অভৌতিক পঞ্চ ইন্দ্ৰিয়সমূহ

অভৌতিক বা আধ্যাত্মিক বা রিপু সম্পর্কিত ইন্দ্রিয় পাঁচ প্রকার

 অভৌতিক বা আধ্যাত্মিক বা রিপু সম্পর্কিত ইন্দ্রিয় পাঁচ প্রকার যথা - (১) কাম, (২) ক্রোধ, (৩) লোভ, (৪) মোহ, (৫) মদ মাত্মস।

(১) কাম : কাম একটি অন্যতম প্রধান ক্ষতিকর রিপু। ইহা উত্তেজনা এবং যৌন কর্মের সহিত জড়িত। মুণি-ঋষি, অলি-আউলিয়াবৃদ্ধ মানুষকে এই রিপুর তাড়না হইতে দূরে সরিয়া থাকিতে নির্দেশ দিয়াছেন এবং তাঁহাদের অনেকেই এই রিপুর তাড়না হইতে বাঁচিবার জন্য জঙ্গলে পর্যন্ত আশ্রয় নিয়াছেন। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি অঘটনের সাথে এই রিপুর তাড়না জড়িত। ইহার আক্রমণ হইতে দূরে না থাকিলে আধ্যাত্মিক ও পারলৌকিক চিন্তা করা, জ্ঞান অন্বেষণ করা কাহারও পক্ষে সম্ভবপর হয়। না। বরং জীবনীশক্তি দুর্বল হয়, সিফিলিস, গনোরিয়া, পেটের পীড়া, ধাতুরোগ, প্রস্রাবের পীড়া, যৌনপীড়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হইয়া মানুষ ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া পড়ে। সুতরাং এই রিপুর আক্রমণ হইতে আধ্যাত্মিক মতবাদ অনুসারে সকলেরই দূরে থাকা উচিত।

(২) ক্রোধ : ইহার অপর নাম রাগ। ইহাও একটি অন্যতম খারাপ রিপু। ইহার সহিত ঘৃণা বিদ্বেষ প্রভৃতি জড়িত। পৃথিবীর সকল ধ্বংসাত্মক, ক্ষতিকর কাজ বা অঘটন সাধারণতঃ এই রিপুর আক্রমণেই হইয়া থাকে। ক্রোধ হইতে দূরে না থাকিলে কেহই জ্ঞানী, গুণী, ধ্যানী হইতে পারে না। মহাজ্ঞানী মুনি-ঋষিবৃন্দ অলি-আউলিয়াবৃন্দ ক্রোধ রিপু উর্দ্ধে ছিলেন ও থাকেন এবং সকলকে তাঁহাদের অনুসরণ করিতে উপদেশ দিয়াছেন

(৩) লোভ : লোভ, লালসা, ভোগ, বিলাসিতা, জাগতিক ভালবাসা প্রভৃতি এই রিপুর সহিত জড়িত। এই লোভ রিপু মানুষকে পারলৌকিক ও আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণা ও চিন্তা হইতে দূরে রাখে। দর্শন বা ফিলোসফির মধ্যে লোভের স্থান নাই। ইহাকে জয় করিতে না পারিলে দার্শনিক হওয়া যায় না, পারলৌকিকত্বও অর্জন করা যায় না।

(৪) মোহ : ইহাও লোভের ন্যায় অন্যতম খারাপ রিপু। মানুষ সাধারণ জাগতিক চিন্তায় ও ভালবাসায় মোহাচ্ছন্ন হইয়া আল্লাহকে ভুলিয়া যায়, পারলৌকিক চিন্তা করে না। দর্শনে মোহের স্থান নাই। মোহাচ্ছন্ন মানুষ অন্ধের সমান। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করিয়াছেন, “খাতামাল্লাহু আলা কুলুবিহিম ওআলা সামইহিম ওআলা আবদুরিহিম গেছাওয়াতুন ওয়ালাহুম আজাবুন আজিম" অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ঐ সমস্ত ব্যক্তির অন্তরে, চক্ষুর উপর ও কর্ণের উপরে আবরণ দিয়াছেন, মোহর মারিয়াছেন এবং তাহাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করা হইয়াছে। মোহের মধ্যে থাকিয়া যাহারা আল্লাহকে ভুলিয়া গিয়াছে তাহাদের জন্য আল্লাহর অভিসম্পাত বা গজব। তাই মোহ হইতে সকলেরই দূরে থাকা উচিত।

(৫) মদ ও মাৎসর্য : যদিও এখানে রিপু দুইটি। উহাদিগকে একত্রে আলোচনা করা হইয়াছে। ইহার দ্বারা মানুষের নেশাকে বুঝানো হইয়াছে। নেশার জিনিষ পান করিয়া মানুষ অজ্ঞান হয়, অঘটন ঘটায়, খারাপ কাজ করে, দর্শন হইতে দূরে থাকে। ইহা মানুষের কু প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে, সুপ্রবৃত্তিকে দূরে রাখে। ইসলাম সব জাতীয় নেশাকে নিষেধ ঘোষণা করিয়াছে। বিশেষ করিয়া যে লোভ, মোহ, নেশা মানুষকে চিন্তা, ধ্যান, ফিলসফি, আল্লাহর এবাদত হইতে দূরে রাখে সেইরূপ সকল প্রকার নেশা ইসলামে পরিষ্কার নিষেধ বা হারাম। আল্লাহ তায়ালা তাহাদের জন্য ঘোষণা করিয়াছেন, “ইন্না আজাবি লা সাদীদ" নিশ্চয় আমার শাস্তি অতি ভয়ংকর, "অলাহুম আজ্জাবুন আজিম" তাহাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হইয়াছে। তাই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ও দর্শনের নির্দেশ অনুসারে আামদেরও মদ ও মাৎসর্য হইতে দূরে থাকা উচিত। নচেৎ সমগ্র সমাজ ব্যাধিগ্রস্ত হইতে বাধ্য।

Next Post Previous Post