হোমিওপ্যাথিক আন্দোলন : আমার ভাবনা

আন্দোলন এর উৎপত্তি শব্দ কম্পন; দোলন; আলোড়ন।

আমরা এক কথায়, কোনো লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য প্রচার, উত্তেজনা, সংঘবদ্ধ বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি।  দোলন, অথাৎ দোলনা যেমন স্থায়ী থাকে না। একটু বাতাস পেলেই আপন গতিতে আস্তে হোক জোড়ে দুলতে থাকে। আন্দোলন ও ঠিকই নিজ গতিতে চলমান থাকে। 

আন্দোলন নিয়ে কয়েক জন বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি 

সকল সৃজনশীলতাই স্বীকৃতি পেয়ে থাকে আন্দোলনের মাধ্যমে। — জোসেফ সি জিংকার

গন্তব্য কিছুই নয় বরং গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আন্দোলনই হলো সবকিছু। — এডওয়ার্ড বার্নেস্টেইন

আন্দোলনই পারে আরেক আন্দোলনের জন্ম দিতে। আন্দোলনই পারে শক্তি জোগাতে এবং আন্দোলনই পারে জীবনে বাচাতে। — মাইকেল ডি ওলেরিও

এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি আন্দোলন আন্দোলন বিহীন কোন কিছুই আদায় করা সম্ভব না।  তবে আমাদের জানতে হবে কোন আন্দোলন করছি?? আন্দোলনের পরবর্তী  আমাদের লক্ষ্য কি?? আন্দোলনের ফসল কি হবে?? 

যদি কিছু পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করি, তাহলো অবশ্যই লক্ষ্য স্থির  করতে হবে, এ পরিবর্তন করার পর আমি/আমারা পরিবর্তে বিপরীতে জাতিকে কি দিবো??

কথায় আছে কিছু করতে হলে, ইচ্ছে এবং সামর্থ্য দুটাই দরকার। 

আমরা নিশ্চয়ই জানি আন্দোলনের সাথে সংগঠনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

সংগঠন কাকে বলে?

সাধারণত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত উপকরণাদির সুশৃংখল সমন্বয় বিধানের প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলে। আমারা যদি আরও একটু গভীর ভাবে বলি তাহলে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়ঃ- যতই বলা যায় – “পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে প্রতিষ্ঠান/সংগঠন কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যে প্রক্রিয়ায় উৎপাদন উপকরণের সমন্বয় ও কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের নিশ্চয়তা বিধান করা হয় তাকে সংগঠন বলে। 

আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে বেশি ব্যাখ্যা/বিশ্লেষণ করবো না। এবার আসি আমাদের হোমিওপ্যাথি তথাকথিত বর্তমান আন্দোলন নিয়ে। 

আমরা বরাবর লক্ষ্য করছি যে একদল ডাক্তার/ছাত্র  আন্দোলন বলে অনলাইনে লেখালেখি করছি। অনেক সংগঠন ও ইতি মধ্যে  নামে বে নামে আমাদের মধ্যে  বিদ্যমান রয়েছে।  অনেক সংগঠন মানব বন্ধন সহ বেশ কিছু কর্মসূচি ও করেছেন। কোন সংগঠনের ইমেজ  ঠিক রাখা এবং অধিকার আদায়ে এসব কর্মসূচির বিকল্প নাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন আন্দোলন মানেই কি শুধু বিক্ষোভ  করা?? 

উত্তর না!!! আন্দোলনের অনেক রূপ আছে। যার সংক্ষিপ্ত রূপ আমি শুরুতে দিয়েছি। আন্দোলনের চুরান্ত রূপ হলো ময়দানে বিক্ষোভ মিছিল এমন কি অনেক মহসী যুদ্ধকে চুড়ান্ত আন্দোলন বলেছেন। 

কিন্তু আপনি যদি সংগঠক হন আপনাকে সাংগঠনিক কাজ করতে হবে এটাও একটা আন্দোলন।  আপনাকে সাংগঠনিক আনুগত্য করতে হবে এটাও আন্দোলন।  আপনাকে সংগঠন মুজিবুত করতে হবে এটাও আন্দোলন।  আপনাকে জনমত তৈরি করতে হবে এটা সব চেয়ে বড় আন্দোলন। 

এখন আসি সংগঠন ছাড়া কি আন্দোলন হয় না??  

উত্তর হবে না!! অবাক হলেন, অবশ্যই না!! কারন আন্দোলন করতে হলে সঙ্ঘবদ্ধ  হতে হবে। আর সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার পর অবশ্যই আপনাকে নেতা তৈরি করতে হবে। আর এটাই হলো সংগঠনের প্রাথমিক রূপ। এক কথায় আন্দোলন হলো সংগঠনের সামর্থ্যক শব্দ যা একে অন্যের সম্পূরক।  অথাৎ সংগঠন ই আন্দোলন আন্দোলন ই সংগঠন।  

এবার আসি মূল কথায় : আমরা অনেকে বলছি বোর্ড চেয়ারম্যান দূর্নীতিবাজ,  পদত্যাগ চাই।  সে- দূর্নীতি করতে পারে অধিকার দিতে পারে না। যদি এটা আপনার ব্যক্তিগত মন্তব্য হয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা যদি আন্দোলনের রূপ হয়,  তাহলে আন্দোলনের সদূর প্রশ্ন থেকে যায়?? আপনার আন্দোলনের বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিপরীতে হোমিও সমাজের জন্য কাকে  রেখেছেন?? এটা কি পরিস্কার করেছেন?? যদি না করে থাকেন তাহলে আন্দোলনের রূপ রেখা পরিবর্তন করে  সৎ নেতৃত্ব তৈরি করার কাজে লেগে যান। এটা বড় আন্দোলন আপনার জন্য।

যদি এ রূপ রেখা না থাকে আপনার আন্দোলন আপনার  স্বজাতির ক্ষতি বয়ে আনবে।  

এখন যদি বলেন আমাদের ডাঃ পদবী নাই,  আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে তাহলে ঘড়ে বসে চুড়ি পরে থাকবো??

আমি বলবো এমন প্রশ্নে আবেগ যাদের মাথায় কাজ করে নিশ্চয়ই তাঁরা হোমিও প্রেমি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো ডাঃ পদবী নাই এটা কিন্তু ঠিক না। এখনও ৮৩ সনের আইন বাতিল হয় নাই। আপনি এটা দাবি কররতে  পারেন আমাদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। আর আপনি লক্ষ্য করবেন গ্রেফতার হয়রানি এটা বিছিন্ন ঘটনা। জাতীয় ভাবে যদি সিদ্ধান্ত হতো ডাঃ লেখা একদম পারবেন না। তাহলে সারা বাংলাদেশে অভিযান চলতো। এমন কি হয়েছে??

অনেকে বলবেন এসব মানি না একক একা আন্দোলন করবো। ইতিমধ্যে যা হয়েছে। আগেই এর ব্যাখ্যা  দিয়েছি একক কোন আন্দোলন হয় না। হয় কৌতুক আর ঠাড্ডা।

আপনাকে ইতিহাস জানতে হবে। আপনাকে জাতীয় রাজনৈতিক জ্ঞান রাখতে হবে। এ পর্যন্ত একক কোন আন্দোলন শুভ ফল বয়ে আনে নাই। 

যে একক ভাবে আন্দোলনে গেলো এ আসলে কতটুকু সফল?? সফল কতটুকু সেটা  পরে,  তবে সে তার সংগঠন ১০০% ব্যর্থ!!  যদি এমন হতো সে কোন সংগঠন করে নাই। কোন সংগঠনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। এজন্য সে নিজে আবেগে হোক বুঝে হোক না বুঝে হোক আন্দোলনে একা অবস্থান নিয়েছেন। তখন নিশ্চয়ই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য ছিলো। এবং হোমিওপ্যাথ সমাজ তথা সকল সংগঠনের লজ্জা হতো। এখন ওনি একটা সংগঠনের দায়িত্বশীল সে ইতিপূর্বে দাবি ও করেছেন তার কাথয় ১০ জন কর্মী হলেও আসবে। যতটুকু জানি সে কাহকে না জানিয়ে একা অবস্থান নিয়েছেন। তাহলে এ ব্যর্থতা তার নিজের এ লজ্জা তার দায়িত্বশীলদের এ লজ্জা  তার সংগঠনের। কারন তার সংগঠনে আনুগত্য নাই।  এ লজ্জা কোন হোমিও সমাজের না। 

বর্তমানে দেশে একাধিক  জাতীয় ইসু চলমান। সামনে নির্বাচন,  রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন কি যে প্রেস ক্লাবে গিয়ে দেশের জনগনের যে কোন অধিকার নিয়ে  সংগঠন গুলো কথা বলেন। সে প্রেস ক্লাবের জায়গা দখল নিয়েও জাতীয় ইসু চলে এসেছে। এমন অনেক অগনিত জাতীয় ইসুর মাঝে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা অবহেলিত অংশের দিকে প্রশাসন মিডিয়ার সময় ব্যায় করার সময় হয়তো নাই। জনগনের ও দৃষ্টি অন্য দিকে। আমাদের উচিৎ আইনি যে লাড়াই চলছে এটা গতিশীল রাখা। এবং  আদালত / সরকার হতে এমন কিছু নেওয়া যাতে মামলা চলাকালীন যেন আমাদের হয়রানি আর না করা হয়।  এবং সামনে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রীক ইসু নিজেদের সুযোগে ব্যবহার করা। আমাদের দেশে বিশাল সংখ্যক হোমিও ডাক্তার / ছাত্র ভোটার রয়েছেন।  আমাদের দেশে ৪০% মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এটাকে পূজি করে পরবর্তী সরকার যেই হোক অগাম দাবি আমাদের পৃথক মন্ত্রণালয় সেই সাথে হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিল গঠনে ভূমিকা রাখা। 

সর্বশেষ বলবো ❝নিহত হওয়ার চেয়ে আহত হয়ে থাকা ভালো❞ এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ভাবনা  দয়া করে আংশিক পড়ে কেহ মন্তব্য না করে পুরো লেখা পড়ে মন্তব্য করবেন। এবং নেকেটিভ মন্তব্য করার আগে আমার যুক্তি/চিন্তার বিপরীতে আপনার চিন্তা যুক্তি দিবেন। 


লেখকঃ-

মুহাঃ আব্দুল মতিন সরকার 

সভাপতি 

হোমিওপ্যাথিক ছাত্র ও চিকিৎসক উন্নয়ন সংগঠন। 

রাজশাহী বিভাগীয় শাখা।

Next Post Previous Post