আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা’য় হোমিওপ্যাথি

 আগুনে পোড়ার দাগ এবং জ্বালাযন্ত্রনা ভাল করার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা- 

যে কোন কারনে শরীর বা হাত-পা আগুনে দগ্ধ বা পোড়া যেতে পারে। আগুনে পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। সাথে সাথে চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত অঙ্গে ও রোগীর ক্ষতি হতে পারে। এখানে আগুনে পোড়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যাবহৃত কিছু ঔষধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হলো।

Cantharis Vesicator : অল্প, মাঝারী অথবা বেশী, যে পরিমাণেই পুড়-ক না কেন, পােড়ার ব্যথা এবং জ্বালাপােড়া কমাতে ক্যান্থারিস ঔষধটির কোন তুলনা হয় না। এটি পােড়ার ব্যথা এবং জ্বালাপােড়া এত দ্রুত দূর করে যে, পৃথিবীর কোন ঔষধই ইহার সমতুল্য হইতে পারে না। এটি একই সাথে খেতে হবে এবং পানি অথবা ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে বাইরে লাগাতে হবে। দীর্ঘ সময় প্রখর রৌদ্রে থাকার কারণে যে-সব সমস্যা (sunstroke) হয়, তাতেও ক্যান্থারিস প্রয়ােগ করতে পারেন। আগুনে পোড়ার সাথে সাথে ক্যান্থারিস Q জল সহ পোড়া স্হানে লাগাতে হবে এবং ক্যান্থারিস ৬ ঘন ঘন সেবন করতে হবে। তা হলে ফোস্কা উঠবে না এবং জ্বালা যন্ত্রনা কমবে। নারিকেল তৈল ব্যবহারেও জ্বালা যন্ত্রনা কিছুটা কমবে।

পোড়া স্থানে ফোস্কা পড়লে ক্যন্থারিস ৩০ ও ক্যালি মিউর ৬x সেবন করালেও উপকার পাবেন। ফোস্কার জল কাটা দ্বারা বাহির করা ভাল। 

Picricum Acidum : পিক্রিক এসিড় পােড়ার একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। এক ড্রাম পিক্রিক এসিডকে এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরী করতে হবে। এই সলিউশনে তুলা ভিজিয়ে সমগ্র পােড়া অংশ পরিস্কার করতে হবে। ফোস্কা গেলে দিতে হবে তবে চামড়া সানাে যাবে না। পরিষ্কার গজ অথবা তুলা ভিজিয়ে পােড়া স্থানে লাগিয়ে দিয়ে তাকে ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালাে মতাে বেঁধে দিতে হবে। এভাবে তিনচার দিন পর পর ব্যান্ডেজ খুলে পাল্টে দিতে হবে। পাশাপাশি পিক্রিক এসিড রােজ তিনবেলা করে খাওয়া উচিত। এটি একই সাথে জ্বালা-পােড়া নিবারক, ব্যথানাশক, এন্টিসেপটিক এবং এন্টিবায়ােটিকের কাজ করে থাকে।

পোড়া ক্ষতে দূর্গন্ধ হলে এসিড কার্বলিক ৬ দিনে ৪ বার সেবন ও এসিড কার্বলিক Q মাদার নারিকেল তৈল সহ বাহ্য প্রয়োগ করতে হবে। 

Urtica Urens : এটিও পােড়ার এবং এমনকি রোদে পােড়ার ক্ষেত্রে একটি ভালাে ঔষধ। ৬ বা ৩০ শক্তিতে খেলে এবং পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে জ্বালা এবং ব্যথা দূর করে দেয় এবং তাড়াতাড়ি ঘা শুকাতে সাহায্য করে।

Arsenicum Album : শরীরের অনেক গভীর পর্যন্ত যদি পুড়ে যায়, তবে আর্সেনিক খাওয়াতে হবে। পােড়া জায়গাটি ধীরে ধীরে কালাে হয়ে যায়, যাতে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে বুঝা যায়। আক্রান্ত স্থান ফুলে যায় এবং তাতে ছুড়ি মারার মতাে ব্যথা হয়। রোগী ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ে, এক পজিশনে বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। সে মনে করে ঔষধ খেয়ে কোন লাভ নেই, তার মৃত্যু হবে এখনই।

Causticum : পােড়ার পরবর্তী যে-কোন জটিলতা নিরাময়ের জন্য কষ্টিকাম ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে বলেন যে, "সেই পােড়ার ঘটনার পর থেকেই আমার এই সমস্যাটি দেখা দিয়েছে"- এসব সমস্যার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কষ্টিকাম প্রয়ােগ করুন।

অর্থাৎ পোড়া ক্ষত/দগ্ধস্থান কিছুটা ভাল হওয়ার পরও যদি পুনরায় বেদনা করে বা পেকে যায় বা পুঁজ হয় বা চুলকায় তাহলে কষ্টিকাম ২০০ ও ক্যালি মিউর ১২x সেবন করালে উপকার পাবেন। আবার  পোড়া ক্ষতের সাদা দাগ মিলাইবার জন্য কষ্টিকাম ২০০, ১ এম, কেলি মিউর ১২x, ৩০x কিছুদিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পোড়ার শেষ অবস্থায় চর্ম নষ্ট বা টিসু নষ্ট হতে থাকলে ক্যালি বাইক্রম ২০০ দিনে ২ বার প্রয়োগ করতে হবে।

পোড়া ক্ষত কিছুতেই আরোগ্য না হলে এক্স-রে ২০০ দিনে ২ বার সেবন। পরবর্তীতে ১ এম প্রয়োগ করতে হবে।

বিঃদ্রঃ-  আগুন, গরম বাষ্প, গরম গ্যাস, গরম পানি প্রভৃতি যেভাবেই পুড়-ক না কেন, তার পরিমাণ যদি খুব বেশী হয় তবে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

লেখক : 

ডা. এম আল মামুন 

ডিএইচএমএস-ঢাকা। 

Next Post Previous Post