ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল


 বর্ষপরিক্রমায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে আত্মোৎসর্গ ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদুল আযহা। আরবী পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছর ১০ জিলহজ্জ বিশ^ মুসলিম পশু কুরবানির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেন।  বস্তুত, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, রবের প্রকৃত সন্তুষ্টি ও মানব কল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। এই আনন্দ ভোগের নয়; বরং ত্যাগের। পবিত্র ঈদুল আযহা আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত সুখ আর আনন্দের উৎস প্রাচুর্যে বা সম্পদে নয় বরং ত্যাগ ও কুরবানির  মধ্যেই রয়েছে অনাবিল সুখ, শান্তি ও প্রকৃত সমৃদ্ধি। তাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। 

মূলত, নিজের পশুপ্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপই পশু কুরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাকওয়ার পরীক্ষা গ্রহণ করেন। এই পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হন আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘কুরবানির পশুর রক্ত, গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি’ (সুরা হজ্জ, আয়াত-৩৭)। তাই কুরবানির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আর্ত-মানবতার মুক্তির জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

মূলত, পবিত্র ‘জিলহজ্ব’ মাস এক মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনার্থে নিজ পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.)কে কুরবানি করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর আদর্শ অনুসরণেই মুসলিম উম্মাহ দিবসটিকে পবিত্র ঈদুল আযহা হিসাবে পালন করে আসছে। তিনি মহিমান্বিত এই মাসে প্রিয় পুত্র ঈসমাঈল (আ.)কে কুরবানি করতে গিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে যে ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা শত-সহস্র বছর পরেও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

বস্তুত, জাগতিক লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পশু প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জনই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, বিভেদ-বিসংবাদ বন্ধ করে সমাজ-রাষ্ট্রে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা পবিত্র ঈদুল আযহার উদ্দেশ্য। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় নিদর্শন। তাই আল্লাহর দেয়া কল্যাণ আমাদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে কুরবানির ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল করে তুলতে হবে।

 দেশ ও জাতির এক মহাক্রান্তিকালে এবারের ঈদুল আযহা পালিত হতে যাচ্ছে। 

 দেশ ও জাতি যখন ঈদুল আযহার উদযাপনের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা  করছে, তখন সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হানা দিয়েছে। ফলে দুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয়হীন হওয়াসহ সবকিছুই হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় দুর্গত মানুষ খোলা আকাশের নিচে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমতাবস্থায় ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে আমাদের সকল সামর্থকে কাজে লাগিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় খাদ্য, ঈদ সামগ্রী ও কুরবানি গোস্ত পাঠিয়ে ঈদের আনন্দকে তাদের সাথে ভাগাভাগি করতে হবে। তাহলেই ঈদ সর্বজনীন ও আনন্দঘন হয়ে উঠবে অর্থবহ। তাই এবারের ঈদ যাতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক না হয়ে সর্বজনীন হয়ে ওঠে এবং আসন্ন ঈদুল আযহার শিক্ষা যাতে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।

Next Post Previous Post