দ্বীনের জ্ঞান লাভের ফলে মানুষের চিন্তা ও কাজে যে প্রভাব পড়ে

 নিয়মিত পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করলে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভের সুযোগ হয়। এটা বুঝতে পারা যায় যে, দুনিয়ার সফলতা-ব্যর্থতাই প্রকৃত সফলতা/ব্যর্থতা নয়, বরং আখেরাতের সফলতা/ব্যর্থতাই প্রকৃত সফলতা/ব্যর্থতা। 

মানুষ তার স্রষ্টাকে এবং নিজেকে নতুন করে চিনতে সক্ষম হয়। সে বুঝতে পারে, মানুষ পৃথিবীতে দায়িত্বহীন নয়। আল্লাহ মানুষের পরিচয়, মর্যাদা, দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য সব ধরনের সক্ষমতা ও নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। এসব সক্ষমতা ও নির্দেশনাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপরই নির্ভর করছে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত কল্যাণ ও সফলতা।

মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল, সে আল্লাহর দাস এবং খলিফা। এ পরিচয় ও মর্যাদার দাবি হচ্ছে, প্রথমত, আল্লাহর দাস বা গোলাম হিসেবে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর  গোলামি বা দাসত্ব করবে, শুধু তাঁরই নিরংকুশ কর্তৃত্ব মানবে এবং তিনি ছাড়া অন্য কারও শর্তহীন আনুগত্য করবে না। আবার অন্য মানুষকে নিজের গোলামে পরিণত করবে না, এমনকি নিজের মনের কুপ্রবৃত্তির দাসেও পরিণত হবে না। কারণ আল্লাহই হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টিকূলের সৃষ্টিকর্তা, মালিক, প্রতিপালক। সমস্ত সৃষ্টি তাঁরই বিধান মেনে চলছে। কেননা তিনিই বিশ্ব বিধাতা, সমস্ত আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন। তিনিই সমস্ত জ্ঞান ও শক্তির ধারক। তিনি অসীম ও অনন্ত। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান। তিনি কারও অধীন নন বরং সকলেই তাঁর অধীন। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তাঁর কোন অনরূপ ও প্রতিরূপ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সর্বত্র বিরাজমান। তিনি দৃশ্য, অদৃশ্য, প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু দেখেন। তিনি সব ধরনের অভাব ও ত্রুটি থেকে মুক্ত। তিনি ন্যায় বিচারক ও দয়াময়। তাই তিনিই সমস্ত কর্তৃত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তিনি ছাড়া আর কেউ নিরংকুশ কর্তৃত্ব করা বা আনুগত্য লাভের যোগ্য নয়।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থাকে স্রষ্টার বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা।

মানুষ যখন সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ঐশীবানীর মাধ্যমে এই বিষয়গলো জানতে ও বুঝতে পারে, আল্লাহর পরিচয়, মর্যাদা, মহত্ত্ব, ক্ষমতা ও দয়াকে উপলব্ধি করতে পারে এবং ইসলামি জীবনবোধের সাথে একাত্মবোধ করে, তখন দায়িত্ব হয় কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহকে নাজির জেনে একমাত্র আল্লাহর গোলামি করার এবং রাসূলের অনুসরণ করার ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে ঈমান আনা। আর ঈমানের অনিবার্য দাবি হলো "পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে দাখিল হওয়া এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ না করা। পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে দাখিল হওয়া বলতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হুকুম বা ইচ্ছার কাছে সোপর্দ করা বুঝায়। যারা এভাবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাদেরকে "মুসলিম" বা আত্মসমর্পণকারী বলা হয়। 

শুধুমাত্র আল্লাহর আইন ও রাসূলের অনুসরণকারি সত্ লোকের শাসনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কোন ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনেই ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন সম্ভব। কিন্তু যে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসলামি জীবনাদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয় না, বরং শরীয়া আইনের পরিপন্থী আইনে পরিচালিত হয়, সেখানে পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়া অসম্ভব। 

তাই আামাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহ সমস্ত নবী-রাসূল সর্ব প্রথম দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আর দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামকেই বলা হয় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।

দ্বীন কায়েমের আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদ) করা ফরজ।

দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সংঘবদ্ধ সংগ্রাম করার নির্দেশ দিয়েছেন।

Next Post Previous Post