হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জ্ঞানের স্বল্পতা দেখে আমি দুঃখিত-লজ্জিত এবং হতাশ
ফ্যাক্ট : হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের জ্ঞানের অতি স্বল্পতার কারণে।
আমি নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদিতে প্র্যাকটিস করি। আমার ৪০ বছরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জীবনের প্রায় পুরোটাই নোয়াখালীতে। গড়ে বছর দুয়েক ঢাকায় প্র্যাকটিস করেছিলাম, তা ও সপ্তাহে তিনদিন করে।
যাই হোক আমি আমার এলাকার কথাই বলবো এখন :
আমি অতি দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের মফস্বলের বেশিরভাগ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের জ্ঞান অতিরিক্ত কম।
এনাটমি, ফিজিওলজি,প্যাথলজি, গাইনোকোলজি সহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় সমুহের ন্যূনতম জ্ঞান ও নেই।
হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ও ন্যূনতম জ্ঞান ও নেই!
মফস্বলের প্রায় ৯৯% হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হোমিওপ্যাথির শিক্ষার মৌলিক গ্ৰন্থ অর্গানন চিকিৎসা জীবনে পড়েছে কি না,তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
হয়তো পরীক্ষার হলে পাস করার জন্য,অর্গাননের গাইড বই হতে নকল করে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে এসেছে।
এরপর কখনো অর্গানন ধরে দেখেছে কি না, তাতে আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
আমার মনে হয় মফস্বলের শতকরা, ৯৫% হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের চেম্বারে অর্গানন বইটি পাওয়া যাবে না।
এমনকি আমার মনে হয়, গড়ে শতকরা প্রায় ৯০% হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের চেম্বারে মানসম্মত কোন মেটেরিয়া মেডিকা ও নেই।
বেশিরভাগ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সম্ভবত ঢাকার ডাঃ আবুল হোসেন নামক এক চিকিৎসকের লেখা অব্যর্থ হোমিওপ্যাথি বই দিয়ে চিকিৎসা করে।
অনেকে আবার ভারতীয় এক লেখকের বই, ধম্বন্তরি নামক বই দেখে চিকিৎসা করে। কারো কারো নিকট ডাঃ এন সি ঘোষ এর মেটেরিয়া মেডিকা পাওয়া যেতে পারে।
মানসম্পন্ন পড়াশোনা, মান সম্পন্ন চিকিৎসা হচ্ছে না বললেই চলে।
মাঝে মধ্যে মফস্বলের অনেক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রোগী নিয়ে পরামর্শ করতে আসে, তাদের জ্ঞানের এতো স্বল্পতা দেখে নিজেই লজ্জিত হই।
আর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো হোমিওপ্যাথির কলংক প্যাটেন্ট ঔষধের রমরমা ব্যবসা :
চরম দুঃখজনক যে, অনেক তথাকথিত হোমিওপ্যাথি নামক চিকিৎসক গন এলোপ্যাথি সহ বিভিন্ন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক প্যাটেন্ট ঔষধ দ্বারা ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এমন অনেক প্রমাণ আমার নিকট আছে ।
প্যাটেন্ট ঔষধের সুবিধা হলো, রোগী লিপি করতে হয় না, রোগী নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হয় না,বড় বড় বোতল দেখে রোগী গন খুশি হয়, চিকিৎসকের লাভ ও বেশি।
কিন্তু এতে যে রোগ চাপা পড়ছে,রোগ ভবিষ্যতে আরো জটিল হতে জটিলতর হচ্ছে,সে দিকে না আছে হোমিওপ্যাথি নামধারী চিকিৎসক গনের দৃষ্টি,আর না আছে মুনাফাখোর তথাকথিত হোমিওপ্যাথি নামধারী প্যাটেন্ট ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি সমুহের কোন মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গি,তা কি না সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক।
বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি বোর্ড সহ সচেতন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের প্রতি আমার আহ্বান :
দয়া করে হোমিওপ্যাথির নামে প্যাটেন্ট ঔষধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
DHMS কলেজ গুলোতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বেসিক নলেজের মান উন্নয়ন করুন, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করুন।
BHMS কলেজের শিক্ষক গনের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা আপনাদের শিক্ষার্থীদের হোমিওপ্যাথি মেটেরিয়া মেডিকার জ্ঞান বৃদ্ধিতে আরো উদ্যোগি হোন।
লেখক :
ডাঃ মুহাঃ মহিব্বুর রহমান
সিনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, নোয়াখালী।
২৯-৯-২০২২.