সংক্ষিপ্ত আকারে হোমিও বিষয়ক প্রশ্ন ও উত্তর
ডাঃ এ.বি.এম.শহীদুল্লাহ্
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
১) একদৈশিক পীড়া কাকে বলে? কিভাবে এর চিকিৎসা করতে হয়?
উত্তরঃ– যে সমস্ত স্থায়ী রোগ সমূহের অল্প সংখ্যক লক্ষণ থাকে তাদেরকে একদেশিক পীড়া বলে। শুধু এক দুইটি প্রধান লক্ষণ দেখা যায় এবং সেগুলো দ্বারা অন্যান্য লক্ষণ গুলো আবৃত থাকে। এ রোগ শরীরের এক অংশেই দেখা দেয়। যেমন– আভ্যন্তরীণ ভাবে বহুদিনের এক প্রকারের শিরঃপীড়া, এক জাতীয় উদরাময় বা অনেক দিনের পুরাতন হৃদরোগ প্রভৃতি। এর মাঝে দ্বিতীয় প্রকারেরটি হলো– বাহ্যিক ধরনের, যেমন অনেক দিনের স্থায়ী চর্মরোগ, একজিমা, ঘা ইত্যাদি।
চিকিৎসাঃ– এ রোগের লক্ষণ অল্প সংখ্যক হওয়ায় ঔষধ নির্বাচন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে কিন্তু যদি যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ করা যায় তবে এক দুইটি লক্ষণ ছাড়া আরও লক্ষণ পাওয়া যায়। যেমন– ধরি কোনো সুস্থ সবল একজন মানুষ, দেখলে মনে হয় তার কোন পীড়া নাই; কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে প্রায়ই তাঁর এক ধরনের মাথাব্যথা হয় এবং সে মাথাব্যথাটি সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আরম্ভ হয়ে যতো বেলা বাড়ে ততই বাড়তে থাকে এবং বিকালে অবসান ঘটে। রোগীর গরম কাতর, গরমকাল ভালো লাগেনা, কোনদিনই গোসল ছাড়া থাকতে পারে না, শীতের মাঝে অন্ততঃ এক বেলা হলেও গোসল করে, কখনো উদরানয় হয় নাই। সুতরাং উক্ত লক্ষণ গুলো বিবেচনা করলে নেট্রাম নিউর ঔধধটি তার জন্য প্রযোজ্য হয়।
২) পর্যায়ক্রমিক পীড়া কাকে বলে? কিভাবে এর চিকিৎসা করতে হয়?
উত্তরঃ– লক্ষ্য করলে দেখা যায় কতগুলো ঔষধের প্রাথমিক ক্রিয়ার প্রথমে বা পরে অন্যরকম কতগুলো লক্ষণ প্রকাশিত হয় যারা আংশিকভাবেই হোক বা ঐ মূল লক্ষণের অধীনেই হোক্, পরস্পরের বিপরীত। কিন্তু সেগুলো বাস্তবিক হলেও, কখনোই ঔষধের গৌণ ক্রিয়া বা জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়া নহে। তারা প্রাথমিক ক্রিয়ারই পর্যায়ক্রমিক অবস্থা মাত্র। যেমন– এপিস ও ব্রায়োনিয়া প্রভৃতি ঔষধের কখনো কখনো তৃষ্ণাহীনতা থাকলেও, কখনো অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত থাকতে দেখা যায়।
৩) সূর্যাবর্ত শিরঃপীড়া বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ–সূর্য উঠার সাথে সাথে যে শিরঃপীড়ার সূচনা হয়ে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়ে সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলতে থাকে এবং তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে শিরঃপীড়াও কমতে থেকে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় শিরঃপীড়ারও অবসান হয় তাকেই সূর্যাবর্ত শিরঃপীড়া বলে?
৪) হে-ফিবার কাকে বলে? ইহার উৎপত্তি কোন মায়জম থেকে? কিভাবে এর চিকিৎসা করতে হয়?
উত্তরঃ– সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই বা আবহাওয়া ভেদে বা ফুলের গন্ধে ইত্যাদি অবস্থায় প্রচন্ড হাঁচি শুরু হয়, জ্বর ভাব থাকে তাকেই হে-ফিবার বলা হয়।
সবগুলো মায়াজমই মেশে গিয়ে যে টিউবারকুলার দোষের সৃষ্টি হয়, তা থেকেই এ রোগের উৎপত্তি।
পীড়ার বাড়াবাড়ি অবস্থায় প্রথমে সাময়িক উপশম দানকারী ঔষধ প্রয়োগ করে পীড়ার উগ্রতা কমলে, তারপর তখনকার রোগীর ধাতু গত অবস্থা সদৃশ্যে ঔষধ নির্বাচন করে এরোগের চিকিৎসা করতে হয়।
৫) টিউবারকুলার মায়াজম এর উৎপত্তি বলতে কি বুঝ? এর শ্রেণীবিভাগ কর?
উত্তরঃ– সোরার সঙ্গে সিফিলিস বা সোরার সঙ্গে সাইকোটিকের মিশ্রণের ফলে যে অবস্থায় সৃষ্টি হয় তাকেই টিউবারকুলার মায়াজম বলে। আসলে এটি একটি দোষগত অবস্থা।
শ্রেণীবিভাগঃ– পিতৃবা মাতৃ দেহে সোরা ও সিফিলিসের যদি সংমিশ্রণ ঘটে তবে সন্তানের দেহে ঐ মিশ্রণের অবস্থাটি সন্তানের দেহে টিউবারকুলার দোষে পরিণত হয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে, তন্মধ্যে স্ক্রুফিউলা, সিউডো-সোরা, সাইকো-সোরা, ষ্ট্রুমা, টিউবরকুলোসিস ও কনজোমশন এই কয়টি একই টিউবারকুলার অবস্থার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা।
স্ক্রুফিউলাঃ– এখানে সোরার সঙ্গে সিফিলিসের সংমিশ্রণে স্ক্রুফিউলার উৎপত্তি ঘটে। শরীরের গ্ল্যান্ড গুলো আক্রান্ত হয়।
সিউডো-সোরাঃ– নিজ জীবনে কেহ সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়ার দরুন তা চাপা দেওয়ার ফলে যে অবস্থায় সৃষ্টি হয় তা পিতৃদেহে সোরার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে সন্তানের দেহে সিউডো-সোরিক রূপ নিয়ে প্রবেশ লাভ করে এবং সন্তানের দেহেই তা টিউবারকুলার দোষের ভিত্তি গড়ে।
সাইকো-সোরাঃ– আর সাইকো-সোরার বেলায় নিজ জীবনে কেহ গনোরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর তা চাপা দেওয়া প্রথায় আরোগ্য করলে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে যে অবস্থার সৃষ্ট হয় তাকে সাইকল-সোর বলে এবং সন্তানের দেহে শুষ্ক জাতীয় টিউবারকুলার দোষের সৃষ্টি করে।
মূলতঃ ক্ষতকারী রোগ, যেমন– আলসার, ক্যান্সার, রক্তস্রাবী রোগ, রাজ যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ গুলো সিউডো-সোরা জাত টিউবারকুলার দোষেরই পরিচয় বহন করে। অন্যদিকে শুষ্ক জাতীয় দৈহিক ক্ষয় সাইকো-সোরা থেকেই উৎপত্তি লাভ করে থাকে। যেমন–কনজামশান। আবার রিকেট, ষ্ট্রুমা ইত্যাদি শুষ্ক জাতীয় ক্ষয়ও কনজামশান দ্বারাই সৃষ্ট হয়ে থাকে।
৬) মায়াজমের দিক থেকে কোন্ মায়াজমের রোগীর আচরণ কেমন?
উত্তরঃ– সোরার রোগীরা মানুষের সঙ্গে সহজেই সুন্দর আচরন করে থাকে। যেমন–কেউ কিছু অন্যায় করলে সোরার রোগী তাঁকে সহজেই ক্ষমা করে দেয়।
সাইকোসিসের রোগী শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা করে; সিফিলিসের রোগীরা কোনো অবস্থাতেই ক্ষমা করে না।
৭) সোরা, সিফিলিস ও সাইকোটিকের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু বল?
উত্তরঃ–সোরাঃ–সোরা হলো আদি রোগবীজ। প্রত্যেকের জন্মসূত্রেই এর উৎপত্তি। এর দ্বারা মানুষের মনের কু-প্রবৃত্তিকে বুঝানো হয়ে থাকে এবং এর দরুণ যখন মানুষের চর্মপীড়া দেখা দেয় এবং তা মলম দ্বারা প্রচাপিত করা হয়, তখন মানুষের মন আরও দূষিত হয়ে পড়ে এবং মানুষ তখন কুসংসর্গে লিপ্ত হয়ে যৌন রোগ গুলোর আগমন ঘটায়।
সিফিলিসঃ–কু-সংসর্গের দ্বারা যখন একটি লোক গণিকার কাছ থেকে লিঙ্গে ক্ষতকারী রোগের আগমণ ঘটায়, লিঙ্গমুন্ডে একটি বিশ্রী ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাকেই সিফিলিস বলে এবং এ ক্ষতটিকে বিসদৃশ চিকিৎসায় লুপ্ত করলে ভবিষ্যতে দেহে নানা জটিলতার আগমণ ঘটে বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে।
সাইকোসিসঃ–কু-সংসর্গের দ্বার যখন একটি লোক গণিকার কাছ থেকে লিঙ্গ পথে পুঁজ উৎপাদনকারী গনোরিয়ার স্রাব দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখনই কিন্তু সাইকোটিকের উৎপত্তি লাভ করেনা। এটার উৎপত্তি তখনই হয় যখন কুচিকিৎসার প্রভাবে গনোরিয়ার পূজ উৎপাদনকারী স্রাবটি ও ভালোর নামপ অদৃশ্য হয়ে যায় এবং শরীরে আঁচিল জাতীয় উদ্ভেদের সৃষ্টি করে, তখই জানতে হয় সাইকোসিস প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
৮) জীবনীশক্তি কাকে বলে? মানবদেহে এর কার্যকারিতা বর্ণনা কর?
উত্তরঃ–দেহ রাজ্যের শাসনকর্তাকে জীবনীশক্তি বলে। মানুষের সুস্থাবস্থায় আত্মস্বরূপই হলো জীবনীশক্তি। মানুষের দেহের প্রতিটি অংশের উপরই জীবনীশক্তি স্বাধীনভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করে; ফলে আমরা দেহের প্রতিটি যন্ত্রের কার্য ক্রিয়ার কোনো অনুভবই করিনা। হৃৎপিণ্ডের ধুক্ ধুক্ শব্দ ও রক্ত পাম্প করে সারা দেহে প্রেরণ, ফুসফুসে বায়ু চলাচল ইত্যাদি কার্য প্রণালীর কোনোকিছুই আমরা অনুভব করিনা। জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে তখন আমরা নিজেদের কার্যাদি সম্পাদনে তৎপর হতে পারি।কিন্তু যখনই মানুষ অসুস্থ হয়, তখনই আবার সেই অসুস্থতার বার্তা আমরা জীবনীশক্তি দ্বারাই টেরপেয়ে থাকি। এই যে, দেহ যন্ত্রের নিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটিই হলো জীবনীশক্তি। আত্মার সমধর্মী হলো জীবনীশক্তি। আত্মা দেহত্যাগ করলেই জীবনীশক্তির বিলুপ্তি হয়।
৯) আদি রোগবীজ সোরার প্রাথমিক নিদর্শন গুলো কি?
উত্তরঃ– সোরার অভিব্যক্তি জন্মসূত্রেই মানুষের মনে থাকে এবং এটি সাধারণতঃ মানুষের কুৎসিত মনের বিশৃঙ্খল অবস্থা হেতু বা মন কুন্ডয়ন রূপে চলতে থাকে, তখন জীবনীশক্তির প্রভাবেই তা চর্ম কুন্ডয়ন বা চর্মের উপর চুলকানি রূপে প্রাথমিক নিদর্শন রূপে দেখা দেয়। কিন্তু যদি তা বাহ্যিক কোনোকিছু প্রয়োগ করে অদৃশ্য করা হয়, তখন তা ভেতরমুখী হয়ে মনকে আরও শতভাগ কলুষিত করে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে ফেলে। মানুষ তখন তাঁর সৎ গুণাবলী হারিয়ে ফেলে কুপথে গমন করে। তাই সোরাকে যৌন সংসর্গের মদমত্ততাও বলা হয়ে থাকে।
১০) লক্ষণ কাকে বলে? কোন্ লক্ষণের মূল্য বেশী?
উত্তরঃ– একজন মানুষ সুস্থ থাকা অবস্থায় যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান ছিলো, কিন্তু এখন রোগে সেই সেই অবস্থার যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঐ মানুষটি নিজে অনুভব করছে, রোগীর সেবা-শুশ্রূষাকারীরা যে অবস্থা লক্ষ্য করছেন এবং চিকিৎসক যা উপলব্ধি করতে পারছেন তাহাই হলো লক্ষণ।
প্রথমতঃ মানসিক লক্ষণই সবচেয়ে বেশী মূল্যবান। কেননা, হোমিওপ্যাথিতে যেহেতু রোগের নয়, রোগীর চিকিৎসা করতে হয়, সে হেতু একটি রোগীর আচার-আচরণই তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বার পরিচয় বহন করে বিধায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বেশী। কেননা, কোনো একটি রোগে যদি কয়েকজন আক্রান্ত হয়, তাহলে তাঁদের নির্দিষ্ট এ রোগটির বেলায় দেখা যাবে যে, বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে এবং রোগ এক হলেও ঐ মানসিক ভিন্নতার জন্যে তখন ঔষধও ভিন্ন হয়ে যায়, রোগী একজনের থেকে অন্যজন ভিন্ন কথা বলে; আর এ কারণেই তাই মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।
১১) রোগ আরোগ্যের ধারাগুলো বর্ণনা কর?
উত্তরঃ– ডাঃ হেরিং আরোগ্যের এ ধারা আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে সে ধারা গুলো হলো– রোগ গুলো দেহের ভেতর থেকে বাহিরের দিকে, কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে, উপর থেকে নীচের দিকে ও প্রধান অঙ্গ থেকে অপ্রধান অঙ্গে সরে আসতে থাকে।
১২) একটি রোগীর দেহে তিনটি মায়াজমই যদি থাকে, তবে কিভাবে তাঁর চিকিৎসা প্রদান করতে হবে?
উত্তরঃ– রোগীর গায়ে যদি তিনটি মায়াজমই বিদ্যমান থাকে, তবে রোগীর লক্ষণ গুলো সংগ্রহ করে যখন যে মায়াজমের লক্ষণ গুলো প্রকাশ মান থাকবে তারই উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করে যেতে হবে এবং চিকিৎসা চলাকালে যখন যে মায়াজমের চিত্র গুলো পরিস্ফুট হবে তৎসদৃশেই চিকিৎসা করে যেতে হবে।
১৩) ঔষধের কার্য কি? রোগ আরোগ্যে ঔষধ না জীবনীশক্তি কার্য করে থাকে?
উত্তরঃ– রোগ আরোগ্যে ঔষধ কার্য করে থাকে। তবে এ কার্যটি হোমিওপ্যাথিতে সহজেই সম্পাদন হয়না। রোগীর লক্ষণ সদৃশে ঔষধের লক্ষণ মিললেই কেবল সে কার্য সম্পাদন হয়ে থাকে।
আমরা সাধারণতঃ মনে করে থাকি যে, ঔষধে রোগ আরোগ্য করে। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে ঔষধ জীবনীশক্তির উপর লক্ষণ সদৃশে প্রভাব খাটায়, আর জীবনীশক্তি রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে যে শক্তিটুকু হারিয়ে ছিলো, ঔষধের প্রভাবে তা দ্বারা সে আবার ঐ হারানো শক্তিটুকু ফিরে পেয়ে সতেজ হওয়ায় মূলতঃ জীবনীশক্তিই রোগ আরোগ্য করে।
১৪) হোমিওপ্যাথিক ঔষধের উৎস গুলোর বর্ণনা দাও?
উত্তরঃ– হোমিওপ্যাথি ঔষধ গুলো যে যে উৎস হতে আবিষ্কার হয়েছে সে গুলো হলো– গাছ- গাছড়া, খনিজ পদার্থ, রোগবীজ ইত্যাদি।
১৫) একোনাইট কি পুরাতন রোগে ব্যবহার হতে পারে? যদি পারে তবে অল্প কথায় বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ–আসলে হোমিওপ্যাথিতে রোগ গুলো তরুণ, না পুরাতন তা সময়কালের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। এমনও হয় যে, একটি রোগ রোগী ছয়মাস কাল ভুগলেও তা তরুণ রোগ বলে বিবেচিত হতে পারে, আবার এইমাত্র একটি রোগ দেখা দিয়েছে এবং তার ধরন বুঝে তা পুরাতন পর্যায়েও পড়তে পারে।
সুতরাং একোনাইট ঔষধটি পুরাতন রোগে ব্যবহৃত হবে কিনা তা বলতে পারা না গেলেও শৈত্যাহত একটি রোগী ২ বৎসরকাল হৃৎপিন্ডের রোগে ভুগতে থাকা সত্ত্বেও ডাঃ টেষ্টি এর চিকিৎসায় একোনাইট দ্বারা রোগী আরোগ্য প্রাপ্ত হয়েছিলো। সুতরাং কারণের উপর ভিত্তি করে রোগ পুরাতন হলেও একোনাইট দ্বারা আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।
১৬) কোনিয়ামের প্রয়োগ লক্ষণ কি?
উত্তরঃ– কোনো রোগী যদি বলে বিছানায় শোয়াবস্থায় এপাশ থেকে ওপাশ ফিরলে তাঁর মাথা ঘুরিয়ে উঠে, নিদ্রাবস্থায় বা ঘুমের ভান করে চক্ষু মুদ্রিত করলেও ঘামে শরীর ভেজে যায়, কিন্তু নিদ্রা থেকে জাগরিত হলেই ঐ ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বিধবা নারীর শারীরিক বিপর্যয় দেখা দেয়, তবে উক্ত লক্ষণে যে কোনো রোগে কোনিয়াম প্রযোজ্য হয়।
১৭) অল্প কথায় নাইট্রিক এসিডের চরিত্রের ধারণা দাও?
উত্তরঃ– নাইট্রিক এসিডের রোগীরা প্রচন্ড রাগী হয়, তাঁর বিধানে ক্ষমা বলতে কোনো বিষয় নেই, গালিগালাজ করে, নিজে নিজেই অপরের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়, আঁচিল হওয়ার প্রবণতা থাকে, ঠোঁটের কোণ গুলো ফাটা হয়, ক্ষতে খোঁচা দেয়া মতো বেদনা হয়, প্রস্রাবে ঘোড়ার প্রসাবের ন্যায় গন্ধ হয়; যদি তাই হয়, তবে যে কোনো রোগে নাইট্রিক এসিড ব্যবহার যোগ্য হয়ে থাকে।
১৮) কার্সিনোসিন এর প্রয়োগ লক্ষণ সম্পর্কে কি কি জানো? ক্যান্সার হলে কি কার্সিনোসিন প্রয়োগ করা যায়?
উত্তরঃ–কার্সিনোসিনের রোগীরা বিপরীত লক্ষণ দ্বারা ভোগে। রোগী গান-বাজনা প্রচুর ভালোবাসে, আবেগী হয়, কবিতা ভালোবাসে, চরম খুঁতখুঁতে স্বভাবের, ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাতে আনন্দ পায়, ঝড়ো হওয়া আবার শিশুরা ভয় পায়, তিরস্কার ভর্ৎসনায় অত্যন্ত অনুভূতিসম্পন্ন, ভ্রমণ প্রিয়তা, শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটে না, সংগীতে, নৃত্যে অত্যনুভূতি, অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল, জীবজন্তু পশুপাখি ভালবাসে, শরীরে অসংখ্য তিল, জড়ুল, জন্মকলঙ্ক, হাঁপানের কষ্ট সমুদ্র তীরে উপশম, বুকে চাপ বোধ, সংকোচন অনুভূতি , জোরে নিশ্বাস নিতে চায়, ক্ষুধাহীনতা, অক্ষিপল্লব অনবরত মিটমিট পিটপিট করে, দুধের সঙ্গে কফি মেশালে যেমন বর্ণ হয় সেরকম মুখের চেহারা, কার্সিনোসিনের রোগীরা যতই মেধাবী ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হোক্ না কেন ভয়, আশঙ্কা, উদ্বিগ্নতা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, একগুঁয়ে ও অনমনীয় স্বভাব, আত্মহত্যার প্রবণতা, সান্তনায় বিরক্তবোধ, ডাঃ হুই বনহুয়া বলেছেন খুঁতখুঁতে স্বভাব ও সংগীত অনুভূতি প্রবণতা কার্সিনোসিন ও নাক্স ভমিকার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ, শিশুরা দাঁত দিয়ে নখের চারিধারে চামড়া কেটে কেটে ফেলে বা চিমটি কেটে ছিঁড়ে ফেলে, জিনিসপত্র ছুঁয়ে দেখার ঝোঁক, সর্দি প্রবণতা, নাকের ভেতর মারাত্মক প্রকৃতির ক্ষত, পূজার নিয়ে আয় স্বপ্ন বহুল নিদ্রা।
ডাক্তার ফবিস্টারের গবেষণা হতে জানা যায় যে, কার্সিনোসিনের শিশুরা হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি প্রদাহিক পীড়ায় একাধিকবার সংক্রমিত হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে অন্যান্য চিকিৎসকগণ দেখেছেন ওগুলো ছাড়াও হাম, বসন্ত, ডিপথেরিয়া, টনসিলাইটিস, মাম্পস,কর্নমূল-প্রদাহ, গ্রন্থির অসুস্থতার জন্যে জ্বর ইত্যাদি নানা ধরনের প্রদাহিক অসুস্থতার কারণসহ কমপক্ষে তিনটি সংক্রমণ রোগের ইতিহাস থাকলে কার্সিনোসিন প্রয়োগ করা যায়। ভয় পাওয়ার কুফল জনিত অসুস্থতার অতীত ইতিহাসও কার্সিনোসিন প্রয়োগকে নির্দেশ করে।
ডাঃ ফবিস্টার বলেছেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে কার্সিনোসিন প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে করে রোগ অন্যত্র ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে অথবা রোগ আরো বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর জীবন সংশয় করে তুলতে পারে।
ক্যান্সারের চূড়ান্ত অবস্থায় যখন ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে যায়, তখন কার্সিনোসিন প্রয়োগ করা হলে রোগীর যন্ত্রনাহীন মৃত্যু হয়।
১৯) ব্রায়োনিয়ার মানসিক লক্ষণ কি কি? ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার কি ধারণা থাকে?
উত্তরঃ–ব্রায়োনিয়ার রোগী সহজেই রাগান্বিত হয়, রুক্ষ্ম মেজাজ, প্রত্যেক বিষয়েই সে বিরক্তবোধ করে, জ্বরের ঘোরে রোগী বাড়ীতে থাকলেও বাড়ী যাওয়ার কথা বলে, নিজের কর্ম সম্পর্কে সচেতন থাকে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকে, লোক সঙ্গে বিরক্তবোধ করে, কেহ কিছু জিজ্ঞেস করলেও বিরক্ত হয়। বিকার অবস্থায় দৈনন্দিন কার্য কলাপের কথা বলতে থাকে।
রোগাক্রান্ত হলে ব্রায়োনিয়ার রোগী খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাওয়ার জন্যে চিকিৎসকে ঐ মতো ঔষধের ব্যবস্থা করতে বলে। সে আশঙ্কা করে কাজকর্মে না গেলে তাঁকে অনাহারে থাকতে হবে এমন আশঙ্কা করে।
লেখক :
ডাঃ এ.বি.এম.শহীদুল্লাহ্
ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ, নেত্রকোনা।