাদের প্যাথি তাঁদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ সংগঠনে অপরিহার্য। 


হোমিওপ্যাথির মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও অধিকার আদায়ে সকল সংগঠনের  ঐক্য জরুরী ;

মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য হলো কাহারও মতের সাথে কাহারও মত মিলবে না এটাই স্বাভাবিক।  আর এ  থেকেই গড়ে উঠে একাধিক সংগঠন।  তবে আমাদের সবার উদ্দেশ্য যেহেতু হোমিওপ্যাথি কেন্দ্রীক, সেক্ষেত্রে মতের পার্থক্য হলেও পথ একই হওয়া চাই। এক্ষেত্রে যেমন অধিকার আদায়ে সবাইকে নিজ মতাদর্শ ভূলে হোমিওপ্যাথির স্বার্থে সংগঠনে সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে ঠিক তমনি জাতীয় স্বার্থে অধিকার আদায়ে সকল সংগঠনের ঐক্যবদ্ধতার বিকল্প নেই। 

ইংরেজীতে একটি কথা আছে A man who builds wall instead of bridge has no right to complain if he is alone অর্থাৎ "কেউ যদি সেতুর বদলে প্রাচীর রচনা করে নিঃসঙ্গ হলে অভিযোগ করার অধিকারটিও সে হারায়।" অধিকার আদায়, ব্যক্তিগঠন ও জাতিগঠনে যেমন সংগঠনের প্রয়োজন। তমনি ভাবে জাতীয় স্বার্থে একক লক্ষে সকল  সংগঠনর ঐক্য তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।


"আমি বৃথা জীবন ধারণ করি নাই- স্যামুয়েল হ্যানিম্যান"

সর্বশেষ এ মহান বানী স্বরণ করিয়ে বলতে চাই তাহলে আমরা কেন হতাশ হবো। বিজয় আমাদেরই আসবে চাই সঠিক সংগঠন ও সঠিক নেতৃত্বের ঐক্য। তবেই আসবে বিজয়।  আসুন আমরা আলাদা না থেকে হোমিওপ্যাথির উন্নয়ন ও আর্ত মানবতার সেবাই  সংগঠনে সংঘবদ্ধ হই। এবং সকল সংগঠনের নেতৃত্বে থকা সকল দায়িত্বশীলগন এক হয়ে ঐক্য আন্দোলন করে আমাদের অধিকার ফিরে আনি। ঐক্য হয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পারলেই সফলতা আসবেই। ইনশাআল্লাহ।

হোমিওপ্যাথি জিন্দাবাদ 

স্যার হ্যানিম্যান জিন্দাবাদ


লেখকঃ

মুহাঃ আব্দুল মতিন সরকার

সভাপতি

হোমিওপ্যাথিক ছাত্র ও চিকিৎসক উন্নয়ন সংগঠন।

রাজশাহী বিভাগীয় শাখা।

Next Post Previous Post