দার্শনিক চিন্তাধারা আলোচনার পদ্ধতিসমূহ

 দার্শনিকদের পদ্ধতিগত বিভিন্নতার জন্য বিভিন্নপ্রকার দর্শনের জন্ম হয়েছে। নিম্নে দার্শনিক চিন্তাধারার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো।

১। নির্বিচারবাদ (Dogmatism) : জ্ঞানের সীমা, বৈধতা, শর্ত, উৎপত্তি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানবিদ্যার যথার্থ কোন আলোচনা বা বিচার বিবেচনা না করিয়া দর্শনের প্রধান সমস্যাবলী সমাধানের জন্য সরাসরিভাবে পূর্ব পরিকল্পিত ধারণার বশবর্তী হইয়া যে মত বা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাহাকে নির্বিচারবাদ বলা হয়। এই মতবাদের প্রবক্তব্য জ্ঞানের সম্ভব্যতা ও সীমা নিয়া যথার্থ আলোচনা না করিয়া কতকগুলি নীতিকে স্বতঃসিদ্ধ বলিয়া মনে করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেষ্ট হন। তাঁহারা নির্বিচারে তত্ত্বালোচনা শুরু করেন আর বিনা বিচারেই এই পদ্ধতিকে যথার্থ পদ্ধতি বলিয়া মনে করেন। এই শ্রেণীর দার্শনিকগণ নির্বিচারবাদী নামে পরিচিত। ইহাদের দুইটি ভাগ আছে। (ক) যুক্তিবাদী ও (খ) অভিজ্ঞতাবাদী।

২। সংশয়বাদ (Scepticism) : নির্বিচারবাদের প্রবক্তারা জ্ঞানবিদ্যার যথার্থ আলোচনা না করিয়াই সরাসরিভাবে তত্ত্ব আলোচনা করিতে গিয়া নিজ নিজ মনগড়া মতের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করার ফলে এই পদ্ধতিতে নানা প্রকার দ্বন্দ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়। আর ইহার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে দর্শনের ইতিহাসে পরিলক্ষিত হয় সংশয়বাদের। সংশয়বাদের মূল কথা হইল যথার্থ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। নির্বিচারবাদে যেমন বিনাবিচারে সর্বজন স্বীকৃত ও নিশ্চিত তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার কথা বিলা হইয়াছে, তেমনি সংশয়বাদও বিনা বিচারে সর্বজনস্বীকৃত নিশ্চিত তত্ত্বজ্ঞান লাভের সম্ভাবনাকে উড়াইয়া দিয়া সংশয়ের কথা বলে।

৩। বিচারবাদ (Criticism) : কান্টের মতে বিচারবাদ দার্শনিক আলোচনার যথার্থ পদ্ধতি। অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি এককভাবে জ্ঞানের যথার্থ বিচার নহে। বরং এই দুইয়ের সমন্বয়ের ফলেই যথার্থ জ্ঞানের উদ্ভব হয়। তাঁহার মতে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি বিচার বুদ্ধি বা বিবেচনা। আমাদের জ্ঞান বস্তুর অভিজ্ঞতার জগতেই সীমাবদ্ধ এবং বস্তুর অতীন্দ্রিয় জগতে এই জ্ঞানকে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।

৪। দ্বান্দ্বিকবাদ (Dialectism) : দ্বান্দিক পদ্ধতির কথা হইল পক্ষ ও বিপক্ষের দ্বন্দের মাধ্যমেই জগত ও জীবনের প্রকৃত সত্ত্বা বা তত্ত্ব আলোচনা সম্ভব।

৫। স্বজ্ঞাবাদ (Intuitionism) : দার্শনিক বার্গসো মনে করেন যে, সত্য বুদ্ধিগম্য নয় এবং স্বজ্ঞা বলিয়া এক ধরনের প্রত্যক্ষ অনুভূতিতে কেবল দার্শনিক সত্য ধরা পরে।

৬। বিচার বিশ্লেষণী পদ্ধতি (Analytic Method) : সাম্প্রতিক কালে অনেক দার্শনিক দর্শনের গতানুগতিক পদ্ধতির সমালোচনা করিয়া বলেন যে, বিশ্লেষণই দর্শন আলোচনার আসল পদ্ধতি। নির্দিষ্ট, নৈর্ব্যক্তিক ও যথার্থ জ্ঞানের অন্বেষণ যদি দর্শনের কাম্য বিষয় হয় তাহা হইলে দর্শনের আলোচনা বিশ্লেষণের সাহায্য অবশ্যই নিতে হয়। বিশ্লেষণধর্মী দার্শনিকেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দার্শনিক সমস্যাবলী. আলোচনার প্রচেষ্টা চালান।

Next Post Previous Post