হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় পরীর আছর থেকে মুক্ত হলো শরীফ

 কাওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া ১৬ বছর বয়সী শরীফ কিছুদিন যাবত পরীর আসরে আক্রান্ত। বাবা মাওলানা সাহেব সন্তানকে চিকিৎসার জন্য ঝাড়ফুঁক তাবিজ তুমার এর মাধ্যমে চিকিৎসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর আমার শরণাপন্ন হয়ে জানতে চাইলেন এ ধরনের চিকিৎসা হবে কি ? ইতিমধ্যে আমার সামনে বসা ছেলেটি আমার সিলিঙের দিকে হাত তুলে বলতে লাগল, ওই যে সাতজন ওখানে বসে আছে আমাকে  নিয়ে যেতে চায় এবং ওদের সাথে হাসাহাসি করছে,  অট্টহাসি দিচ্ছে। তার আঙ্গুলের নির্দেশিত স্থানের প্রতি আমরা তাকিয়ে দেখলাম,  কিছুই দেখা গেলো না। তার বাবা ও কিছু  দেখতে ফেলো না। শুধু সে বারবার  বলতে লাগলো ওই যে সাতজন  পরী,  আমাকে নিয়ে যেতে চায়। 

তার বাবাকে  প্রশ্ন করে জানতে পারলাম বিগত প্রায় একমাস যাবত পরীরা তাকে আছর করেছে। বাড়িতেও মাঝেমাঝে ওদের সাথে হাসাহাসি করে। মাঝে মাঝে এলোমেলো কথাবার্তা বলে।  মাথার তালু উড়ে যাচ্ছে বলে। আবার মাঝে মাঝে বলে আমি পাগল হয়ে যাব। 

কখনো বলে আমাকে ওরা সাত জনে নিয়ে যাবে। রাতে অন্ধকারে ঘুমাইতে পারে না। বাতি জ্বালাইয়া রাখিতে হয়। কারো শব্দ, অধিক কথাবার্তা সহ্য করতে পারে না। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কোমরের দিকে পিনপিন ব্যথা বারবার প্রস্রাবের বেগ হয় । হাত পায়ের তালুতে জালা। 

 ক্ষুধা  ও পিপাসা বেশি। মিষ্টি ও লবণ প্রিয়। 

এই রোগীটিকে  আমি প্রথমে ক্যানাবিস ইন্ডিকা দেওয়ার পর তার পরী দেখা বন্ধ  হয়েছিল।  পরবর্তীতে এন্টিমায়েজমেটিক মেডিসিন মেডোরিনাম প্রয়োগ এর

মাধ্যমে তার চিকিৎসা সমাপ্ত করেছিলাম। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চিকিৎসার জন্য এলে প্রশ্ন  করে জানতে পারি এখনো ভালো আছে।হোমিওপ্যাথি ক্রনিক  ডিজিজ  চিকিৎসা বিজ্ঞানের  এর সূত্র মতে ছেলেটি  সাইকোটিক মায়াজমে আক্রান্ত ছিল। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে দৃষ্টিবিভ্রম বা ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন বলা হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি কোন উদ্দীপক বা দৃশ্যমান বস্তু ছাড়াও অলৌকিক কিছু দেখতে পায় যাহা অন্যের চোখে দৃশ্যমান হয় না। মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের মধ্যে গ্রে ম্যাটার ও হোয়াইট ম্যাটার এর অস্বাভাবিকতা জনিত  কারণে দৃষ্টিবিভ্রম বা ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশনের সৃষ্টি হয়। হ্যালুসিনেশন নিজে কোন রোগ নয়,অন্য রোগের উপসর্গ হিসেবে মানসিক লক্ষ্মণ নিয়ে প্রকাশিত হয়। 

মস্তিষ্কে নিউরনের সমস্যায়, সিজোফেনিয়া,   মুড ডিসওডার, ডিল্যুশনাল ডিসওডার ও শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইড এর তারতম্য ঘটলেও  ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশান দেখা দিতে পারে। 

হোমিওপ্যাথি ক্রনিক ডিজিজ চিকিৎসার বিধানমতে এই রোগের জন্য সাইকোটিক মায়াজম বা অপচিকিৎসা প্রাপ্ত গনোরিয়াকে দায়ী করা হয়। তাই এই সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ সাদৃশ্যের এন্টিসাইকোটিক শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে চিকিৎসাকার্য পরিচালিত হলে দ্রুত আরোগ্য সাধন  সম্ভব। 

  (চার বছর আগের চিকিৎসার স্মৃতি থেকে)  

লেখক : 

ডা এম মোহসীন চৌধুরী 

হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কনসালটেন্ট 

সোনাগাজী, ফেনী।

২৫ জুলাই ২০২২

Next Post Previous Post