হ্যানিম্যানকে সত্ত্বাবাদী দার্শনিক বলার কারণ
দর্শনে মহাত্মা হ্যানিম্যান এক বিশিষ্ট স্থান দখল করিয়া আছেন । হ্যানিম্যান জড়বাদী ছিলেন না। কিন্তু তাই বলিয়া তিনি জড়কে বাদ দেন নাই। মানবদেহও একটা জড় পদার্থ। হ্যানিম্যানের নিকট জড় জগৎ ও অন্তর জগৎ উভয়ই বাস্তব ও সত্য। আবার ভাববাদীদের ন্যায় ভাব পদার্থকে তিনি সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেন নাই । কেননা তিনি ইন্দ্রিয় বোধগম্য বিষয় ছাড়া অন্য কোন কিছুকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে রাজী ছিলেন না। অদৃশ্যের অন্তরালে অবস্থিত বস্তুর স্বরূপ ও প্রকৃতি জানার জন্য অনর্থক চেষ্টা না করিয়া তাঁহার মতে বস্তু যেভাবে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় সেভাবেই আমাদের গ্রহণ করা উচিত। হ্যানিম্যানের নিকট আত্মা, পদার্থ, শক্তি, গতি, দেহ, মন, স্বাস্থ্য এবং ব্যাধি প্রভৃতি সংকুচিত, বর্ধিত, পরিবর্তিত সর্বাবস্থায় সত্য এবং ৰাস্তব।
হ্যানিম্যান জীবনীশক্তিকে অদৃশ্য গতিশীল ও ঐশ্বরিক শক্তি বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন । তার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষ। আর মানুষ হইল দেহ ও মনের সমন্বয় । আর দেহ ও মনকে যে জীবনীশক্তি নিয়ন্ত্রিত করে সে একটা আধ্যাত্মিক শক্তি । রোগ নির্ণয় ব্যাপারে তিনি দেহ, মন, অনুভূতি, মেজাজ, স্বভাব, চরিত্র প্রভৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত তাহাকে আরোগ্য বলিয়া স্বীকার করিতে নারাজ ছিলেন।
এখানে তাঁহাকে অভিজ্ঞতাবাদী আকারে দেখা যায় । মন, প্রাণ, জীবনীশক্তি সবকিছুরই সত্ত্বা তিনি বিশ্বাস করেন। সর্বদিক বিবেচনা করিলে দেখা যায়। হ্যানিম্যান ছিলেন প্রাণবাদী, আধ্যাত্মিকবাদী, বিবর্তনবাদী ও অভিজ্ঞতাবাদী একজন চিকিৎসা দার্শনিক। দর্শনে প্রাণবাদের পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত নাম সত্মাবাদ। এই হিসাবে হ্যানিম্যানকে সত্বাবাদী বলা হয়।