সাইবার হামলা থেকে বাঁচার উপায়
প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন সাইবার অপরাধীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তারা ঠিকই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নিত্য নতুন কৌশলে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘ডি ডস’(ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল অব সার্ভিস) সাইবার হামলা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট)। এজন্য দেশে সাইবার হামলা নিয়ে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে।
ডি ডস হচ্ছে এক ধরনের সাইবার হামলা। সাইবার অপরাধীরা মূলত এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বটনেট দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আইটি অবকাঠামোতে হামলা চালায়। লক্ষ্য ওই আইটি অবকাঠামোকে নিয়মিত সেবাদানে বাধা দেওয়া। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লিঙ্ক পাঠিয়ে সফটওয়্যারে ফাঁদ তৈরি করে। এরপর ব্যবহারকারী লিঙ্কে ঢোকা মাত্রই সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকাররা।
তারা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করে। ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয় অর্থ। আইডি হ্যাক থেকে শুরু করে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে বা অশ্লীল বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করছে।
আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম কত বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়েছে।
হ্যাকারদের এসব ঘটনা নিয়ে হলিউড, বলিউডে আছে অংসখ্য সিনেমা। তবে বাস্তবে এদের ঠেকিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী, গবেষকদের পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে নিচ্ছে হ্যাকাররা। এর থেকে বাঁচার অন্যতম ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে সচেতনতা, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সামান্য একটু সচেতন হলেই অনেকাংশে হ্যাকিং বা সাইবার আক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাইবার হামলা থেকে বাঁচতে যা করতে পারেন-
>> সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলার শিকার হোন সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীরা। এজন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
>> যে কেউ লিঙ্ক পাঠালেই সেটি ক্লিক করবেন না। এসব লিঙ্ক ক্লিক করার পর দেখা যায় ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড চায়। এবার সেখানে পাসওয়ার্ড দেওয়া মানেই হ্যাকারের ফাঁদে পা দিয়ে দিলেন। এখন খুব সহজেই আপনার অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে হ্যাক্রা।
>> আবার অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন পণ্য বা পরিচিত সংস্থার সেল অফারের নাম করে ভুয়া লিঙ্ক পাঠানো হয়। লিঙ্ক ডাউনলোড করলে দেখা যায় সেখানে ফোন নম্বর বা ই-মেইল চাওয়া হলো। দিয়ে দিলেই আপনার স্মার্টফোনের সকল তথ্য চলে যাবে তাদের হাতে। তাই যে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করা বা ডাউনলোড করার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে নিন।
>> কোনো ই-মেইল আসলে আগে দেখে নিন প্রেরক পরিচিত কি না। আনট্রাস্ট কোনো কিছুতে ক্লিক দেওয়া যাবে না। এর মাধ্যমে নিজের সব তথ্য অন্যের কাছে চলে যাবে।
>> কেউ কোনো তথ্য চাইলে আগে নিশ্চিত হোন কাকে দেবেন আর কাকে দেবেন না। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য য কাউকে শেয়ার করবেন না।
>> সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার দেওয়া ব্যক্তিগত যত তথ্য সবকিছুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন আগে। পাবলিক না করে ফ্রেন্ড বা অনলি মি করে রাখুন।
>> পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সাবধান হোন। এটি সাইবার অপরাধীদের ফাঁদ হতে পারে।
>> ডেস্কটপ, কম্পিউটার নিয়মিত অ্যান্টি ভাইরাস দিয়ে রাখুন।
>> যে কারো চার্জার বা ইউএসবি ক্যাবল ব্যবহার করবেন না।