সরকার স্বীকৃত হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড ডা. উপাধি লেখায় আইনি হয়রানি কেন?

 হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রি বিএইচএমএস ৩০তম ব্যাচ এর ডাক্তার আজিজুর রহমান কে ২২/০৮/২০২২ইং তারিখ সন্ধ্যায় তার নিজ চেম্বার থেকে নামের পূর্বে ডাক্তার উপাধি লেখার কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী RAB এর একটি টিম নিয়ে যায়, পরবর্তীতে রাত সাড়ে দশটায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে এবং ডাক্তার লেখার অপরাধে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এটা শুধুমাত্র এলোপ্যাথি ও ডেন্টাল (দন্ত) চিকিৎসকদের আইন হলেও এ আইনের অপ প্রয়োগে তথা এ আইন অনুযায়ী ডা. উপাধি লেখার অপরাধে সরকার স্বীকৃত ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৫০(৮)২২ রূপগঞ্জ থানা। 

হোমিওপ্যাথিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ডিজি হেলথ থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে একজন বিএইচএমএস ডাক্তার হয়ে ডাক্তার লেখার অপরাধে হয়রানি ও মামলার শিকার।

হয়রানি ও মামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ এর পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে সকল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বাজার সমিতি ও  সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত হয়েছে। 

দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা যার যার অবস্থান হতে প্রতিবাদ অব্যহত রেখেছে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যর্থতা, যোগ্যতা, কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান সহ বিশ্বব্যাপি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী ডা. উপাধি লিখে আসছে ও আছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল। বাংলাদেশে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ হতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ আইনগতভাবে ডা. উপাধি ব্যবহার করে আসছে (পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পাসকৃত আইন দ্যা ইউনানী, আয়ুর্বেদিক এন্ড হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স এ্যাক্ট- ১৯৬৫, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ এর ৩৩ যা পরবর্তীতে গণতান্ত্রীক সরকারের সময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাসকৃত ২০১৩ সালের ৭নং আইন এর ৩৩, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এন সংজ্ঞা-১২, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর ২৩/১, বিধিবিধান সহ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় জারিকৃত বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন/অফিস আদেশ/স্মারকপত্রের আলোকে সরকার স্বীকৃত হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড চিকিৎসকগণ ডা. উপাধি লিখে আসছে)। 

বাংলাদেশে সামরিক সরকার কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী তা বাতিল করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় অনুযায়ী দুটি সামরিক সরকারের শাসনামল অবৈধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর সময়ের মধ্যে জারি করা সব অধ্যাদেশও অবৈধ। ওই দুই সামরিক শাসনামলে ১৭২টি অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল। সিভিল আপীল নং ৪৮/২০১১ এ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১নং আইন) এর ধারা ৩ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ১৯ অনু্চ্ছেদ বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত সময়ের মধ্যে জারীকৃত উক্ত অধ্যাদেশ সমূহ কার্যকারিতা হারিয়েছে জানা যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। "১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারীকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর করণ (বিশেষ বিধান) আইন,২০১৩" (২০১৩ সনের ৭ নং আইন ) ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সংসদে পাস করে। [পাসকৃত আইনের তালিকায় ২৮ নম্বরে : "Bangladesh Homoeopathic Practitioner's Ordinance, 1983 (Ordi.No.XLI of 1983)" রয়েছে]

তা সামরিক সরকারকে বৈধতা নয় বা সামরিক সরকারের অধ্যাদেশকে বৈধতা নয়। দ্রত আইন বাংলায় প্রণয়ন করে পাস করা সময় সাপেক্ষ এজন্য দরকারি কার্যাদি চালাতে সে গুলোর মধ্যে হতে ৮১টি অধ্যাদেশ কে কার্যকরকরণ করতে আইন পাস করলেও শুধুমাত্র সেসব প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ/আইন গুলো বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন করে সম্পূর্ণ বাংলায় লিখে বা প্রণয়ন করে সংযোজন-বিযোজন সহ উল্থাপন করে জাতীয় সংসদ হতে পাস করে কার্যকর করতে হবে।


সংবাদপত্র হতে জানা যায় দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা যে অধ্যাদেশ গুলো এখনও আইনে পরিণত হয়নি, সেগুলোকে আইনে পরিণত করছে সরকার। অনেক সময় অতিক্রম হলেও "বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত)" মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে ও এখনও জাতীয় সংসদে পাস হয়নি। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ হতে বার বার সংশোধনের নামে কখনও বোর্ড কখনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকা নতুন পূর্ণাঙ্গ আইন "বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত)" দ্রুত পাস করা ও সে আইন অনুযায়ী "বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল" গঠন করা। সময় এসেছে দ্রুত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ নেবার এবং সময় এসেছে চিকিৎসা পদ্ধতিকে এগিয়ে নেবার। তা না হলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট কঠোর জবাবদিহিতা করতে হতে পারে। 

জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইনের নাম :

“১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারীকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন,২০১৩”

(২০১৩ সনের ৭ নং আইন ) [২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩]

ডাউনলোড লিংক : http://www.clcbd.org/document/996.html

[আইনের তালিকায় ২৮ নম্বরে : "Bangladesh Homoeopathic Practitioner's Ordinance, 1983 (Ordi.No.XLI of 1983)" রয়েছে]

বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) তে হোমিওপ্যাথদের ডা. উপাধি চলমান রাখা, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল গঠন সহ অন্যান্য দাবি গুলো বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড সরাসরি সাক্ষাত বা সংলাপ করার অনীহা থাকায় মাঠ পর্যায়ে তথা দেশের হোমিওপ্যাথরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ হতে কখনও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডে ও কখনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকা নতুন হোমিওপ্যাথি আইন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) মহান জাতীয় সংসদে উল্থাপন ও পাস না হবার কারণে মাঠ পর্যায়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ বার বার হয়রানি ও মর্যাদাহানির শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড নিরব থাকা কেন? জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকায় পরিচালিত রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর হোমিওপ্যাথি-ইউনানী-আয়ুর্বেদিক বিষয়ক কর্তৃপক্ষ অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর হোমিও ও দেশজ বিভাগ এর কাজ বা কার্যক্রম কি?

(তথ্যসূত্র/নথি ও মতামত)

====================

লেখক পরিচিতি :

ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)

ডিএইচএমএস (রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল)

এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ)

২৩ আগস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।

Next Post Previous Post