হোমিওপ্যাথির নামে ভণ্ডামি বন্ধ করুন

দয়া করে হোমিওপ্যাথির নামে ভন্ডামি বন্ধ করুন।

আজ হতে অল্প কয়েক দিন পূর্বে নোয়াখালী হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল জনাব ডাঃ বুরহান স্যার উনার ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন।

আর সেটি ছিলো মোটামুটি এমন, একটি ছেলে উনার নিকট চিকিৎসার জন্য আসে, তার সমস্যা রেনাল ফেইলুর।

কারন কি রেনাল ফেইলুর এর ?

স্যার প্রশ্ন করে জানতে পারলেন,এ বাচ্চাকে স্বাস্থ্য ভালো বা সোজা কথায় মোটাতাজা করার জন্য আলফালফা নামক পেটেন্ট সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল। যেহেতু আলফালফা নাম দেয়া আছে,আর যেহেতু পেটেন্ট ঔষধ,তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে,এর মধ্যে প্রধান উপাদান হলো আলফালফা মাদার টিঙ্কচার, এবং সাথে গ্লুকোজ সিরাপ থাকতে পারে।

তো এখন কথা হলো আলফালফা মাদার টিঙ্কচার এ কি কিডনি নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে, না নেই ?

বা আলফালফা মাদার টিঙ্কচার এর এমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না ,যার ফলে রেনাল ফেইলুর হতে পারে ?

অন্য সম্মানিত চিকিৎসক গনের  উত্তর কি হবে তা আমি জানি না,আমার উত্তর হলো না, হোমিওপ্যাথি ফার্মাকোপিয়া অনুযায়ী তৈরিকৃত আলফালফা মাদার টিঙ্কচার,একজন সুস্থ রোগীকে স্বাভাবিক মাত্রায় কয়েক মাস সেবন করালেও তার কিডনি বিকল হবার কোন কারন আছে বলে আমি মনে করি না।

তাহলে সম্মানিত ডাঃ বুরহান স্যার কি ভুল বলেছেন ?

না, অবশ্যই না, কারন ডাঃ বুরহান স্যার একজন অতি উচ্চ নৈতিক মান সম্পন্ন, সৎ এবং সাদা মনের মানুষ,উনি সম্পুর্ন সঠিক কথা বলেছেন।

তাহলে ব্যাপারটা কি ?

ব্যাপারটা হলো কিছু অমানুষের বাচ্চা,যারা মানুষ নামের কলঙ্ক,যারা পশুর চেয়েও অধম,সে রকম কিছু হোমিওপ্যাথি নামধারী কুলাঙ্গার, হোমিওপ্যাথি ধ্বংসের কারিগর,আলফালফা নামক তথাকথিত হোমিওপ্যাথি ঔষধের বোতলে কি কি ঔষধের মিশ্রন দিয়েছে,তা পুরোপুরি জানা না গেলেও, তাতে যে এলোপ্যাথি একটি ষ্টেরয়েড ঔষধ,যার জেনেরিক নাম Dexamethasone sodium phosphate ব্যাবহার করেছে,এতে আমার কোন সন্দেহ নেই ।

বাজারে  Oradexon,Decason,Dexa ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কোম্পানি এ ঔষধ বাজারজাত করে থাকে।

এটি এক ধরনের Steroied বা কৃত্রিম হরমোন :

এ ধরনের ষ্টেরয়েড বা কৃত্রিম হরমোনের অনেক উপকারিতা এবং কার্যকারিতা থাকলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কিন্তু অনেক অনেক বেশি।

একমাত্র একজন অভিজ্ঞ এলোপ্যাথি চিকিৎসক নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট পরিমানে এ ঔষধ সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করে থাকেন।

এলোপ্যাথি অভিজ্ঞ চিকিৎসক ভিন্ন অন্য কোন প্যাথির কোন চিকিৎসক তার নিজ রোগী দেহে এ ঔষধ প্রয়োগের কোন সুযোগ নেই।

কিন্তু হোমিওপ্যাথির কলংক কিছু কুলাঙ্গার হোমিওপ্যাথি ঔষধের নামে দ্রুত স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য এ ঔষধের স্থুল মাত্রা, হোমিওপ্যাথি নামক পেটেন্ট ফাইলে ব্যাবহার করে।

এ Dexamethasone sodium phosphate এর অনেক গুলো মারাত্মক ক্ষতিকর ক্রিয়ার মধ্যে একটি হলো,এ ঔষধ আমাদের শরীরে পানি ধরে রাখে।

আর আমাদের কিডনির কাজ হলো আমাদের শরীর হতে আমাদের বর্জ্য পদার্থ সমুহ প্রস্রাবের সাথে শরীর হতে বের করে দেয়া।

কিন্তু Dexamethasone sodium phosphate এর কাজ হলো শরীরে পানি ধরে রাখা।

তাই অবশ্যই কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে,কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবে,আর তাতে অবশ্যই কিডনি ক্ষতিগ্ৰস্থ হবে।

যেখানে একজন অভিজ্ঞ এলোপ্যাথি চিকিৎসক বিশেষ হিসেব করে, নির্দিষ্ট মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ ঔষধ ব্যবহার করতে উপদেশ দেন,তার অধিক মাত্রায় সেবন বিপদজনক।

সেখানে অতি দ্রুত মানুষ কে পশুর মতো মোটাতাজা করার এ ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনে কিডনি বিকল হবে, এটাতো স্বাভাবিক কথা।

আজকাল পশু মোটাতাজা করার জন্য, বিশেষ করে কুরবানীর সময়,অথবা পশু বিক্রেতা পশু বিক্রির পূর্বে এ ঔষধের ইনজেকশন পশু দেহে প্রয়োগ করে, অথবা এর ট্যাবলেট পশু খাদ্যের সাথে খাইয়ে থাকে পশু মোটাতাজা করার জন্য।

এ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো শরীরে পানি ধরে রাখা,তা আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি।

এ পানি ধরে রাখার কারনে আপাতত কিছুদিন রোগীকে স্বাস্থ্যবান দেখাবে, কিন্তু পরবর্তী কুফল এতো বেশি,যা কি না কল্পনা করাও কঠিন।

এ ছাড়াও সাময়িক যৌন উত্তেজনা বর্ধক একটি এলোপ্যাথি ঔষধ যার  জেনেরিক নাম হলো Sidenafile citrate।

এ ঔষধটি ও বিভিন্ন ভন্ড  হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি সমুহ ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারে হোমিওপ্যাথি ঔষধের নাম দিয়ে বাজারে বিক্রি করছে।

এ ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও খুবই মারাত্মক :

আমি আজকাল বেশ কিছু Erectile dysfunction এবং Premature ejaculation সহ পুরোপুরি Impotence এর রোগী পাই,প্রথম দিকে বুঝতে পারতাম না, সঠিক নির্বাচিত এবং উপযুক্ত শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করার পরও কেন কোন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না ?

পরে ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তাদের প্রায় সবাই হার্বাল, হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথি ওয়ান টাইম সেক্সুয়াল এক্সাইমেন্টের বিভিন্ন এ ধরনের ঔষধ সেবন করেছিলো।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো,এলোপ্যাথি এ ঔষধ সমুহের নির্ধারিত পরিমাণ তাদের ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলে উল্লেখ করা থাকে।

কিন্তু হোমিওপ্যাথি নামধারী কুলাঙ্গার পেটেন্ট কোম্পানির তৈরি ঔষধে কি পরিমান এ ধরনের ঔষধ দেয়া হয়েছে,তার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ তাদের পেটেন্ট ফাইলে উল্লেখ করা নেই।

এমন রোগী দের পরে আর হোমিওপ্যাথি ই নয় শুধু মাত্র,অন্য কোন প্যাথির ঔষধ দ্ধারা ও আরোগ্য করা যায় না।

আমি হোমিওপ্যাথি বোর্ড, হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি সমুহের কতৃপক্ষ বা সমিতির নেতৃবৃন্দের নিকট এবং সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি, হোমিওপ্যাথি নিয়ম নীতি বিরুদ্ধ সকল পেটেন্ট ঔষধ উৎপাদন অতি দ্রুত বন্ধ করার জন্য। 

সে সাথে যারা হোমিওপ্যাথি পেটেন্ট এর নামে এলোপ্যাথি ঔষধ বিক্রি করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

আমি সকল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক গনের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি, দয়া করে কোনভাবেই কোন পেটেন্ট ঔষধ ব্যাবহার করবেন না।

কোম্পানির প্রতিনিধি আপনাকে যতো লোভ ই দেখাক না কেন, আপনি কোনভাবেই পেটেন্ট ঔষধ ব্যাবহার করবেন না, হোমিওপ্যাথি ধ্বংসের সহযোগী হবেন না।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদের সবাইকে সাহীহ্ বুঝ দান করেন।


লেখক :

ডাঃ মুহাঃ মহিব্বুর রহমান।

সিনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, 

নোয়াখালী। ২৪-৭-২০২২.

Next Post Previous Post