ডি.এইচ.এম.এস শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনলে শিক্ষার্থী’র সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে : ডা. আরমান
চিকিৎসা করতে গেলে ভালো চিকিৎসক খুঁজে, চুল কাটতে গেলে ভালো নাপিত খুঁজে, বিল্ডিং বানাইতে গেলে ভালো ইঞ্জিনিয়ার খুঁজে প্রত্যেকটা কাজেই মানুষ ভালো জিনিসটাই খুঁজে নেয় অর্থাৎ কোয়ালিটি ফুল জিনিস মানুষ পছন্দ করে বা আশা করে কোয়ালিটি যত বাড়বে তার ডিমান্ড বা চাহিদা তত বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এবং ছাত্র হিসেবে আমার কাছে এই কথাটা পুরাই উল্টা মনে হয় কারণ হোমিওপ্যাথি নিয়ে প্রায় ৮ বছর নাড়াচাড়া করছি।
DHMS প্রথম বর্ষ থেকে হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষকদের সাথে এই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য বারবার চেষ্টা করেছি সবাইকে বলেছি যে এখানে কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা থাকা উচিত।
ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকা উচিত যেমন ভর্তি পরীক্ষা, রেগুলার ছাত্র ভর্তি করানো, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হওয়া কলেজের শিক্ষার পর্যাপ্ত উপকরণ বৃদ্ধি করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু কলেজের শিক্ষক ,প্রভাষক , হোমিওপ্যাথিক বোর্ড সদস্য, বোর্ডের চেয়ারম্যান ,রেজিস্টার সহ সবার কাছে একই কথা শুনেছি যে ডি এইচ এম এস শিক্ষা ব্যবস্থা যদি নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন চালু করা হয় তাহলে নাকি ছাত্র পাবেনা।
কেন ছাত্র পাবেনা এই প্রশ্নের উত্তর তারা কেহই সঠিকভাবে দিতে পারছে না। তারা অনেকে বুঝেও বিষয়গুলো ব্যক্তি স্বার্থে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রশ্নের উত্তর একটাই, এখন যেভাবে তারা হোমিওপ্যাথির ক্ষতি করে ক্লাস না করিয়ে একটা কলেজে ৪০০ ছাত্র ভর্তি করিয়ে প্রত্যেক ছাত্রের কাছে মাসিক এক হাজার টাকা ফি নিচ্ছে। একজন ছাত্রের পিছনে এক টাকাও খরচ না করে, মাসিক বেতন নিয়মিতভাবে আদায় করে নিচ্ছে। এই যে তাদের মাসিক অতিরিক্ত ব্যবসা তারা ভাবতেছে তাদের এই আসল বিহীন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই তারা এখন যেভাবে আছে এটাই ভালো আছে বলে। তারা এর দ্রুত পরিবর্তন চায় না।
এই সিস্টেমের উন্নতি করলে তাদের ব্যবসা বরণ আরো বাড়বে কমবে না এই ধারণা তাদেরকে বুঝাতে এখনো পারেনি।
হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষকরা এই সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য বোর্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারত কিন্তু কখনো সেই আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। ছাত্ররা এই বিষয়ে দুই একজন পরিবর্তন চাইলেও তাদেরকে নানান ভয় ভীতি হুমকি দেখিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের কাছে এই সিস্টেম পরিবর্তনের অসীম ক্ষমতা থাকলেও তারাও অতি মুনাফার লোভে হোমিওপ্যাথির এই সিস্টেমের উন্নতির কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়নি যেটা সবার কাছে দৃশ্যমান। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত আমাদের শোনাচ্ছে এই উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন হচ্ছে নানান উন্নয়নের গান।
এখানে কলেজের লেখাপড়ার সিস্টেম ও ভর্তির সিস্টেম চেঞ্জ হলে নিম্নমানের ছাত্ররা আর ভর্তি হতে পারবে না ,তখন মেধাবী ছাত্ররা ভর্তি হবে তারা হোমিওপ্যাথিকে নিয়ে ভাববে যাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে হোমিওপ্যাথি। তখন আর কলেজে নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।নিয়ম-কানুন চালু করলে ছাত্ররা আর পার্টটাইম হোমিওপ্যাথ হবে না। তারা হোমিওপ্যাথি নিয়ে অল টাইম গবেষণা করবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি হবে একটা আধুনিক চিকিৎসা ব্রান্ড।
কিন্তু বর্তমান চিত্র হচ্ছে যারা জীবনে কোন কিছুতেই সফল হতে পারেনি সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে ছেকা খেয়েছে জীবন হতাশাগ্রস্থ দুঃখময় হয়েছে, যেকোনো কাজের জন্য উপযুক্ত না সেই লোক এখন শেষ জীবনে এসে একবার হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হয়। নকল করে করে পরীক্ষা দিয়ে চার বছরে পাস করে যায় আরো সুযোগ নিয়ে কলেজের প্রভাষকও হয়ে যেতে পারে।
আমি এমন লোক দেখেছি শেয়ারবাজারে লস খেয়ে শারীরিক মানসিকভাবে অসুস্থ হয় প্রায় ছয় মাস শয্যাশায়ী ছিল , প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল,এখন তার বয়স ৪৫ প্লাস সে এখন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হবে কলেজে এসে ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হয়েই আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য চেম্বারও করে ফেলেছে। এরকম বাস্তবতা অনেক তুলে ধরতে পারবো।
এই কথাগুলো বলতে লজ্জা লাগে দুঃখ লাগে কিন্তু এগুলো দেখার মত কেউ নেই।
হোমিওপ্যাথির সমাজে নিয়ন্ত্রক ও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড হলেও এ সকল ব্যাপারে এখনো কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
হোমিওপ্যাথি এমন একটা চিকিৎসা বিজ্ঞান যার প্রত্যেকটা কার্যক্রম গবেষণাধর্মী ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবসম্মত কিন্তু সেখানে এই ধরনের মানুষগুলো এসে যাদের কোন লেখাপড়ার ইচ্ছা নেই সুযোগ নেই গবেষণার সুযোগ নেই ব্রেন খাটানোর মত সময় বা শক্তি নেই তারা আজ হোমিওপ্যাথিকে মনের মত ব্যবহার করছে । তারা যখন রোগীকে ওষুধ দিয়ে ব্যর্থ হয় বা ভুল ঔষধ দেয়,ওষুধ কাজ না করে তখন তারা রোগীর সামনে বলে হোমিওপ্যাথি ওষুধে এই রোগ সারে না, অথবা বলে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ধীরে কাজ করে।
যেখানে অর্গাননের দুই নাম্বার সূত্রে ডা.হ্যানিম্যান স্যার বলছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দ্রুত কাজ করে।
আজ চিকিৎসার নামে হোমিওপ্যাথির দুর্নাম মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে। এই মৌলিক অবক্ষয় রোধ করার জন্য হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনা এখন সময়ের প্রয়োজন।
যারা হোমিওপ্যাথির নেতৃত্বে রয়েছে যারা বোর্ড পরিচালনা করছে তাদের কাছে আকুল আবেদন করছি আপনারা বৃহত্তর স্বার্থে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসুন। আপনারা লাভবান হবেন, সমাজ লাভবান হবে, লক্ষ লক্ষ সুবিধা বঞ্চিত মানুষ সুবিধা পাবে ,সেবা গ্রহীরা সঠিক সেবা পাবে। সেবার নামে প্রতারণা দূর হবে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় হোমিওপ্যাথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে তাই সবাইকে বিষয়টি অনুধাবন করে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।
লেখক
ডা. আরমান হোসাইন
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক
স্টুডেন্ট: বি এইচ এম এস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সভাপতি: বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক ছাত্র অধিকার সংগঠন
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক: পিওর হোমিওপ্যাথিক স্টাডি এন্ড রিসার্চ সেন্টার।