নামঃ– তপন। বয়সঃ– ৩২। পেশাঃ– এলোপ্যাথিক ফার্মাসিষ্ট। ঠিকানাঃ– শ্যামলী, ঢাকা। বিবাহিত– যৌনসমস্যায় ভুগছে, স্থায়িত্ব খুবই কম। অনলাইনে কেইসহিস্ট্রি নিলাম। বললাম, কি কি সমস্যা খুলে বলুন? রোগী যৌন বিষয়াদি যৌনবিপর্যস্থ রোগীরা যা যা বলে সবই বললেন। এখানে এ লক্ষণটি প্রায় সবার বেলাই একই হয়ে থাকে, তাই আর খুলে বললামনা। রোগীর বামদিকের কোমরের একটু জায়গায় তীব্র ব্যথা হয়। আরাম হয়না কোনোভাবেই। ট্যাবলেট খেয়ে খেয়ে কমিয়ে রাখছেন এবং এনালফিশারে দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগছেন। মল স্বাভাবিক ধরণের হলেও ফিশার ভালো হচ্ছেনা।
এজন্যে ট্যাবলেট ইত্যাদি তো খেয়েই যাচ্ছেন। কোনো কাজ হচ্ছেনা। মুখের বামপাশে ২/৩ টি এবং ডান নাকের নীচে একটি কালো আঁচিল আছে। খাওয়ার রুচি ভালোই। সবই খান। জিজ্ঞেস করলাম কাতরতার কথা। বেশী শীত, বেশী গরম উভয়ই সহ্য হয়না। গোসলে উল্লেখযোগ্য ভাবে করা, না করা তেমন কিছু নেই। তবে সব সময়ই করেন। মাঝেমধ্যে বাদ যায়। পূর্ব রোগ– বসন্ত হয়েছিলো একবার, কখনো হয়তো একটু আধটু সর্দি জ্বর হয়, এছাড়া আর কিছু পেলাম না। বংশগত তেমন কোনো জটিল রোগের ইতিহাস নেই। মানসিকঃ– মেজাজ খুবই গরম। সামান্যতেই রাগ উঠে পড়ে। বকাঝকা করতে থাকেন।
জিজ্ঞেস করলাম কি বিষয় নিয়ে সহজেই রাগ উঠে আপনার? এই ধরুন, কথার একটু হেরফের হলেই রাগ উঠে পড়ে। সবার সঙ্গেই কি এরকম হয়? রোগী বললেন, রাগটা আমার সাধারণতঃ বাসায়ই হয়ে থাকে। বাইরে সাধারণতঃ কারো সঙ্গে তেমন কিছু হয়না। এরছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।
রোগ বিশ্লেষণঃ– এ কেইসহিস্ট্রি থেকে যা বুঝা গেলো, রোগীর লক্ষণ গুলো পুরোটাই সাইকোটিক, তবে পেছনে সোরা তো থাকবেই। রোগীর যৌন বিশৃঙ্খলা; মলদ্বারে ফিসার; পূর্বে বসন্ত হওয়া; বিশেষকরে আঁচিল; রাগারাগির বিষয়টি ঘরেই বেশী; বাইরে নেই, অর্থাৎ মুখোশপরা– যা সাইকোটিক রোগীদের বেলায়ই লক্ষ্য করা যায় এবং থুজার রোগীর মাঝেই এ লক্ষণটি বিশেষভাবে দেখা দিয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ– আমি পোস্তদানার ন্যায় থুজা ০/২ ঔষধটির একটি দানা ২ ড্রাম শিশিতে গুলে তা থেকে দুই ফোঁটা ঔষধ পৌনে এক গ্লাস পানিতে দিয়ে ভালো করে চা চামচ দিয়ে নেড়েচেড়ে ওখান থেকে আবার এক চা চামচ পরিমাণ ঔষধ রেখে বাকীটুকু ফেলে দিয়ে আবারো আগের মতো করে পানি মিশিয়ে নেড়েচেড়ে চার গ্লাস পর্যন্ত বদলিয়ে রোগীকে প্রথম দিন এক ঝাঁকি এবং দ্বিতীয় দিন দশ ঝাঁকি দিয়ে এক চা চামচ পরিমাণ ওখান থেকে ঔষধ সকালে পেটে একবার এবং পরের দিন ঐ একই নিয়মে আরেকবার খেয়ে ঔষধ বন্ধ রেখে আমাকে সাতদিন পর কি অবস্থা হয় রোগীকে জানাতে বলে দিই এবং আমি না বললে ঐ ঔষধ যেনো আর না খান।
খবর পেলাম প্রথমেই রোগীর রাগটুকু এখন কন্ট্রোল হয়ে গেছে। আগের মতো মেজাজে এখন সহজে গরম হয়না। মলদ্বারের ফিশারের যন্ত্রনাটাও এখন নেই এবং যৌন বিশ্ঙ্খলা প্রায় ৫০% আরোগ্য হয়ে গেছে। আমি শুধু রোগীকে PL 1000 ঔষধ খেয়ে যেতে বলে দিই। আমি না বললে কখনোই যেনো থুজা ঔষধটি না খান, রোগীকে এ নির্দেশনা দিয়ে দিই।
অবশ্য রোগীকে ঔষধের নাম বলিনি। ঔষধ প্রয়োগের পর আজ প্রায় তিন মাস হতে চলেছে, এরমাঝে রোগীকে আর একবারের জন্যেও ঔষধ দিতে হয়নি। আমি রোগীকে আরো কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে থুজা পুণরায় একটি ডোজ প্রয়োগ করবো, নইলে একটি এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করে চিকিৎসার সমাপ্তি ঘোষণা করবো।
মন্তব্যঃ– এখানে আমি বিশেষকরে এ কেইসহিস্ট্রিটি শেয়ার দিলেম এজন্যে যে, অনেকের মন্তব্য শোনা যায়– এল.এম পোটেন্সির ঔষধ নাকি প্রতিদিনই খেয়ে যেতে হয়; তবে তরুণ রোগের বেলায় বিষয়টি স্বতন্ত্র। এখানে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ঔষধ হয়তো ঘন ঘন প্রয়োগ করতে হতে পারে। কারণ তরুণ রোগে দ্রুত জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে। তারপরও লক্ষ্য রাখতে হবে যখনই ঔষধ কাজ করতে শুরু করে দেবে, তখন আস্তে আস্তে ঔষধ বন্ধ করে দিতে হবে।
এছাড়া আমি এ নীতির বিরোধিতা করছি। কেননা, এমন অনেক সমালোচনা শোনা যায় যে, এল.এম পোটেন্সির ২/১ টি পাওয়ার কাজ করার পর নাকি আর কোনো উপকার পাওয়া যায়না! আমি এসব কথা শুনতে শুনতে প্রথমে আমার জীবনীশক্তির ঔষধ গ্রহণ করার বিষয়টি মনের মাঝে উদিত হয় এবং আমি ভেবে নিলাম অর্গাননের নির্দেশ অনুযায়ী যে, ঔষধ কাজ করতে শুরু করলে কোন অবস্থাতেই ঐ ঔষধেরই দ্বিতীয় মাত্রা প্রয়োগ নিষেধ। সুতরাং আমি এ কথাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এল.এম পোটেন্সির বেলায়ও জীবনীশক্তির চাহিদা কেমন সেটার উপর গুরুত্ব দিয়েই ঔষধ কাজ করা শুরু করলে সম্পূর্ণভাবে ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ করে দেই এবং আমার সে অবস্থার কার্যকারিতার বিষয়টিই তাই এখানে তুলে ধরলাম, যেনো এল.এম পোটেন্সির বেলায়ও অন্য কোনো কিছু আলাদা করে ভাবতে না হয়।
আমার মতে গবেষণা হোক্ ঔষধ প্রয়োগ নীতি, রোগী পর্যবেক্ষণ, ঔষধের পুনঃ প্রয়োগ বা কখন ঔষধ পরিবর্তন করতে হবে এসব বিষয় নিয়ে। ফালতু এটা-সেটা, এলকোহল শূন্য ঔষধ তৈরী করা, রোগ নিয়ে আলাদা গবেষণা করা ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। যদি তাই হয়, তবে একজন হোমিও ডাক্তার মানবদেহ বিশেষজ্ঞ হতে পারবে। ফালতু বিশেষজ্ঞের তখন কোনো প্রয়োজন হবেনা। ফালতু গবেষণায় রোগের স্তর পর্যন্তই থাকা যাবে; কিন্তু যা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় রোগীর সেই সাইকোলজিক্যাল স্তরে পৌঁছানো কোন অবস্থাতে সম্ভব নয়!
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ, নেত্রকোনা
চেম্বারঃ-ওহী হোমিও কেয়ার
১৭৪ পূর্ব আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা।
(চালাবন ভাই ভাই মার্কেটের গলি দিয়ে ভেতরে ঢুকে মুন্সীবাড়ী মোড়)