হ্যানিম্যানের চিকিৎসা দর্শনের বৈশিষ্ট্য
হ্যানিম্যান এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন যখন সম ইউরোপবাসীর মনে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক মতবাদ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। বিশেষ করিয়া ভাববাদ ও জড়বাদ। হ্যানিম্যানের বিরাট প্রতিভা এবং দর্শন ও শিক্ষার অদ্ভূত পাণ্ডিত্যের প্রভাবে তৎকালীন সমস্ত মতবাদ সম্বন্ধে তিনি যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন। হ্যানিম্যান ছিলেন একজন প্রকৃত বৈজ্ঞানিক, ফলে কোন পদ্ধতি বা ধারণাকে একতরফাভাবে তিনি গ্রহণ করিতে পারেন নাই, তাহা ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মতবাদের শ্রেণী বিশৃংখলার দার্শনিক অপরাধ হইতেও মুক্ত। ছিলেন। তিনি জীবন, মন ও পদার্থের শুধু বাস্তবতা গ্রহণ করিয়াছিলেন মাত্র।
হ্যানিম্যানের জন্ম এমন সময়ে হইয়াছিল যখন চিকিৎসা দর্শন বলিতে কিছু ছিল না। ব্যাধিতে মানুষ কষ্ট পাইয়া মারা যাইত। তাই ১৭৭৯ খৃষ্টাব্দ হইতে তিনি চিকিৎসা দর্শনে মনোনিবেশ করেন। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারের ন্যায় হ্যানিম্যানও তাঁহার চিন্তা শক্তি ও দর্শন দ্বারা "Similia Similibus Curentur" পদ্ধতি আবিষ্কার করেন । নীরবে, নিরুপদ্রবে, স্থায়ীভাবে, সর্বাপেক্ষা সুখবোধ বিধান মতে এবং রোগের পুনরাক্রমণ না হয়—এই নীতিই ছিল মহাত্মা হ্যানিম্যানের চিকিৎসাদর্শন। হ্যানিম্যানের চিকিৎসা দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ।
i) মানবদেহের অভ্যন্তরে অজড় অমূর্ত আত্মিক জীবনীশক্তি বিরাজমান । জীবনীশক্তির বিশৃংখল অবস্থাই রোগ।
ii) রোগ অজড়, অমূর্ত ও অশুভ প্রাকৃতিক শক্তি
iii) হোমিওপ্যাথি রোগের চিকিৎসা করে না, রোগীর চিকিৎসা করে।
iv) যে ঔষধ সুস্থদেহে রোগ সৃষ্টি করিতে সক্ষম, শুধুমাত্র সেই ঔষধই প্রাকৃতিক ব্যাধ্বিস্ত ব্যক্তির রোগ আরোগ্য করিতে সক্ষম।
v) রোগের আক্রমণে জীবনীশক্তি অসুস্থ হয়, কাজেই চিকিৎসা আঙ্গিকভাবে নয় সামগ্রিকভাবেই করিতে হইবে।
vi) রোগীর ও ঔষধের সদৃশ লক্ষণানুসারেই প্রকৃত আরোগ্য সাধিত হয়।
vii) শক্তিকৃত সূক্ষ্ম শক্তির ঔষধই সূক্ষ্ম শক্তিটির পীড়া দূরীকরণের উপযুক্ত অস্ত্র।
viii) সদৃশ লক্ষণানুসারে একবার একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। একবারে একাধিক ঔষধ প্রয়োগ করা যাইবে না। সুস্থদেহে পরীক্ষিত ঔষধই রোগী দেহে প্রয়োগ করিতে হইবে।
এই দর্শন পৃথিবীর অন্য কোন বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসকের মধ্যে দেখা যায় না। তিনি ছিলেন নব চিকিৎসা দর্শনের জন্মদাতা। সভ্যতা যতদিন থাকিবে, চিকিৎসা বিজ্ঞান যতদিন থাকিবে ততদিন হ্যানিম্যান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা দার্শনিকের অন্যতম হিসাবে থাকিবেন।