বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সম্পর্ক


 বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে দুই জাতীয় সম্পর্ক রহিয়াছে। 

(ক) সাদৃশ্য সম্পর্ক ও (খ) বৈসাদৃশ্য সম্পর্ক।

ক) বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে সাদৃশ্য সম্পর্ক : বিজ্ঞান ও দর্শনের সাদৃশ্য সম্পর্ক নিম্নরূপ 

i) লক্ষ্য : বিজ্ঞান ও দর্শনের লক্ষ্য অভিন্ন। উভয়েরই লক্ষ্য জগৎ ও জীবনে। রহস্য উদ্ঘাটন করা। সত্যকে অনুসন্ধান করা এবং অজানাকে জানা।

ii) জ্ঞান : বিজ্ঞান সুসংবদ্ধ সাধারণ জ্ঞান। দর্শন সুসংবদ্ধ সুসংহত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। দর্শন ছাড়া বিজ্ঞানের সত্যতা প্রমাণিত হয় না। অপরদিকে বিজ্ঞান ছাড়া দর্শন পূর্ণত্ব প্রাপ্ত হয় না।

iii) অভিজ্ঞতা : বিজ্ঞান ও দর্শন উভয়েই আমাদের অভিজ্ঞতা সমূহের পারস্পরিক সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করে বিজ্ঞান সূত্র প্রদান করে, দর্শন ব্যাখ্যা করে। দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকিলেও তাহাদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। 

খ) বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সম্পর্ক : বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সম্পর্ক নিম্নরূপ। 

1) সীমা : বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট সীমা আছে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। দর্শনের নির্দিষ্ট কোন সীমা নাই। দর্শন বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচনা করে।

ii) দৃষ্টিভঙ্গী : বিজ্ঞান বিশেষ বিশেষ বিষয় নিয়া আলোচনা করে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী খণ্ড। কিন্তু দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গী অখণ্ড।

iii) পদ্ধতি : বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্য আছে। পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ ও আরোহকে বিজ্ঞান পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করে। একটি সঠিক নিয়ম আবিষ্কারই ইহার শেষ স্তর। অপরদিকে দর্শন বিজ্ঞান ভিত্তিক হইয়াও প্রজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। দর্শনের পদ্ধতি আরোহ এবং অবরোহ উভয়ই।

iv) ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন : বিজ্ঞান শুধু বর্ণনা করে এবং ঘটনার ব্যাখ্যা দান করে। দর্শন ঘটনার ব্যাখ্যা দান ছাড়া মূল্যায়নও করিয়া থাকে।

v) পরিসর : বিজ্ঞান শুধু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বাহ্যিক রূপে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই বিজ্ঞানের পরিসর সীমিত। কিন্তু দর্শন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বাহ্যরূপ ও অতীন্দ্রিয় সত্ত্বা উভয়েরই আলোচনা করে বলিয়া ইহার পরিসর ব্যাপক।

vi) স্বতঃসিদ্ধতা : বিজ্ঞান স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী চলে। কিন্তু দর্শনের কোন স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নাই।

vii) গ্রাহ্যতা : বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত অমূর্ত, বিজ্ঞান বস্তুর বাহ্যগুণাবলীকে গণিতের সূত্রের দ্বারা বিশ্লেষণ করে।

Next Post Previous Post