তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা

প্রতীকী ছবি

 তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় পড়েছে মানুষ। নগর ছাড়িয়ে গ্রাম, সর্বত্র গরমের তীব্রতায় অস্থির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গরমের তীব্রতা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় নারী-শিশুরা যেমন ভুগছে, তেমনি ভুগছে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকারসহ কর্মজীবীরা। এর মধ্যে লোডশেডিং ঘটলে ভোগান্তি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরমের মধ্যে থার্মোমিটারে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি দেখালেও উষ্ণতা ছড়াচ্ছে ৪২ ডিগ্রির। এছাড়া এই অবস্থা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। 

ঈদুল আজ¦হার ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকার সড়ক অনেকটাই ফাঁকা। তবে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে রাস্তাঘাটে যে চলাচল থাকার কথা, সেই চলাচলও দেখা যায়নি। দুপুরের কড়া রোদ এড়াতে রাস্তাঘাটে একেবারেই কম বেরিয়েছে মানুষ। একান্ত প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের কারও কারও হাতে ছাতাও দেখা গেছে। অনেককে দেখা গেছে, ফুটপাতের আখের রস, বেল বা লেবুর শরবতে গলা ভিজিয়ে নিতে।

প্রগতি সরণির নতুন বাজারে ফেরি করে লেবুর শরবত বিক্রি করেন মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির কারণে রাস্তায় লোকজন কম। তবু লেবুর শরবত বিক্রি খারাপ নয়। এই গরমে মানুষ একটু ঠান্ডা শরবত খেয়ে শরীর শীতল করে নিতে চায়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে কদিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহের কারণেই এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের এই তীব্রতার কারণে এখন সবাই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে উঠবে বলে সবাই আশা করে আছেন। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃষ্টির অপেক্ষা আরও দুই-তিন দিন করতে হতে পারে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে চলমান তাপপ্রবাহ থাকতে পারে আরও দুই তিন দিন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর মনে করছে, জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ বা ২ দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে ২ থেকে ৩ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে।

বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।

গত ৩১ মে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) টেকনাফ উপকূলে পৌঁছে। ১ জুন এটি আরও এগিয়ে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে এবং ২ জুন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিস্তার লাভ করে। সারা দেশে বিস্তার লাভ করে ৩ জুন।

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৬ থেকে ১৯ জুন সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়। ১৮ জুন সিলেটে দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩০৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ু প্রবাহের সংযোগ ঘটায় ২ ও ৯ জুন সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রবল বজ্রপাত ও অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৯ জুন ঢাকায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ৭-৮ এবং ১২-১৪ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৩ জুন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়াসংক্রান্ত সাইট অ্যাকুওয়েদার অনুযায়ী সিলেটের গড় আর্দ্রতা ৫৭ শতাংশ। একই পরিমাণ আর্দ্রতা ঘরের ভেতরের। যাকে এ সাইট বলছে বিপদজনক অবস্থা। যে কারণে সিলেটের তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার পর থার্মোমিটারে ৩৭ দেখালেও প্রকৃতপক্ষে অনুভূত হচ্ছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো উষ্ণতা। এই সাইটের তথ্য অনুযায়ী, একই সময় ঢাকার তাপমাত্রা থার্মোমিটারে ৩৫ দেখালেও প্রকৃতপক্ষে অনুভূত হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উষ্ণতা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গরম বেড়েছে। প্রকৃতির এই রুদ্রমূর্তি শুক্রবার আজ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামিকাল শনিবার থেকে বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরনের সক্রিয় রয়েছে।

Next Post Previous Post