“আরোগ্যের বিশ্বজনীন নীতি, সদৃশ বিধানে আরোগ্য সাধন”
আরোগ্য বিধানের জন্য আমাদের নিকট একটি পথই খোলা আছে, উহার ভিত্তি হইল প্রকৃতিকে নির্ভুলভাবে অনুসরণ করা। প্রাকৃতিক নিয়মের উপর ভিত্তি করিয়াই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র রচিত।
প্রাকৃতিক নিয়ম বলিতে আমরা বুঝি সেই সব চিরন্তন বিধান যেগুলি দ্বারা কোন প্রাকৃতিক ঘটনার সামগ্রিক গতিধারা প্রকাশ করা হয়।
মানুষের দেহে রোগের সংক্রমণ ও বিকাশের সময় তাহার স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। কতকগুলি চিহ্ন ও লক্ষণ এই রোগাবস্থার এক সামগ্রিক চিত্র আমাদের নিকট তুলিয়া ধরে।
ঔষধ প্রয়োগে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়। রোগী আরোগ্য লাভ করে। রোগ লক্ষণ সমূহ অন্তর্হিত হয়। এখানে দেখা যায় রোগ ও ঔষধের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন কোন শাশ্বত সম্পর্ক রহিয়াছে যাহার উপর আরোগ্য ক্রিয়া নির্ভরশীল।
ঔষধ কেন রোগ আরোগ্য করে? অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়াছে যে, ঔষধ সুস্থ দেহে রোগ সৃষ্টি করিতে পারে, ঠিক যেমন প্রাকৃতিক রোগ শক্তি সুস্থদেহে রোগের সংক্রমণ ঘটায়। সুস্থ দেহে ঔষধ প্রয়োগ করিলে মানবের সমস্ত প্রাণসত্বার অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটায় যাহার প্রতিফলন হয় উৎপন্ন লক্ষণ সমূহের এক সামগ্রিক রূপে। রোগাবস্থায় প্রদত্ত ঔষধ এই লক্ষণ সমষ্টি দূর করিয়া রোগীকে সুস্থাবস্থায় ফিরাইয়া আনে।
কাজেই সুস্থ দেহের ঔষধ প্রয়োগ জনিত লক্ষণ সমষ্টির জ্ঞান আমাদের রুগ্নাবস্থায় ঔষধের প্রয়োগ ক্ষেত্রকে সুনির্দিষ্ট করিয়া দেয়। রোগ ও ঔষধ . সদৃশ। প্রশ্ন জাগে সদৃশ নীতিতে ঔষধ প্রয়োগ করিলে রোগ আরোগ্য হয় কেন? হোমিওপ্যাথির আরোগ্য নীতি নিউটনের গতি বিষয়ক তৃতীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই নীতিটি হইল প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
কাজেই যে ঔষধের যে রোগ উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে, ঔষধের সেই রোগ দূর করারও ক্ষমতা আছে। সদৃশ মতে ঔষধ প্রয়োগের ফলে ঔষধের প্রাথমিক ক্রিয়া হইল, রোগীতে যে লক্ষণ সমূহ বর্তমান তদ্রুপ, লক্ষণ উৎপাদন করা।
লক্ষণ সমূহের সাদৃশ্যহেতু সেইসব লক্ষণ সমূহ প্রাকৃতিক রোগ দ্বারা অধিকৃত স্থান সমূহেই প্রকাশিত হয়। দুই সমভাবাপন্ন শক্তি তখন একই সময়ে একই ভূমিতে ক্রিয়াশীল থাকে। এরপর শুরু হয় ঔষধের গৌণ ক্রিয়া যাহা প্রাথমিক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া। ঔষধের শক্তি প্রাকৃতিক রোগ শক্তি অপেক্ষা প্রবলতর কিন্তু ক্ষুদ্রমাত্রায় প্রদত্ত হয় বলিয়া স্বল্পকাল স্থায়ী।
অতএব ঔষধের প্রবলতর শক্তিতে রোগের দুর্বলতর শক্তি বিলীন হইয়া যায়। ফলে রোগ শক্তির কোন অস্তিত্ব থাকে না। ঔষধের ক্রিয়াকাল শেষ হইলে তাহার সৃষ্ট লক্ষণ সমূহও তিরোহিত হয়। ইহাই 'সদৃশ বিধান' বা হোমিওপ্যাথি। তাই বলা যায় হোমিওপ্যাথিক প্রাকৃতিক নীতিভিত্তিক একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি ।